শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম

অনিয়মিত লিগ ভেন্যু সংকটে কুমিল্লার ক্রীড়াঙ্গন

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

অনিয়মিত লিগ ভেন্যু সংকটে কুমিল্লার ক্রীড়াঙ্গন

কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম —বাংলাদেশ প্রতিদিন

এক সময় কুমিল্লার ক্রীড়াঙ্গনের সোনালি অতীত ছিল। কুমিল্লার ফুটবলার ছাড়া ঢাকার লিগ চালানো কঠিন হয়ে পড়তো। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানে অধিকাংশই ছিলেন কুমিল্লার ফুটবলার। সেখানে এখন ঢাকার মাঠে কুমিল্লার খেলোয়াড় নেই বললেই চলে। এজন্য কুমিল্লার ক্রীড়াবিদরা অপূর্ণাঙ্গ লিগ আর প্র্যাকটিস ভেন্যুর সংকটকে দায়ী করেছেন। ফুটবলে প্রণব কুমার দে, রঞ্জিত কুমার সাহা, গোলাম সারোয়ার টিপু, ভানু, নিজামউদ্দিন, বিপ্লব কুমার ভট্টাচার্য, বাদল রায়, এনামুল হক শরীফ, ক্রিকেটে এনামুল হক মনি, ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স, হকিতে আবদুস সাদেক এবং ভলিবলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তাহের, রাজ্জাকের পর কুমিল্লার আর কেউ জাতীয় পর্যায়ে তেমন অবদান রাখতে পারেননি।

১৯৩৩ সালে ত্রিপুরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার যাত্রা শুরু। পরে তা কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থায় রূপান্তরিত হয়। প্রথমে কুমিল্লা বিসিক এলাকায়ও খেলা হতো। ১৯৭৯ সালের দিকে স্টেডিয়ামের আকার বড় হয়। পরবর্তীতে এটির নাম হয় কুমিল্লা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম। কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে ঘিরে ২৫টি ক্লাব রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ৮-১০টি ক্লাব ছাড়া অন্যগুলো খেলায় মনোযোগী নয়। অস্তিত্ব রক্ষায় তারা অল্পকিছু খেলায় অংশ নেয়। যা কুমিল্লার ক্রীড়াঙ্গনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত বলে ক্রীড়াবিদরা মনে করেন। ৮০’র দশকে জাতীয় দলে এবং ঢাকা মোহামেডানে খেলেছেন দিলীপ দাস। কুমিল্লার ছেলে দিলীপ দাস খেলেছেন ৯০ দশক পর্যন্ত। ৮৮ সালে কুমিল্লা জেলা দল দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। তিনি সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি বলেন, ৮০ দশকে কুমিল্লার ফুটবলার ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামের লিগই জমতো না। ঢাকার লিগের তখন ১৫০ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ৫০ জন থাকতো কুমিল্লার। আমি, প্রণব কুমার দে, রঞ্জিত কুমার সাহা, বাদল রায়রা জাতীয় দলে খেলেছি। কুমিল্লার সেই দিন আর নেই। আগে সি ডিভিশন, বি ডিভিশন আর এ ডিভিশন খেলা হতো। এখন সে রকম হেড টু হেড লিগ খেলা হয় না। এখন হচ্ছে শর্টকার্ট লিগ। তাই নতুন মেধাবী খেলোয়াড় উঠে আসছে না। জেলার যেই ক্লাবগুলো রয়েছে তারা যদি আরও আন্তরিক না হয় তাহলে খেলার মান বৃদ্ধি পাবে না। খেলোয়াড়দের নিয়ে বেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্রিকেট বোর্ডের জেলা কোচ সারোয়ার জাহান বলেন,মাঠের জন্য গত তিন বছর ভালো খেলা হয়নি। এদিকে আমাদের প্র্যাকটিসের স্থানের অভাব রয়েছে। আমরা বর্তমানে ঈদগাহে প্র্যাকটিস করাচ্ছি। হকির সাবেক খেলোয়াড় ও জেলা কোচ তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন কুমিল্লায় হকির টুর্নামেন্ট হচ্ছে না। হকির মাঠও নেই। হকির ইনস্ট্রুমেন্টের দাম বেশি। অনেকে এতো পুঁজি লাগিয়ে খেলতে চায় না। তাই খেলোয়াড়ের সংকট রয়েছে।

ভলিবলের জেলা কোচ আবদুল কুদ্দুস বলেন, কুমিল্লা ভলিবলের ভালো একটি সম্ভাবনা রয়েছে। ভলিবল খেলে জেলার শিমপুর নামের একটি গ্রামের অর্ধ শতাধিক ছেলে বিভিন্ন বিভাগে চাকরি পেয়েছে। আমাদের প্র্যাকটিস মাঠের অভাব রয়েছে। আরও বেশি প্রশিক্ষণ আর টুর্নামেন্টের ব্যবস্থা করলে নতুন মেধাবী খেলেয়াড় বেরিয়ে আসবে। ক্রীড়া সংগঠক বদরুল হুদা জেনু বলেন, খেলার উন্নয়নে ক্লাবগুলো আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। স্টেডিয়াম এলাকায় ক্লাবগুলোর একটি বসার ঠিকানা করে দেওয়া যেতে পারে।

কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান ফারুক রোমেন বলেন, কুমিল্লায় স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। কাজ শেষ হলে আমরা এখানে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট করতে পারবো। এদিকে হেড টু হেড লিগের বিষয়ে বলেন, ক্লাবগুলোর আর্থিক সংকটের কারণে বেশি খেলা চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। ক্লাবগুলোকে সহযোগিতা করে এগিয়ে নিতেও পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, খেলার অগ্রযাত্রায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি নিজেদের প্র্যাকটিস মাঠের সংকটের বিষয়ে বলেন, স্টেডিয়ামে সব সময় প্র্যাকটিস করার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে হাউজিং এলাকার একটি মাঠ খালি রয়েছে। সেটি ব্যবহার করা গেলে সুবিধা হতো। এছাড়া কাপ্তান বাজার এলাকায় গোমতী নদীর পাড়ে কিছু জমি ভরাট করে প্র্যাকটিস পল্লী করা যেতে পারে। খেলার উন্নয়নে তিনি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর