সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নতুন মৌসুমে নতুন প্রত্যয় শেখ রাসেলের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নতুন মৌসুমে নতুন প্রত্যয় শেখ রাসেলের

বাফুফে ভবনে শেখ রাসেলের পরিচালক ও ফুটবলারদের সঙ্গে ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ও অন্য কর্মকর্তারা —রোহেত রাজীব

মান ও জনপ্রিয়তা ম্লান হয়ে যাওয়ায় ফুটবলের দল বদল হয়ে পড়েছে জৌলসহীন। অথচ এক সময় খেলোয়াড়দের ঘর বদল কেন্দ্র করে স্টেডিয়াম আঙিনায় সকাল থেকেই উৎসাহ উন্মাদনা শুরু হয়ে যেত। বড় দুই দল মোহামেডান-আবাহনীকে নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়ত। দল বদলের সেই জৌলস বা উত্তেজনা হারাতে বসেছিল। দল বদল যে হয় এখন অনেকে খোঁজ খবরই রাখে না। ঢাকা আবাহনী, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব প্রতি বছর বিগ বাজেটে শক্তিশালী দল গড়ছে। কিন্তু ফুটবলে জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ায় তাদের দল বদল ঘিরে সেই উত্তাপটা চোখে পড়ছিল না।

সেই হারানো দিন যেন ফিরে এসেছিল শনিবার। বাফুফে ভবনে জমকালো আয়োজনে ফুটবল দল বদলে সাড়া ফেলে দেয় নবাগত বসুন্ধরা কিংস। যারা ফুটবল উন্নয়নে নানা কর্মসূচি দিয়ে ইতিমধ্যে দেশ পরিচিতি হয়ে উঠেছে।

গতকাল শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রও আনুষ্ঠানিকভাবে দল বদলের কাজটা সেরে ফেলল বর্ণাঢ্যভাবে। মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে শেখ রাসেল খেলোয়াড়দের বহনকারী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আকর্ষণীয় বাসটি যেভাবে বাফুফে ভবনে প্রবেশ করে তাতে হারানো দিনের স্মৃতি চোখে ভেসে উঠছিল। আগের দিন যা বসুন্ধরা কিংসের বেলায় হয়েছে। এবারের দল বদল শুরু হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু মতিঝিল বাফুফে ভবনে কোনো সাড়া শব্দ ছিল না। শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলো আগমনে ব্যস্ত মতিঝিল যেন ফুটবল পাড়ায় পরিণত হয়েছে। আজ দেশের অন্যতম শক্তিশালী দল শেখ জামাল ধানমন্ডিও দল বদলের কাজ সম্পন্ন করবে।

ফুটবলে জনপ্রিয়তা বা মান ম্লান হলেও এই খেলা জেগে আছে মূলত ক্লাবগুলোর কারণে। বিশেষ করে ঢাকা আবাহনী, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, চট্টগ্রাম আবাহনীর কথা না বললেই নয়। নতুন হিসেবে যোগ হয়েছে বসুন্ধরা কিংস। এর আগে পেশাদার ও  প্রিমিয়ার বা প্রথম বিভাগ লিগে অনেক ক্লাবেরই অভিষেক হয়েছে। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসের আগমনটা সবার চেয়ে আলাদা। অর্থ তো আছেই ফুটবল জাগিয়ে তুলতে তারা একের পর এক নতুন কর্মসূচি দিয়ে সবার বাহবা পাচ্ছে।

বিশেষ করে দেশের শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের কথা আলাদাভাবে বলতে হয়। এমন কোনো খেলা নেই যে তারা পৃষ্ঠপোষকতা করেনি। ক্রীড়াঙ্গনে অবকাঠামো নির্মাণেও বড় ভূমিকা রাখছে। ফুটবল বাঙালির প্রাণের খেলা। ফুটবলে কেউ লাথি মারেনি এমন লোক খুঁজেই পাওয়া যাবে না। বসুন্ধরা কিংস চায় এই খেলার গৌরব ও জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে। ফুটবলে বসুন্ধরার নিজস্ব ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। দেশের শীর্ষ দুই ক্লাব শেখ রাসেল ও শেখ জামাল পরিচালিত হচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায়। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান শেখ রাসেলের চেয়ারম্যান। ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবাহন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি।

ফুটবলের গৌরব ফিরিয়ে আনতে বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। ক্রিকেটেও এই গ্রুপের অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। ঘরোয়া আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) রংপুর রাইডার্স বসুন্ধরা গ্রুপের নিজস্ব ক্লাব। সাফওয়ান সোবহান এ ক্লাবের কর্ণধার। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই বিপিএলে নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রংপুর রাইডার্স। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও শক্তিশালী দল গড়ে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। অন্যদিকে ইনডোর গেমস টেবিল টেনিসে শেখ রাসেলের অবদান ভোলবার নয়। ক্রীড়াঙ্গন ও বসুন্ধরা গ্রুপ যেন একই সূত্রে গাথা।

ক্রীড়াঙ্গনে শেখ রাসেলের আগমন নতুন নয়। কিন্তু সায়েম সোবহান দায়িত্ব নেওয়ার পরই এই ক্লাব পরিচিত হয়ে উঠেছে নতুন রূপে। ফুটবলে বাংলাদেশ পেশাদার লিগ চালু হলেও ক্লাবগুলোর পেশাদারিত্ব নিয়ে অভিযোগ থেকেই যাচ্ছিল। শেখ রাসেলই পেশাদারিত্বের সব কোটা পূরণ করে লিগে নতুনত্ব এনে দেয়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অত্যাধুনিক ক্যাম্প, মনোরম পরিবেশে অনুশীলন, ফুটবলে নতুনত্ব এনে দেয় শেখ রাসেল। দলে খেলা দেশি ও বিদেশি খেলোয়াড়রা এসব সুবিধা পেয়ে মুগ্ধ।

সবই আছে। তবু দুই মৌসুম ধরে কোনো ট্রফি নেই শেখ রাসেলের ঘরে। এ জন্য অবশ্য বিতর্কিত রেফারিংয়ের দায়ও এড়ানো যাবে না। যাক সব ভুলে শেখ রাসেল ক্লাব নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। খেলোয়াড়, কর্মকর্তা, কোচ গতকাল দলবদল করতে যারা এসেছিলেন তাদের মুখে একটাই কথা এবার আমরা বিজয় পতাকা উড়াতে চাই। সব ট্রফিই জিততে চাই। নতুন মৌসুমে নতুন প্রত্যায়ের কথা জানালেন সবাই। দল বদলে ঠিকই সাড়া ফেলেছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। এবার মাঠের লড়াইয়ে চমক দেখাতে পারবেন কী নির্ভারযোগ্য ফুটবলাররা? এটা ঠিক এবার দল ছেড়েছেন বেশ কজন ফুটবলার। তাতে কী নতুনভাবে যাদের পাওয়া গেছে তাদের আগমণে শেখ রাসেলের শক্তি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। শিরোপার জন্য যা যা করা দরকার তা পূরণ করে নতুন মৌসুমের জন্য গতকাল ফুটবলারদের নাম ফুটবল ফেডারেশনে জমা দিয়েছে।

দেশ পরিচিত প্রশিক্ষক সাইফুল বারী টিটু এবার শেখ রাসেলের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। ঘর গুছিয়ে নেওয়ার পর তিনি শিষ্যদের নিয়ে অনেক আগেই অনুশীলনে নেমে পড়েছেন। টিটুকে কাছে পেয়ে উজ্জীবিত ফুটবলাররা। দেশসেরা গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা যোগ দিয়েছেন শেখ রাসেলে। থাকছেন আরেক অভিজ্ঞ গোলরক্ষক মামুন খান। নতুন মৌসুমে শেখ রাসেলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে মাঠে নামবেন ইয়াসিন, আবিদ, বিশ্বনাথ, সোহেল রানা, ইয়ামিন মুন্না, আবদুল্লাহ, মেজবা, সাইফ, সজিব, জুলফিকার, রুম্মন ও বিপলুকে।

বিদেশি কালেকশনও চোখে পড়ার মতো। গেল মৌসুমে শেখ জামালের সফল স্ট্রাইকার রাফায়েল, চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডার অ্যালিসন উদোকা খেলবেন শেখ রাসেলে।

এ ছাড়া উড়িয়ে আনা হয়েছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া লিগে মাঠ কাঁপানো ব্রাজিলের আলেক্স রাফায়েলকে। সব মিলিয়ে লোকাল ও ফরেন কালেকশনে ব্যালেন্স দল গড়েছে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। দলবদলের পর এখন মাঠে নামার পালা। আসছে মৌসুমে শেখ রাসেল কী করে সেটাই দেখার অপেক্ষা।

সর্বশেষ খবর