মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তারুণ্যের ঝলক শেখ জামালে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তারুণ্যের ঝলক শেখ জামালে

মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে খেলার আগে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কর্মকর্তা, কোচ ও ফুটবলাররা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাঠে চলছে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। আরেক পাশে কিশোরদের ক্রিকেট প্রশিক্ষণ। কেউ বা আবার বিকালে জগিং সেরে নিচ্ছেন। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের মনোরম দৃশ্য। যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। ঢাকা শহর যেখানে মাঠ শূন্যতায় ভুগছে সেখানে শেখ জামালের এমন পরিবেশ সবাইকে মুগ্ধ করে ছাড়বে। ফুটবলের নতুন মৌসুম দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই পেশাদার লিগের দলগুলো প্রস্তুতিটা সেরে নিচ্ছে। গতকাল ছিল দল বদলের শেষ দিন। দেশের জনপ্রিয় ক্লাব শেখ জামাল খেলোয়াড়দের নিয়ে বাফুফে ভবনে না গেলেও শেষ দিনে খেলোয়াড় তালিকা ঠিকই পৌঁছে দিয়েছে।

গতকাল ধানমন্ডি ৮ নম্বর সড়কে শেখ জামালের নিজস্ব ক্লাব মাঠে মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এক প্রীতি ম্যাচে অংশ নিয়েছে। খেলোয়াড়দের রেজিস্ট্রেশন করার আগে কোচ জোসেফ আফুসি শিষ্যদের পারফরম্যান্স যাচাই করে নিয়েছেন। ১-১ গোলে ড্র হয় ম্যাচ। ম্যাচ দেখতে মাঠে ছিলেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান দেশ কাঁপানো সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, ফুটবল দলের ম্যানেজার আনোয়ারুল করিম হেলাল ও অন্য কর্মকর্তারা। মুক্তিযোদ্ধারও বেশ কজন কর্মকর্তাকে দেখা গেছে।

শুধু এ দুই দল নয়, মাঠে নামার আগে অন্য ক্লাবগুলোও প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যস্ত রয়েছে। শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলোর কাছে এমন ম্যাচের গুরুত্ব অনেক। ফুটবলে নতুন মৌসুম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে তা জোর গলায় বলা যায়। কেননা এবার শিরোপা জয়ের সামর্থ্য রাখে সেই মানের দলের সংখ্যা কম নয়। অভিষেক আসরেই বাজিমাত করতে সেরা দল গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। শুরুতে শিরোপা জিততে তারা এতটাই মরিয়া যে সদ্য বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলারও উড়িয়ে এনেছে। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, ঢাকা আবাহনী, শেখ জামাল ও সাইফ স্পোর্টিং শক্তিশালী দল গড়েছে। শিরোপা লড়াই এবার এই পাঁচ দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

ঘরোয়া ফুটবলে বড় আসরে ধানমন্ডি ক্লাবের অভিষেক একেবারে কম সময়ে নয়। ১৯৭৯ সালেই তারা দেশের ফুটবলের সেরা আসর প্রথম বিভাগ লিগ শুরু করে। তবে বড় কোনো সাফল্য নেই। সব পাল্টে যায় ২০১০ সালে। বঙ্গবন্ধুর  মেজো ছেলে শহীদ শেখ জামালের নামকরণে পেশাদার লিগে নামার পর চেহারা পাল্টে যায়। সর্বোচ্চ ছয়বার চ্যাম্পিয়নের কারণে ঢাকা আবাহনীকে পেশাদার লিগে সফল দল বলা যেতেই পারে। এরপরই আসবে শেখ জামালের নাম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিনবার লিগ জেতার রেকর্ড তাদেরই। চারবার ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন। এমন সাফল্যে শেখ জামাল দেশের অন্যতম সেরা দলে পরিণত হয়েছে।

এর পেছনে মাঠে ফুটবলারদের ক্যারিশমা তো আছেই। সংগঠকদের অবদানও কম নয়। বিশেষ করে অভিজ্ঞ সংগঠক মনজুর কাদেরের কথা না বললেই নয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এই দলকে একাধিক ট্রফি জিতিয়েছেন। হঠাৎ করে শেখ জামাল কেন জানি ঝিমিয়ে পড়েছিল। বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পরই দলটি ফিরেছে স্বরূপে। গতবার পেশাদার লিগে রানার্সআপ হয়। কপাল মন্দ তাদের। পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ থেকেও শেষ পর্যন্ত তারা শিরোপার হাসি হাসতে পারেনি। এর পেছনে বিতর্কিত রেফারিং ও একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার কথা কারো অজানা নয়। সংবাদ সম্মেলনে বিতর্কিত রেফারিংয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে শেখ জামাল আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদও জানিয়েছিল। লাভ হয়নি। রানার্সআপ হয়েও সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

এরপরও থেমে থাকেনি শেখ জামালের অগ্রযাত্রা। ক্লাব সভাপতি সাফওয়ান সোবহানের যোগ্য নেতৃত্ব ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মনজুর কাদেরের ক্যারিশমা, চুন্নু, আসলাম, গাফফার, হেলালদের দক্ষতায় ফুটবলে একটা অবস্থান তৈরি করেছে শেখ জামাল। সাফওয়ান সোবহানের নেতৃত্বে ক্রিকেটেও শেখ জামাল ঘরোয়া আসরে শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে।

বসুন্ধরা কিংস, ঢাকা আবাহনী, শেখ রাসেল বা সাইফ স্পোর্টিংয়ে এবার তারকার কমতি নেই। শেখ জামাল এবার সেপথে হাঁটেনি। তারুণ্যনির্ভর দল গড়েছে তারা। প্রশ্ন উঠেছে এমন দল নিয়ে কি শিরোপা লড়াইয়ে টিকে থাকা যাবে? আসলে দেশের ফুটবলই এখন তারুণ্যনির্ভর হয়ে পড়েছে। চুন্নু সেই কথাটাই বললেন। ‘দেখেন গতবারও আমরা তারুণ্যনির্ভর দল গড়েছিলাম।’ কাগজে-কলমে অনেকেই শক্তিশালী ছিল। চ্যাম্পিয়ন না হয় রানার্সআপ হয়েছি। সত্যি বলতে কী আমরা বরাবরই চ্যাম্পিয়নের টার্গেট নিয়েই দল গড়ি। এবারও তার বাইরে যায়নি। তরুণ আর যে মানের বিদেশি পাওয়া গেছে তাতে সাফল্যের ব্যাপারে আমি পুরোপুরি আশাবাদী। আনোয়ারুল করিম হেলাল বলেন, এক সময় তারকা ছাড়া সাফল্য পাওয়া সম্ভব ছিল না। সেই ফুটবল পাল্টে গেছে।

তরুণদের দিয়ে ভরসা করা যেতে পারে। যে মানের দল গড়া হয়েছে তাতে আমি আশাবাদী। আসল প্রমাণ মিলবে মাঠেই। কোচ জোসেফ আফুসি বলেন, ‘বড় দলের মূল লক্ষ্য থাকে লিগ শিরোপা। শেখ জামালের টার্গেটও তাই। তবে আমি এ নিয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলতে পারব না। ফেডারেশন কাপের পারফরম্যান্স দেখেই লিগ সম্পর্কে চূড়ান্ত মন্তব্য করা যাবে। তবে অনুশীলনে যাদের দেখেছি তাদের পারফরম্যান্সে আমি সন্তুষ্ট।

সর্বশেষ খবর