বৃহস্পতিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দায়িত্ব এখন তরুণদের

মেজবাহ্-উল-হক

দায়িত্ব এখন তরুণদের

ছবি: রোহেত রাজীব

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভরসা ‘পঞ্চপাণ্ডব’! পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার— মাশরাফি মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহদুল্লাহ রিয়াদের কাঁধে চড়েই আসছে একের পর এক সাফল্য!

তবে সিনিয়র ক্রিকেটাররা যদি বাংলাদেশের সাফল্যের প্রদ্বীপ হন, দলের তরুণ ক্রিকেটাররা হচ্ছেন প্রদ্বীপের নিচের অন্ধকার! তারা সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না! তবে আশার কথা হচ্ছে—ধীরে ধীরে এই ‘অন্ধকার’ কাটতে শুরু করেছে। পঞ্চপাণ্ডব ছাড়াও দলে পারফর্মার তৈরি হচ্ছে।

এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন কুমার দাসের ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিং, মুস্তাফিজুর রহমানের ফর্মে ফেরা, মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সিনিয়রদের সঙ্গে তরুণরা জ্বলে উঠলেই তো ক্রিকেট বিশ্ব দেখবে এক ‘অনন্য বাংলাদেশ’কে!

দুই দিন পরেই ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে। এই সিরিজে বাংলাদেশ পাচ্ছে না পঞ্চপাণ্ডবকে। মাশরাফি, মুশফিক, মাহদুল্লাহ থাকলেও ইনজুরির কারণে এই সিরিজে খেলতে পারছেন না সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। দলের সেরা দুই তারকার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব নিতে হবে তরুণদেরই!

দলে সাকিব একাই দুই ক্রিকেটারের ভূমিকা পালন করতেন। তিনি যেমন সেরা ব্যাটসম্যান, তেমনি সেরা বোলারও। সে কারণে বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার না থাকলে একাদশ সাজাতেই বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। একজন বোলার কিংবা ব্যাটসম্যান বেশি খেলাতে হয়।

বড় স্কোর করতে হলে ওপেনারদের ভালো করার বিকল্প নেই। এই কাজটি এক দশক ধরে সুচারুভাবে করে আসছেন তামিম। এশিয়া কাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সিরিজে জিতেছে ড্যাসিং ওপেনারের ব্যাটে ভর করেই। তামিম যে দলের জন্য কতটা অপরিহার্য তা বোঝা গেছে এশিয়া কাপেই। ফাইনাল ম্যাচ ছাড়া ওই টুর্নামেন্টে রানই পাননি বাংলাদেশের ওপেনাররা।

তবে সাকিব ও তামিম দলে না থাকলেও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। দুই সেরা তারকা ছাড়াও যে লড়াই করার সামর্থ্য আছে এশিয়া কাপের ফাইনালেই দেখিয়ে দিয়েছেন টাইগাররা। ওই ম্যাচে ভারত জিতলেও শেষ ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদেরকে। এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচটাই বাংলাদেশকে অনুপ্রাণিত করার জন্য যথেষ্ট।

তরুণদের উদ্দেশ্য করে কিছুদিন আগে সাকিব বলেছিলেন, ‘তরুণদেরও সামর্থ্য আছে ভালো খেলার। সিনিয়ররা দলে আছেন বলে তারা সেভাবে সুযোগ পান না। তবে সুযোগ পেলে ঠিকই ভালো করবে।’ তরুণদের সম্পর্কে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারেরই তো ভালো জানার কথা! লিটন, মিরাজ, শান্তদের খুব কাছে থেকে দেখেন তিনি।

সাকিব-তামিম না থাকার অভাবটা বেশি অনুভূত হতে পারে ব্যাটিংয়ে। তামিম ওপেনিংয়ে এবং সাকিব ছিলেন মিডল অর্ডারে ভরসা। এই দুই জায়গায় এখন ভরসা করতে হবে তরুণদের ওপর। যদিও মিডল অর্ডারে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ রয়েছে— টপ অর্ডারে দায়িত্ব নিতে হবে তরুণদেরই।

ওপেনিং জুটিতে লিটনের সঙ্গে দেখা যেতে পারে শান্তকে। কিংবা অন্য কেউও সঙ্গ দিতে পারেন লিটনকে। যেমন এশিয়া কাপের ফাইনালে মিরাজকে পাঠানো হয়েছিল বাইশগজে। ম্যাচের আগের রাতে মিরাজকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলেও সেটি যে দারুণ কাজ দিয়েছিল তার প্রমাণ তো —১২০ রানের সেই উদ্বোধনী!

 

ওই ম্যাচে লিটনের ১২১ রানের জাদুকরি ইনিংসটা ভোলার মতো নয়। পুরো টুর্নামেন্টে দাপট দেখানো ভারতীয় বোলারদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলেন লিটন। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছিলেন মিরাজ। তরুণ ক্রিকেটার যে আগে কখনো ওপেন করেননি সেদিন বাইশগজে তাকে দেখে তা মনেই হয়নি। লিটন যখন একপাশে মারকাটারি ব্যাটিং করছিলেন তখন সিঙ্গেল নিয়ে তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন মিরাজ। যদিও নিজের ইনিংসটা বড় করতে পারেননি তারপরও মিরাজ প্রশংসা পেতে পারেন তার সাহসিকতার জন্য। বল হাতেও ভীষণ সাহসী তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দেখা গেছে, ইনিংসের শুরুতে ক্রিস গেইলের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধেও তিনি বোলিং করেছেন।

মুস্তাফিজের ফর্মে ফেরাটাও বাংলাদেশের জন্য প্লাস পয়েন্ট। এশিয়া কাপে দারুণ বোলিং করেছেন তিনি। সিনিয়রদের দেখাদেখি তরুণরাও এখন ভালো করতে শুরু করেছেন। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজটি তাদের জন্য নতুন আরেকটি সুযোগ। আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার উপযুক্ত সময়।

 এটা তো ঠিক যে দলে মাশরাফির মতো অনুপ্রেরণাদায়ী অধিনায়ক আছেন, মুশফিকের ক্ষুরধার মস্তিষ্কের ক্রিকেটার আছেন, আছেন মাহমুদুল্লাহর মতো ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটসম্যান, সাকিব-তামিমের মতো বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের সঙ্গে যে তরুণরা ড্রেসিং রুম শেয়ার করেন তাদের ভালো না করে কি আর উপায় আছে?

হয়তো জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দেখা যেতে পারে নতুন এক বাংলাদেশ দলকে। যে দলের সাফল্যে নেতৃত্ব দেবে তরুণরা! দায়িত্ব যে এখন তাদেরই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর