বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

দুরন্ত জয়ে শেষ আটে শেখ রাসেল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দুরন্ত জয়ে শেষ আটে শেখ রাসেল

রাফায়েল ওডোয়া ও অ্যালেক্স রাফায়েল দুই বিদেশি ফুটবলার শেখ রাসেলের জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রাখেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জিতলেই কোয়ার্টার ফাইনাল। ড্র কিংবা হারলেও অবশ্য টিকে থাকবে আশা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিপক্ষে ফুটবল লড়াইয়ে নামার আগে সমীকরণটি এমনই ছিল ২০১২ সালের চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেলের। ফেডারেশন কাপের সাবেক চ্যাম্পিয়নরা জয়ের পথ ছেড়ে অন্য পথে হাঁটেনি। সেরা আটে খেলার স্বপ্ন নিয়ে দুই বিদেশি রাফায়েল ওডোয়া অনওয়ার্বে ও অ্যালেক্স রাফায়েল দ্য কস্টার গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শেখ রাসেল। অন্যদিকে ০-২ হেরে আসর থেকে বিদায় নিয়েছে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন মুক্তিযোদ্ধা। প্রথম ম্যাচে ফেডারেশন কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর কাছে হারলেও সেরা আটে খেলার সম্ভাবনা ছিল মুক্তিযোদ্ধারও। এজন্য গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম ম্যাচে হারাতেই হতো শেখ রাসেলকে। ড্র করলেও সম্ভাবনা থাকতো দলটির এবং অপেক্ষায় থাকতে হতো আবাহনী-শেখ রাসেল ম্যাচের ফলাফলের দিকে।       

ঘরোয়া ফুটবলের পরিচিত মুখ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। বরাবরই শিরোপার জন্য দল গড়ে। কিন্তু সাফল্য তেমন নেই বললেই চলে! তারপরও দেশের ফুটবলের পরাশক্তি। ২০১২ সালে ট্রেবল জেতা দলটি এবার দল গড়েছে শিরোপা জিততে। ভিড়িয়েছে গত মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা রাফায়েল ওডোয়া অনওয়ার্বেকে। শুধু নাইজেরিয়ান নন, শিরোপা বন্ধ্যত্ব ঘুচাতে দলে নিয়েছে উজবেকিস্তানের আজিজভ আলিসার, ব্রাজিলের অ্যালেক্স রাফায়েল দ্য কস্টা ও নাইজেরিয়ার নুকাকু ওডোকা অ্যালিসনকে। চার বিদেশির সঙ্গে রয়েছে দেশের বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলারও। দলটির কোচ দেশের স্বনামধন্য সাইফুল বারী টিটু। প্রতিপক্ষ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ। এক সময়কার ফুটবল পরাশক্তি দলটি পেশাদার লিগ শুরুর পর এখন ছায়া হয়ে খেলছে। ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনী ও মোহাডোনের পর অন্যতম সফল দল মুক্তিযোদ্ধা। শেখ রাসেল একবার জিতেছে ফেডারেশন কাপ। বিপরীতে মুক্তিযোদ্ধা জিতেছে তিনবার ১৯৯৪, ২০০১ ও ২০০৩ সালে। শুধু তাই নয়, ফাইনাল খেলেছে আরও পাঁচবার। রানার্স আপ হয়েছে ১৯৯৯, ২০০২, ২০০৫, ২০১২ ও ২০১৩ সালে। হেমন্তের শেষ। প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা। গা হিম করা না হলেও প্রশান্তিতে ভরে যায় মৃদু বাতাসে। বিকালের মন ভরিয়ে তোলা আবহাওয়ায় সেরা আটের টার্গেটে মুখোমুখি হয় শেখ রাসেল ও মক্তিযোদ্ধা। জিততে মরিয়া দুই দলই একাদশ সাজায় চারজন করে বিদেশি দিয়ে। ঘরোয়া ফুটবলের দুই পরিচিত দলের লড়াইয়ের প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য। উল্লেখ করার মতো আক্রমণ ছিল না কোনো দলের। তবে বলের নিয়ন্ত্রণে ছিল শেখ রাসেল এবং শুরুতেই সুযোগ পায়। কিন্তু সতীর্থের বাড়ানো বল ছোট বক্সে পেয়েও তাড়াহুড়া করে মিস করেন মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। ২৪ মিনিটে ম্যাচে নিজেদের সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করে মুক্তিযোদ্ধা। বাঁ প্রান্ত থেকে আইভরিকোস্টের স্ট্রাইকার বালো ফামোসা বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ছোট বক্সের মাথা থেকে শট নেন জাপানি স্ট্রাইকার ইয়োসুকে কাতোর। তার শটটি রক্ষা করেন শেখ রাসেলের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। এভাবেই শেষ হয় প্রথমার্ধ। দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে শেখ রাসেল। ৫৭ মিনিটে প্রথম সুযোগ সৃষ্টি করে ২০১২ সালের চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগে গত আসরে ১৫ গোল করে সেরা গোলদাতার পুরস্কার পাওয়া নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার রাফায়েল ওডোয়া মিস করেন সুবর্ণ সুযোগ। তার ডান পায়ের ভলিটি মুক্তিযোদ্ধার বারপোস্টের উপর দিয়ে যায়। ৭০ মিনিটে অবশেষে আনন্দে মেতে উঠে শেখ রাসেল শিবির। পাল্টা আক্রমণে গোল করেন রাফায়েল ওডোয়া। মুক্তিযোদ্ধার রক্ষণভাগের একজন ব্যাকপাস করেন গোলরক্ষক বরাবর। কিন্তু বলটির গতি না থাকায় বক্সের উপর দাঁড়িয়ে থাকা রাফায়েল ওডোয়া ধরে ফেলেন এবং ঠাণ্ডা মাথায় গোলরক্ষক হিমেলের মাথার ওপর দিয়ে জালে পাঠান (১-০)। ওই গোলের পর ঝিমিয়ে পড়ে খেলা। মনে হচ্ছিল এক গোলের ব্যবধানেই শেষ হবে খেলা। তখন ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে আরও একটি গোল করে ব্যবধান ২-০ করে শেখ রাসেল। গোলটি করেন দলের ব্রাজিলিয়ান রিক্রুটম্যান অ্যালেক্স রাফায়েল দ্য কস্টা। গোলের স ষ্টা ম্যাচসেরা নাইজেরিয়ান রাফায়েল ওডোয়া। ছোট বক্সে বল ধরে তিনি নিজে শট না নিয়ে আগুয়ান অ্যালেক্স রাফায়েলকে দেন এবং ব্রাজিলিয়ান ডান পায়ের প্লেসিং শটে গোল সংখ্যা ২-০ করেন। ফেডারেশন কাপ দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন মৌসুম। পেশাদার লিগে শিরোপা লড়াইয়ে নামার আগে দলগুলো টুর্নামেন্টটি দিয়ে ঝালিয়ে নিচ্ছে নিজেদের।

সর্বশেষ খবর