বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মোহামেডানের শিরোপা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মোহামেডানের শিরোপা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান দীর্ঘদিন শিরোপা ক্ষুধায় ভুগছে। ফুটবল, ক্রিকেট বা হকিতে একই দশা। ২০০২ সালের পর ফুটবলে লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ক্রিকেটে শেষ শিরোপা এসেছে ২০০৯ সালে। হকিতে প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা আসে ২০১২ সালে। শেষ পর্যন্ত ভাঙা ঘরে যেন আলোর ঝিলিক দেখা গেল। অর্ধযুগ পর মোহামেডান হকি লিগে হারানো গৌরব ফিরে পেয়েছে। সর্বোচ্চ ৪০ পয়েন্ট নিয়ে লিগে সবার ওপরে জায়গা করে নিয়েছে তারা। আবাহনী ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে হয়েছে রানার্স আপ এবং মেরিনার্স ৩৭ পয়েন্টে তৃতীয় হয়েছে। হকি লিগে মেরিনার্স ও আবাহনীই শক্তিশালী দল গড়ে। মোহামেডান সাদামাটা দল নিয়ে মাঠে নামে। সেক্ষেত্রে তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা বিস্ময়ই বটে। অনেকদিন পর সাফল্য আসায় সমর্থকরা খুশি হতেই পারেন। প্রশ্ন উঠেছে শেষ পর্যন্ত মোহামেডানের শিরোপা টিকে থাকবে কিনা? যে কোনো খেলায় শিরোপা নিষ্পত্তি হয় মাঠের লড়াইয়ে। হকিতে এবার তার ব্যতিক্রম ঘটল। বলা যায়, মাঠের বদলে শিরোপার সিদ্ধান্তটি নির্ধারিত হলো টেবিলে তাও আবার পাঁচ মাস পর।

প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান ভালো মানের দল না গড়লেও তাদের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। কোনো ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট না করে প্রথম পর্বে শীর্ষে ছিল তারা। সুপার ফাইভে লিগ জমে ওঠে। প্রথমপর্বে হারলেও সুপার ফোরে আবাহনী প্রতিশোধ নেয় মোহামেডানকে হারিয়ে। সুপার ফাইভের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয় মোহামেডান-মেরিনার্স। অবস্থা এমন ছিল মোহামেডান ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। অন্য দিকে মেরিনার্স জিতলে তিন দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যাবে। শিরোপা নির্ধারণের জন্য তখন তিন দলকে প্লে-অফ ম্যাচ খেলতে হতো। সংকট তৈরি হয় মোহামেডান-মেরিনার্স ম্যাচ ঘিরেই। ৭ জুন অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে মোহামেডান প্রথমে গোল করলেও পরে মেরিনার্স তা শোধ করে দেয়। এই গোল নিয়ে বাধে বিপত্তি। মোহামেডান মানতে পারেনি। রেফারি সিদ্ধান্ত না বদলালে তারা মাঠ থেকে উঠে যায়। পরে গোল মেনে নিলে মাঠে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিলে মেরিনার্স বেঁকে বসে। তাদের দাবি ছিল আম্পায়ার যে সময় নির্ধারণ করে দেন সেই সময়ের মধ্যে মোহামেডান মাঠে আসেনি। নিয়ম অনুযায়ী তারা ম্যাচ প্রত্যাখ্যান করেছে। এমন হট্টগোলে ৪৪টি মিনিট পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র থাকার অবস্থায় খেলাটি পণ্ড হয়ে যায়। ম্যাচের কি সিদ্ধান্ত হবে এনিয়ে ফেডারেশন নীরব ভূমিকা পালন করে। এমন কি লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পদত্যাগও করেন। দুই বিদেশি আম্পায়ার কোনো রিপোর্ট না দিয়ে চলে যান। সবচেয়ে বড় কথা এত বড় ঘটনার পরও লিগ কমিটি ক্লাবগুলোকে নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন মনে করেনি। স্বাভাবিকভাবে সব দায়ভার এসে পড়ে ফেডারেশনের ওপর। কিন্তু এ অবস্থায় তারা কী সিদ্ধান্ত নেবে?

হকির বৃহত্তর স্বার্থে মঙ্গলবার ফ্যালকন হলে গভর্নিং বডির সভা হয়। এজেন্ডা ছিল একটাই লিগের ভাগ্য নির্ধারণ। ব্যস্ততার কারণে হকি  ফেডারেশনের সভাপতি বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত

বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সাজেদ এ এ আদেল। তিন ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। শেষ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাজেদ রুলিং দেন। যেহেতু খেলাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ১-১ গোলে ড্র ছিল তাই দুই দলের পয়েন্ট ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়। এতেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় মোহামেডান। আবাহনী এ ব্যাপারে পুরোপুরি নীরব ভূমিকা পালন করছে। প্রশ্ন হচ্ছে মেরিনার্স এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে কিনা? বিষয়টি নিয়ে গতকাল ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সভা হয়েছে। সভায় কি সিদ্ধান্ত হয়েছে জানা যায়নি। বৈঠক বসার আগে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হাসান উলল্লাহ খান রানা বলেন, ‘অন্যায় সিদদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব না। প্রয়োজনে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে পারি।’ যদি তাই হয়, তাহলে কি নতুন এক সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে হকি?

সর্বশেষ খবর