শিরোনাম
রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

যুবারাই ওড়াল বিজয় নিশান

রাশেদুর রহমান

যুবারাই ওড়াল বিজয় নিশান

পাকিস্তানকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশের কিশোররা। ট্রফি হাতে উল্লসিত লাল-সবুজের জার্সিধারীরা —বাফুফে

নির্ধারিত নব্বই মিনিটের খেলা শেষ। যোগ করা সময়ের খেলা শুরু হয়ে গেছে। ১-১ সমতায় ম্যাচটি শেষ হচ্ছে দেখেই ‘পেনাল্টি স্পেশালিস্ট’ খ্যাতি পাওয়া গোলরক্ষক মেহেদীকে মাঠে নামিয়ে দিলেন কোচ আনোয়ার পারভেজ। তার খেলা জুয়াটা কাজে লেগে গেল। টাইব্রেকারে নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন পর ছেলেদের ফুটবলে শিরোপা উপহার দিলেন মেহেদী হাসান। টাইব্রেকারে ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতে নেয় ৩-২ ব্যবধানে।

সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা পুনরুদ্ধার করল বাংলাদেশের কিশোররা। গতকাল নেপালের আনফা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত ফাইনালে নির্ধারিত নব্বই মিনিটে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে ৩-২ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ। টাইব্রেকারে পাকিস্তানের প্রথম, দ্বিতীয় ও শেষ শটটি রুখে দেন মেহেদী। অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষে স্পট কিকে গোল করেন হৃদয়, রাজা আনসারি ও রুস্তম। রাজন ও রবিউল দুটি গোল মিস করেছেন। তবে মেহেদীর নৈপুণ্যে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে কোনো সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের। সেমিতেও টাইব্রেকারে বাংলাদেশ জিতে ছিল মেহেদী ম্যাজিকে। দুর্দান্ত খেলতে শুরু করেছিল বাংলাদেশের কিশোররা। একের পর এক আক্রমণে পাকিস্তানের ডিফেন্স লাইন বিধ্বস্ত করে দিয়েছিলেন মেহেদীরা। ১৬তম মিনিটেই দারুণ সুযোগ পায় বাংলাদেশ। শটটা রুখে দেন পাকিস্তানি গোলরক্ষক। তবে হতাশ হয়নি বাংলাদেশের কিশোররা। ম্যাচের ২৫তম মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। আত্মঘাতী গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন পাকিস্তানের হাসিব আহমেদ খান। প্রথমার্ধটা বাংলাদেশের হলেও দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে বদলে যায় পাকিস্তান। একের পর এক সুযোগ তৈরি করতে থাকে তারা। ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান পাকিস্তানের মাহবুব উল্লাহ। অবশ্য এরপরও সুযোগ পায় বাংলাদেশ। নিহাত জামান উচ্ছাস ৭৪তম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ নষ্ট করেন। নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোল না হওয়ায় টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচটা। পেনাল্টি শটে পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশের কিশোররা। বাংলাদেশ দুটি এবং পাকিস্তান তিনটি পেনাল্টি মিস করে। মূলত গোলরক্ষক মেহেদী হাসানের দৃঢ়তায়ই এই জয় পেল বাংলাদেশ।

গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন নিয়মিত গোলরক্ষক মিতুল মারমা। বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মেহেদী। গোলরক্ষক হিসেবে এরপর থেকেই দুরন্ত পারফর্ম করেন তিনি। সেমি ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে টাইব্রেকারে নিজেকে প্রমাণ করেন। দলকে দারুণ এক জয় উপহার দেন। আর ফাইনালে পাকিস্তানকে হারানোর কৃতিত্ব অনেকটা তারই। পাকিস্তানের তিনটি পেনাল্টি শট রুখে দিয়েছেন মেহেদী। ফুটবল ইতিহাসে অবশ্য এমন বদলি গোলরক্ষক হিসেবে মাঠে নেমে সফল হওয়ার ঘটনা কম নয়। ১৯৯০ সালে ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে আর্জেন্টিনার নিয়মিত গোলরক্ষক মাঠের বাইরে ছিটকে গিয়েছিলেন। বদলি গোলরক্ষক হিসেবে খেলে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন সার্জিও গয়কোচেয়া। মেহেদীও গোলরক্ষক হিসেবে নায়ক হয়ে গেলেন সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে।

এর আগে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তিন বছর পর শিরোপা পুনরুদ্ধার করল কিশোররা। গত বছর সেমিফাইনালেই তারা হেরেছিল নেপালের কাছে। আর কোনো ফাইনালে পাকিস্তানকে হারানোর গৌরব অর্জন করল বাংলাদেশের কিশোররা। এর আগে সাফ গেমস ফুটবলের ফাইনালে ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। কিশোররা যেন তারই একটা প্রতিশোধ নিল!

মেয়েদের ফুটবলে একের পর এক শিরোপা জয়ের ঘটনা ঘটছেই। বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় মেয়েরা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। এবার জুনিয়র লেভেলে বাংলাদেশের ছেলেরাও আলো ছড়াতে শুরু করল। গতকালের ফাইনাল জিতে কোচ আনোয়ার পারভেজ বলছেন, ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ পরিকল্পনা করেছিলাম। চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা তারই ফসল। এই দলটা গঠন করার পর থেকে বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি আমাদেরকে সব সময়ই দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই দলটার সবাই কঠোর অনুশীলন করেছেন। সবার পরিশ্রমেই আমরা সফল হয়েছি।’ সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিটা তিনি ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর