সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাটিংয়ে এ কী পরিণতি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ব্যাটিংয়ে এ কী পরিণতি

ওয়ানডে সিরিজে সফল ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস কাল সিলেটে ফিরেছেন মাত্র ৫ রানে। বোল্ড হওয়ার পরেই বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন বাঁহাতি ওপেনার —বাংলাদেশ প্রতিদিন

চলতি বছরের পাঁচ নম্বর টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। আগের চারটির পারফরম্যান্স জানাচ্ছে, ওয়ানডেতে যতটা শক্তিশালী টাইগাররা, টেস্টের চিত্র একেবারেই বিপরীত। যদিও বছর শুরু করেছিল দারুণ ব্যাটিংয়ে। মুমিনুল হকের জোড়া সেঞ্চুরিতে ‘দ্বীপরাষ্ট্র’ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ড্র করেছিল। ওই ড্রয়ে মনে হয়েছিল টেস্টে বছরটা দারুণ শুরু হবে টাইগারদের। কিন্তু কোথায় কি? হঠাৎই ছন্দ হারিয়ে ফেলে। সুর, লয়, তাল-সব কেটে যায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। নাভিশ্বাস উঠে প্রতিপক্ষের বোলারদের সুইং, গতি ও ঘূর্ণিতে। পরের তিন টেস্টের ছয় ইনিংসে দুইশ’র কোটা পূরণ করতে পারেনি। যার পাঁচটি আবার ১৫০-এর নিচে। ব্যাটসম্যানদের এই ব্যাটিং বিপর্যয়ের ধারাবাহিকতা বহাল সিলেটের অভিষেক টেস্টেও। শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের তুলনায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও নাভিশ্বাস উঠেছে ব্যাটসম্যানদের। শুধুই কি তাই, আফ্রিকান প্রতিনিধিদের মাঝারিমানের বোলারদের বিপক্ষে গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৪৩ রানে। ইনিংসটির স্থায়িত্ব মাত্র ৫১ ওভার। আশ্চর্য হলেও সত্যি, ওয়ানডের পরাশক্তি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের সর্বশেষ ৭ ইনিংসের স্কোর ১১০, ১২৩, ৪৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৬৮ ও ১৪৩। এই সাত ইনিংসে হাফসেঞ্চুরির ইনিংস সাকল্যে একটি! সব মিলিয়ে পরিসংখ্যানই বলছে, টেস্ট খেলতে নামলেই ব্যাটিং ভুলে যাচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা! আজ তৃতীয় দিন ১৪০ রানে এগিয়ে ব্যাটিংয়ে নামবে সফরকারী জিম্বাবুয়ে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, মিরপুর শেরেবাংলা, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি, বগুড়ার শহীদ চান্দু, খুলনার শেখ আবু নাসের, চট্টগ্রামের  এম এ আজিজ ও জহুরুল ইসলাম স্টেডিয়ামের পর অষ্টম টেস্ট ভেন্যু সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি। অনিন্দ্য সুন্দর স্টেডিয়ামটির অভিষেক স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ খেলতে নামে একজন বিশেষজ্ঞ পেসার ও তিন স্পিনার নিয়ে। সিলেটের সঙ্গে সঙ্গে অভিষেক হয় নাজমুল ইসলাম অপু ও আরিফুল হকের। দুই টেস্ট ম্যাচের প্রথমটি সিলেটে খেলতে নামে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ করার আত্মবিশ্বাস নিয়ে। প্রথমদিন সমানে সমান লড়লেও গতকাল দ্বিতীয় দিন ছন্দহীন হয়ে পড়েন মাহমুদুল্লাহরা। তবে শুরুটা কিন্তু দারুণ করেছিল। দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। আগের দিন ৫ উইকেটে ২৩৬ রান নিয়ে খেলতে নেমে খুব বেশিদূর এগোতে পারেনি। তাইজুলের ২০ টেস্ট ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো পাঁচোর্ধ্ব উইকেট নেওয়ায় সফরকারীদের ইনিংস থেমে যায় ২৮২ রানে। তাইজুলের শিকার ১০৮ রানে ৬ উইকেট। জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ১০ উইকেটের ৯০ শতাংশই শিকার করেছেন তিন স্পিনার তাইজুল, নাজমুল অপু ও মাহমুদুল্লাহ। স্পিনাররা উইকেট নিয়ে এক পেসারের অন্তর্ভুক্তির যৌক্তিকতা প্রমাণ করেন। তিনশ’র নিচে বেঁধে বড় স্কোরের টার্গেটে খেলতে নামে মাহমুদুল্লাহ বাহিনী। কিন্তু চাতারা, কাইলি জার্ভিস, সেকান্দার রাজার ত্রয়ী আক্রমণে ব্যাটিং করতে ভুলে যান লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকুর রহিমরা। অভিষেক হলেও সতীর্থদের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে একাই লড়াই করেছেন ব্যাটিং অলরাউন্ডার আরিফুল। দলের ১৪৩ রানের মধ্যে ২৮.৬৭ শতাংশ রান করেছেন আরিফুল। শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদ রান আউট হওয়া পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৪১ রানে। তবে লড়াই করতে চেষ্টা করেছেন সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুমিনুল হক। সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে এই চারজন দুই অংকের স্কোর করেন। মুশফিক চা বিরতির পরের ওভারে জার্ভিসের আউট সুইংয়ে ঠিকমতো খেলতে না পেরে সাজঘরে ফিরেন ৩১ রানের ইনিংস খেলে। রাজার ঘূর্ণি বুঝতে না পেরে স্লিপে ক্যাচ দেন মুমিনুল ব্যক্তিগত ১১ রানে। লেগ গ্লেন্স করতে যেয়ে রিটার্ন ক্যাচ দেন মিরাজ। ব্যক্তিগত শূন্য রানে প্লেড হন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। অপরাপর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ৯ লিটন, ইমরুল ৫, নাজমুল শান্ত ৫ রান করেন। গত সাড়ে তিন বছর ধরে ওয়ানডে ক্রিকেটের পরাশক্তি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ঠিক বৈপরীত্য অবস্থান টেস্টে। সর্বশেষ সাত ইনিংসের স্কোরই বলছে, টেস্ট ক্রিকেট মানেই ছন্দহীন ব্যাটিং ব্যাটসম্যানদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুয়ে : ১ম ইনিংস ২৮২/১০, ২য় ইনিংস ১/০, বাংলাদেশ : ১ম ইনিংস ১৪৩/১০

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর