সোমবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আলোচনায় এখন ফুটবলার মেহেদী

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আলোচনায় এখন ফুটবলার মেহেদী

ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ এখন বাংলাদেশের বড় তারকা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টেই স্পিন জাদু দেখিয়ে মেহেদী হয়ে যান নায়ক। সেই থেকে পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক সাফল্য পেয়ে যাচ্ছেন। মেহেদীর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিভূত হয়ে পড়েন। দরিদ্র ঘরের সন্তান খুলনায় টিনের ঘরে কোনোমতে বসবাস করছিলেন মিরাজ। পাকা বাড়ি নির্মাণ করবে সেই অর্থও মেহেদীর বাবার ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই জমি বরাদ্দ করা হয় মেহেদীর পরিবারকে। দেশের হয়ে অবদান রাখায় যোগ্য পুরস্কারই পেয়েছেন মেহেদী।

এত গেল ক্রিকেটার মেহেদীর কথা। এবার ফুটবল মাঠে আলো ছড়ালেন আরেক মেহেদী হাসান। তারই ম্যাজিকে তিন বছর পর সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে হারানো শিরোপা উদ্ধার করে বাংলাদেশের যুবারা। পজিশন গোলরক্ষক। তবে সেরা একাদশে নয়, জায়গা হয়েছিল সাইড বেঞ্চে। কোচ আনোয়ার পারভেজ অনুশীলনে মিতুল মারমার পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হয়ে তাকেই সেরা একাদশে রাখেন। গ্রুপ পর্বে মালদ্বীপ ও নেপালের বিপক্ষে তিনি নামেন। দুই ম্যাচেই জয় পেয়ে বাংলাদেশ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। মিতুলের পারফরম্যান্সও ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু নেপালের বিপক্ষে অবৈধ ফাউলের কারণে তাকে লাল কার্ড দেখানো হয়।

সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মিতুলের জায়গা হয় মাঠের বাইরে। মাঠে নামেন এক্সটা গোলরক্ষক মেহেদী হাসান। প্রথমে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর্যন্ত গোল শোধ করতে পারেনি। বিদায় ঘণ্টা বাজার অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য খুলে যায় ইনজুরি সময়ে। ৯৩ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন আশিকুর রহমান। নির্ধারিত সময়ে খেলা শেষ হয় ১-১ গোলে।

এই টুর্নামেন্টে আবার নকআউট পর্বে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের ব্যবস্থা নেই। ফল নিষ্পত্তি করতে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। এতেই নায়ক হয়ে যান গোলরক্ষক মেহেদী হাসান। ভারতের প্রথম দুই শট দৃঢ়তার সঙ্গে রুখে দেন মেহেদী। তারই নৈপুণ্যে বাংলাদেশ ৪-২ গোলে জয় পেয়ে ফাইনালে চলে যায়। আরেক সেমিফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৪-০ গোলে হারিয়ে পাকিস্তান ফাইনালে জায়গা করে নেয়।

সেমিফাইনালে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করার পর অনেকে ভেবেছিলেন ফাইনালে শুরু থেকেই মেহেদী হাসানই খেলবেন। কিন্তু কোচ অভিজ্ঞতা একটু বেশি বলে নামান মিতুলকে। ২০১১ সালে এই পাকিস্তানের কাছে অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ হেরে যায়। এর আগে ১৯৮৯ সালে সাফ গেমস ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে সোনা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। যুব হলেও অতীত হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু প্রতিপক্ষ হিসেবে তো পাকিস্তান যুবারাও ফেবারিট। পারবে কী বাংলাদেশ? এই চিন্তায় কাজ করছিল সবার ভিতর।

মেয়েরাতো দুই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল, পুরুষরা যদি না পারে তাহলে তো লজ্জা পাবারই কথা। যাক আত্মঘাতী হলেও প্রথমে গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ভালোই খেলছিল যুবারা। ৫৪ মিনিটে ডি-বক্সের ভিতর অযথা ফাউল করলে রেফারি পাকিস্তানকে পেনাল্টি দেন। তাতেই গোল শোধ করেন মাহবুব উল্লাহ। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র থাকে। শিরোপা নিষ্পত্তিতে টাইব্রেকারের ব্যবস্থা। এর আগে অবশ্য কোচ আনোয়ার পারভেজ শেষ বাঁশি বাজার কয়েক মিনিট আগে মিতুল মারমাকে তুলে নেন।

টাইব্রেকার এক্সপার্ট বলেই মাঠে নামান মেহেদী হাসানকে। ফাইনালেও বাজিমাত। একে একে পাকিস্তানের তিনটি শট রুখে দেন তিনি। মেহেদী রাঙানো ম্যাচে রঙিন শিরোপা উৎসব করে বাংলাদেশ। জাতীয় দল যেখানে ব্যর্থ সেখানে যুবাদের সাফল্যে উৎসব তো হবেই। টানা দুই ম্যাচে টাইব্রেকারে পাঁচটি শট আটকানো চাট্টিখানি কথা নয়। এক টুর্নামেন্ট খেলেই নায়ক হয়ে গেলেন সাইড বেঞ্চে বসা মেহেদী হাসান। বাংলাদেশে যোগ্য গোলরক্ষকের অভাব অনেক দিনের। সেখানে মেহেদী আশার আলো জ্বালালেন।

ক্রিকেটার মেহেদীর সঙ্গে ফুটবলার মেহেদীর অনেক মিল। দুজনই আলো ছড়িয়েছেন কিশোর বয়সেই। দুজনাই দরিদ্র ঘরের সন্তান। যশোরের বেনাপোলে গোলরক্ষক মেহেদীর জন্ম। ফুটবলের প্রতি ঝোঁক দেখে দরিদ্র পিতা মিজানুর রহমান ছেলেকে ভর্তি করেন নুর ইসলাম ফুটবল একাডেমিতে। সেই মেহেদী এখন বাংলাদেশের ফুটবলের নায়ক বনে গেলেন।

মেহেদী যেন সের্গিও গায়কোচিয়া। ১৯৯০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার নিয়মিত গোলরক্ষক ছিলেন নেরি পম্পিডু। দুই ম্যাচ খেলার পর পম্পিডু ইনজুরিতে মাঠ ছাড়েন। সেরা একাদশে ঢুকে পড়েন গায়কোচিয়া। কোয়ার্টার ফাইনালে যুগোশ্লাভিয়া ও সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে জয় পেয়ে আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছিলেন। জয়ের নায়ক ছিলেন গোলরক্ষক গায়কোচিয়া। দুই ম্যাচেই তিনি টাইব্রেকারে পাঁচ শট রুখে দেন। তবে ফাইনালে বিতর্কিত পেনাল্টি গোলে আর্জেন্টিনা হেরে যায়। ১৯৮৯ সালে ঢাকার প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপও এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে। বাংলাদেশ লাল দলের নিয়মিত গোলরক্ষক ইনজুরির কারণে ফাইনাল খেলতে পারেননি। তার পরিবর্তে একাদশে জায়গা করে নেন সাইড বেঞ্চে বসে থাকা সেলিম। টাইব্রেকারে বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। গোলরক্ষক সেলিম দৃঢ়তার সঙ্গে দুটি শট রুখে দিয়েছিলেন।

এক ম্যাচ খেলেই নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন তখনকার কিশোর গোল রক্ষক সেলিম। পরবর্তীতে তিনি জনপ্রিয় আবাহনীতে খেলেছেন।

সর্বশেষ খবর