মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তাইজুল একাই ১১

মেজবাহ্-উল-হক

তাইজুল একাই ১১

ঘূর্ণি জাদুকর তাইজুল ইসলাম বদলে দিলেন ম্যাচের গতি প্রকৃতি। একাই ১১ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়লেন, সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে জয়ের রাস্তাটা দেখিয়ে দিলেন। এখন বাকি কাজটা কেবল ব্যাটসম্যানদের। জয়ের জন্য শেষ দুই দিনে টাইগারদের দরকার ২৯৫ রান। হাতে রয়েছে ১০ উইকেট।

দুই ইনিংস মিলে ১৭০ রান দিয়ে ১১ উইকেট তাইজুল ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন। অবশ্য বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসেই এটি তৃতীয় সেরা বোলিং ফিগার। এর আগে এক টেস্টে ১২টি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড আছে কেবল মেহেদী হাসান মিরাজ ও এনামুল হক জুনিয়রের। সব মিলে এক টেস্টে টাইগার বোলারদের ১০ উইকেট নেওয়ার ঘটনাই আছে মাত্র ৫টি। তার মধ্যে সাকিব আল হাসানের দুইবার এবং মিরাজ-এনামুলের সঙ্গে একবার তাইজুলের। গতকাল আর মাত্র একটি উইকেট পেলেই এক টেস্টে সেরা বোলিং ফিগারের মালিক হয়ে যেতেন এই স্পিনার। তবে এক ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগার কিন্তু তাইজুলের দখলেই আছে। ২০১৪ সালে ঢাকায় এই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেই ইনিংসে ৩৯ রান দিয়ে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন।

সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের দিক দিয়ে গতকাল তাইজুল ছাড়িয়ে গেছেন মাশরাফি মর্তুজাকে। নড়াইল এক্সপ্রেসের উইকেট সংখ্যা ছিল ৭৮। আর এখন তাইজুলের উইকেট সংখ্যা ৮০। এই স্পিনারের সামনে এখন কেবল সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ রফিক। ৫৩ ম্যাচে সাকিবের উইকেট ১৯৬টি, ৩৩ ম্যাচে রফিক পেয়েছেন ১০০ উইকেট।

গতকাল একটুর জন্য হ্যাটট্রিক মিস করেছেন তাইজুল। পর পর দুই বলে জিম্বাবুয়ের দুই ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামস ও পিটার মুরকে আউট করে দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে ছিলেন। পরের বলে সিকান্দার রাজার উইকেট পেলেই হয়ে যেত বাজিমাত। কিন্তু হয়নি। তবে দুই বল খেলার পর ঠিকই রাজাকে বিদায় করে দিয়েছেন তিনি। হ্যাটট্রিক না হলেও ৫ বলের মধ্যে তিন উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন। রাজার উইকেট শিকার করেই টেস্টে ১০ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। তবে গতকাল আরেকটি হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল তাইজুলের। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে শেষ দুই বলে উইকেট শিকার করেছিলেন এই স্পিনার। গতকাল তিনি প্রথম বলেই উইকেট পেলে স্বপ্ন পূরণ হয়ে যেত। ক্রিকেট বিশ্বে তাইজুলই প্রথম বোলার যিনি তার অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। টেস্টে হ্যাটট্রিক হলে আরেকটি মাইলফলকে পৌঁছে যেতেন।

প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। এই স্পিনার গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। টেস্ট ইনিংসে ৫ কিংবা তার বেশি উইকেট নেওয়ার তালিকায় বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে তাইজুল এখন তৃতীয়। এখন পর্যন্ত ৫ ইনিংসে এমন কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছেন সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ১৭ বার এমন কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। মোহাম্মদ রফিক ৭ ইনিংসে ৫ কিংবা তার বেশি উইকেট শিকার করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তাইজুলই বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরে এনেছেন। আগের দিন যেখানে হারের শঙ্কা নিয়ে হোটেলে ফিরেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, গতকাল হয়তো তারা ফিরেছেন জয়ের সুখ স্মৃতি স্মরণ করতে করতে!

ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার জন্য প্রথম ইনিংসে টাইগাররা পিছিয়ে পড়েছিল ১৩৯ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে কত রান করে তা নিয়ে ছিল আতঙ্ক! কিন্তু তাইজুলের বিধ্বংসী বোলিংয়ের কারণে মাত্র ১৮১ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ইনিংস। জয়ের জন্য বাংলাদেশের টার্গেট ৩২১ রান। যদিও টেস্টে ২১৫ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই টাইগারদের। বাংলাদেশের মাটিতেও এত বড় লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই। ২০০৮ সালে একবার নিউজিল্যান্ড জিতেছিল ৩১৭ রান তাড়া করে। জিততে হলে বাংলাদেশকে সেই রেকর্ড ভাঙতে হবে। টাইগারদের জন্য বড় স্বস্তি হচ্ছে আজ কেবল চতুর্থ দিন। উইকেটও খুব বেশি ভাঙেনি। তাই পরিসংখ্যানকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নতুন রেকর্ড গড়ার এটাই উপযুক্ত সময়। মাহমুদুল্লাহদের জন্য সবচেয়ে বড় শুভ সংকেট হচ্ছে—গতকাল শেষ বিকালে ১০.১ ওভার ব্যাটিং করেও কোনো উইকেট হারাতে হয়নি। সারা দিন ফিল্ডিং করার পরও ব্যাট হাতে দিনের শেষ ঘণ্টাটা অবলীলায় কাটিয়ে দিয়েছেন দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও ইমরুল কায়েস। তারা মহামূল্যবান ২৬টি রানও করেছেন। আজ টাইগারদের সামনে জয়ের দারুণ সুযোগ। এমন একটি ম্যাচ তাইজুলের জন্যই জিততে চাইবেন সতীর্থরা। তা ছাড়া ৩৬০ আউলিয়ার আবাস ভূমি সিলেটে টেস্ট অভিষেকে স্মরণীয় রাখতে কে না চায়?

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুয়ে     :    ২৮২/১০ ও ১৮১/১০  

বাংলাদেশ     :    ১৪৩/১০ ও ২৬/০

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর