সোমবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুমিনুল-মুশফিকের জোড়া সেঞ্চুরি

মেজবাহ্-উল-হক

মুমিনুল-মুশফিকের জোড়া সেঞ্চুরি

দুই সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল ও মুশফিক —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘুরে ফিরে সেই পুরনো দৃশ্য! খেলার শুরুর পর এক ঘণ্টা  যেতে না যেতেই তিন উইকেট নেই বাংলাদেশের। ঘরের মাঠের পছন্দের উইকেট, তার ওপর টস জয়! কিন্তু বাইশগজে এ কোন বাংলাদেশ, মাত্র ২৬ রানেই ৩ উইকেটের পতন!

তবে সকালের সূর্য যে সব সময় পুরো দিনের পূর্বাভাস দিতে পারে না তা প্রমাণ করে দিলেন মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হক। দুই ব্যাটিং জিনিয়াস জোড়া সেঞ্চুরি ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনই বাংলাদেশকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিলেন। দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ৩০৩ রান।

মিরপুর শেরেবাংলার উইকেট সত্যিই বৈচিত্র্যময়, যেখানে মাত্র ১১.১ ওভারে ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মোহাম্মদ মিথুনের মতো তারকা ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা, তারাই কিনা ৮৫ ওভার পর্যন্ত আর  কোনো উইকেটের পতনই ঘটাতে পারেননি! আবার শেষ বিকালে ৭ রানের মধ্যে টপাটপ উইকেট তুলে নিয়েছেন।

কালকের দিনটা ছিল মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিমের জন্য অন্যরকম একদিন। আট ইনিংস পর সেঞ্চুরির দেখা  পেয়েছেন বাংলাদেশের ব্রাডম্যান খ্যাত ব্যাটসম্যান মুমিনুল।  খেলেছেন ১৬১ রানের নান্দনিক এক ইনিংস। ১৯ মাস পর  সেঞ্চুরি পেয়েছেন মুশফিক। ১১১ রানের অনবদ্য ইনিংস  খেলে অপরাজিত রয়েছেন এখনো। 

গতকাল বাংলাদেশ দলকে যেন ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলেছেন এই দুই ব্যাটিং জিনিয়াস। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মুশফিক ও মুমিনুল মিলে গড়েন ২৬৬ রানের অসাধারণ এক জুটি। শেষ বিকালে একটুখানি ভুলের জন্য আউট হয়েছেন মুমিনুল। তার ২৪৭ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৯ বাউন্ডারিতে। ৩১ টেস্টে মুমিনুলের ক্যারিয়ারের সপ্তম  সেঞ্চুরি।

ষষ্ঠ সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিক। ২৩১ বলে ১১১ রান করে অপরাজিত রয়েছেন তিনি। ওয়ানডেতে রানের মধ্যে থাকলেও টেস্টে রীতিমতো রান খোরায় ভুগছিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। সে কারণেই কিনা কাল সেঞ্চুরির পর তার বাধ ভাঙা উচ্ছ্বাস। 

সত্যিই টেস্ট ক্রিকেট রহস্যময় এক খেলা। দলীয় স্কোর যখন অপয়া-১৩ ঠিক তখনই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। এর ঠিক তিন রান পরেই বিদায় দেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। দলের বিপর্যয়ে হাল ধরতে  নেমে ছিলেন মোহাম্মদ মিথুন। এটি ছিল অভিষেক ম্যাচ। দারুণ একটা সুযোগ ছিল তার সামনে। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না। ‘ডায়মন্ড ডাক’ মেরে হতাশ হয়ে  ফেরেন ড্রেসিং রুমে। এমন বিপর্যয়ের পরও বাংলাদেশ দিনটি নিজের করে নিয়েছে মুশফিক ও মুমিনুলের মহাকাব্যিক জুটির কল্যাণে। চতুর্থ উইকেটে কাল সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপের নতুন  রেকর্ড হয়েছে। মুশফিক-মুমিনুলের জুটি জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেও যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের  রেকর্ড। সব মিলে টেস্টে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে সাকিব-মুশফিকের ৩৫৯ রানের জুটি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি হচ্ছে ৩১২ রানের, পার্টনারশিপে ছিলেন তামিম ও ইমরুল। সবশেষ চার টেস্টে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে হেরেছে বিশাল ব্যবধানে। শেষ আট ইনিংসে একবারও দুইশ রান পার করতে পারেনি টাইগাররা। ব্যাটসম্যানরা যেন ব্যর্থতার দুষ্টুু চক্রে আটকে গিয়েছিলেন। মুশফিক-মুমিনুলের ব্যাটে কাল সেই চক্র ভেঙে বেরিয়ে এলো বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে প্রথম দিনই ঢাকা টেস্টের লাগামটা শক্ত করে ধরে ফেললেন মাহমুদুল্লাহরা। 

কালকের দিনে জিম্বাবুয়ের একমাত্র সফল বোলার কাইল জার্ভিস। এই পেসার মাত্র ১৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া অন্য বোলারদের রীতিমতো শাসন করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

টেস্টে চিন্তা করতে হয় সেশন বাই সেশন। দিনের প্রথম  সেশনটা ছিল ফিফটি ফিফটি। শেষ সেশনেও দাপট  দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তবে দুপুরের সেশনে কোনো পাত্তাই পায়নি জিম্বাবুয়ে। এই সেশনের ৩২ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৫২ রান করেছে বাংলাদেশ। দুই সেঞ্চুরিয়ন মুশফিক ও মুমিনুল মিলে ওভার প্রতি ৪.৭৫ গড়ে রান তুলেছেন।

সারা দিন জিম্বাবুয়ের বোলারদের শাসন করার পরও দিনের অন্তিম মুহূর্তে মাত্র ৭ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা আফসোসই হচ্ছে টাইগারদের! অনুশোচনার আগুনে পুড়ছেন ১৬১ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলা মুমিনুল, ‘শেষ পর্যন্ত আমি থাকতে পারলে সেটা খুবই ভালো হতো। তিন উইকেটে তিনশ রান করতে পারলে স্কোরটাও দেখতে ভালো লাগত। তবে প্রথম ইনিংসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৪০০-৪৫০ রান এখানে অনেক ভালো স্কোর।’ সুখের বিষয় হচ্ছে, এখনো উইকেটে রয়েছেন নির্ভরতার প্রতীক মুশফিকুর রহিম। আর সংখ্যায় ৫ উইকেটের পতন হলেও স্বীকৃত ৪ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছে। কেন না শেষ উইকেট ছিল নাইটওয়াচ ম্যান হিসেবে নামা তাইজুল ইসলামের।

এখন উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে রয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বাইরেও রয়েছেন দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান মেহেদী হাসান মিরাজ ও আরিফুল হক। সকালে উইকেটে বেশ ময়েশ্চার থাকে। তাই দিনের প্রথম ঘণ্টা ভালোভাবে কাটিয়ে দিতে পারলে প্রথম ইনিংসেই রানের পাহাড় গড়া খুব কঠিন হওয়ার কথা নয়।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ৩০৩/৫ (৯০ ওভার) মুমিনুল ১৬১, মুশফিক ১১১*, মাহমুদুল্লাহ ০*

সর্বশেষ খবর