শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

টার্গেট এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ

মেজবাহ্-উল-হক

টার্গেট এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ - মুশফিকুর রহিম

জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজটি ছিল টাইগারদের জন্য রীতিমতো অস্বস্তিকর!  আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে থাকা দলটির সঙ্গে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ। সিলেট টেস্ট হারার পর টাইগাররা ঢাকা টেস্টে জিতে কোনোরকমে মান রক্ষা করেছে। এবার বাংলাদেশের টার্গেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ। ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ২২ নভেম্বর শুরু হবে চট্টগ্রামে। দ্বিতীয় টেস্ট ঢাকায় শুরু হবে ৩০ নভেম্বর। তার আগে জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে চলছে ব্যবচ্ছেদ। ওই সিরিজের সমস্যাগুলোই তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজের আগে শোধরাতে হবে। তবে ওই সিরিজে দলের বেশ কিছু সমস্যাও যেমন দৃষ্টিগোচর হয়েছে, তেমনি সম্ভাবনার জায়গাও কিন্তু আছে। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি দুই-ই ছিল। ব্যাটসম্যানরা রানে ফিরেছেন, সাকিব না থাকার পরও স্পিনাররা দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। সমস্যা বলতে— টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন, ফিল্ডিং হয়েছে যাচ্ছেতাই, পেসাররা ভালো বোলিং করেও উইকেট তুলে নিতে পারেননি। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে জয়ের পর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেছিলেন, ‘ক্রিকেট খেলাটাই এমন, আপনি যদি একশ করেন কিংবা দুইশ পঞ্চাশ করেন তারপরও ব্যক্তিগতভাবে মনে হবে আরও কাজ করা দরকার। কারও যদি সুইং, স্পিন কিংবা সুইপ শটে দুর্বলতা থাকে, সেখানে উন্নতি করার সুযোগ থাকে। এই ম্যাচটা জিতে যেহেতু আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে নামব, বলতে পারেন ভালো একটা কামব্যাক। ব্যাটসম্যানদের জন্য ভালো হয়েছে, অনেকেই ভালো করেছে। সবাই একসঙ্গে ভালো করবে না। কখনো টপঅর্ডার রান করবে, কখনো মিডল অর্ডার রান করবে। যার যার পজিশন থেকে সবাই চেষ্টা করছে। সবাই ট্রেনিং সেশনগুলোতে চেষ্টা করছে। কারণ আমাদের ব্যাটিং নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিল। এই ম্যাচে রান করাতে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস আরও ভালো হবে। এই আত্মবিশ্বাস আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও কাজে  দেবে।’

তবে ব্যাটিংয়ে অস্বস্তি কিন্তু পুরোপুরি দূর হয়নি। কেননা দুই টেস্টের চার ইনিংসেই ব্যর্থ হয়েছেন ওপেনাররা। তবে আশার খবর হচ্ছে, জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টেই ফিরতে পারেন ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল। এ খবর দিয়েছেন স্বয়ং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। ফিরতে পারেন সাকিব আল হাসানও। যদিও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ফেরার ব্যাপারে কিছু বলেননি বোর্ড প্রধান। তিনি সাকিবের খেলার বিষয়টি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। তবে দুই তারকা ক্রিকেটার একসঙ্গে ফিরলে বাংলাদেশ দল আরও অনেক শক্তিশালী হবে। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে একের পর এক ক্যাচ মিস হয়েছে। টেস্টে যেখানে একটি সুযোগই ম্যাচের গতি পাল্টে দিতে পারে সেখানে বার বার সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টে জিতলেও বাংলাদেশ অন্তত ৬-৭টা ক্যাচ মিস করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এমন মিস হলে ম্যাচে ফেরা কঠিন হয়ে যাবে। তবে ক্যাচ মিস নিয়ে বেশ সতর্ক মাহমুদুল্লাহ, ‘এ নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু  নেই। তারপরও আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। অনেক সময় একটা ক্যাচ ম্যাচের মোমেন্টাম ঘুরিয়ে দিতে পারে। এই জিনিসটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আশা করি ভবিষ্যতে আমরা এখানে উন্নতি করতে পারব।’

বাংলাদেশকে চিন্তায় ফেলে দিতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফর্ম। সর্বশেষ সিরিজে টাইগাররা ক্যারিবীয় দ্বীপে গিয়ে ওয়ানডে ও টি-২০ সিরিজ জিতলেও টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাটে দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে ক্যারিবীয়রা। তারা বাংলাদেশে এসেছে ভারতের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলার পর। দীর্ঘ সময় থাকার কারণে উপমহাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গেও মানিয়ে নিয়েছে। তবে বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে একটু হলেও তো পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মনে করেন, শুধু কন্ডিশনের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না মাঠেও ভালো খেলতে হবে। টাইগার ক্যাপ্টেন বলেন, ‘এখানকার কন্ডিশন কিছুটা ভিন্ন। আমরা যদি হোম কন্ডিশনে আমাদের মতো করে খেলতে পারি তাহলে ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে আসতেও পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা কতটা ভালো ক্রিকেট খেলছি। ওরা অনেক ভালো দল। আমাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে তৈরি থাকতে হবে।’ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজে দেখা গেছে টাইগার ব্যাটসম্যানরা জিম্বাবুয়ের পেসারদের খেলতেই অবস্থা নাকাল। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মোকাবিলা করবেন কীভাবে? অবশ্য মাহমুদুল্লাহ মনে করেন উইন্ডিজের পেস বোলিং নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই, ‘ওদের যে পেস বোলিং আক্রমণ আছে, তার বিরুদ্ধে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলেছি। ওরা কেমন বোলিং করতে পারে, জানা আছে। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট এবং বাংলাদেশের উইকেটও এক নয়।’ স্পিন উইকেট তৈরি করে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও স্পিন উইকেট চান মাহমুদুল্লাহ, ‘টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বসে চিন্তা করব কেমন উইকেট চাচ্ছি। ওদের দলও আমাদের দেখতে হবে, প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে আমরা সব সময় যেমন স্পিনবান্ধব উইকেট করি, সেই দিকেই হয়তো যাব।’

সর্বশেষ খবর