বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রোমাঞ্চকর পাঁচ টেস্ট

একটা সময় টেস্টে ছিল ‘টাইমলেস যুগ’। যত দিন ইচ্ছা খেলা যেত। কিন্তু এখন ৫ দিন। দীর্ঘ মেয়াদি খেলা বলে ক্রিকেটের অভিজাত এই ফরম্যাট নাকি জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। কিন্তু এই টেস্টেও এমন কিছু নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে বা ঘটছে যা আজকের দিনের সেলিব্রেটি ফরম্যাট টি-২০ কিংবা ওয়ানডের চেয়েও রোমাঞ্চকর। ইতিহাসের রোমাঞ্চকর পাঁচ টেস্ট নিয়েই লিখেছেন মেজবাহ্-উল-হক

রোমাঞ্চকর পাঁচ টেস্ট

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১ রানে জয় (১৯৯৩) : সেটা ছিল কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি অ্যাম্ব্রোসদের যুগ। ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে অ্যাডিলেডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৮৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। ওয়ালশ, অ্যাম্ব্রোস, বিশপ ও বেনজামিনের তোপের মুখে পড়ে ১০২ রানেই ৮ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। তারপর অভিষিক্ত জাস্টিন লেঙ্গার হাফ সেঞ্চুরি করেন। তবে লেঙ্গার যখন আউট হয়ে যান তখনো ৪২ রান দূরে অস্ট্রেলিয়া। ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান টিম মে এবং ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান ক্রেইগ ম্যাকডারমট উইকেটে। শেষ উইকেট জুটিতে ৪০ রান আসে। আর মাত্র এক রান করলেই ম্যাচ টাই হয়ে যেত। এমন সময় ম্যাকডারমটকে কটবিহাইন্ডের ফাঁদে ফেলেন। ১ রানে জিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ব্যবধানে এবং স্মরণীয় এক জয়।

ইংল্যান্ডের ২ রানে জয় (২০০৫) : কাকতালীয়ভাবে ২ রানে পরাজিত হওয়া দলটিও অস্ট্রেলিয়া। তবে এবার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। এজবাস্টনে অসিদের হতাশ করে দেয় ইংলিশরা। ২০০৫ সালের এই ম্যাচটিকে বলা হয় অ্যাশেজ সিরিজের সেরা ম্যাচ। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড করেছিল ৪০৭ রান। জবার ৩০৮ রান করে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্রেট লির গতি এবং শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণির সামনে দাঁড়াতেই পারেননি ইংলিশরা। মাত্র ১৮২ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের দ্বিতীয় ইনিংস। ওয়ার্ন ৬ এবং লি নেন ৪ উইকেট। ২৮২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৭৫ রানেই ৮ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। তারপর শেন ওয়ার্নকে সঙ্গে নিয়ে নবম উইকেট জুটিতে ৪৫ রান করেন লি। ১০ উইকেট জুটিতে ক্যাস্প্রোইজের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি গড়ে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান ব্রেট লি। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ইংলিশ বোলার স্টিভ হার্মিশনের এক বাউন্সারে ক্যাস্প্রোইজ আউট হয়ে যান। ব্রেট লি শেষ পর্যন্ত ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন, ইংল্যান্ড জিতে যায় ২ রানে।

অস্ট্রেলিয়ার ৩ রানে জয় (১৯০২) : এই ঘটনাটিও অ্যাশেজ সিরিজেই ঘটেছিল। ১৯০২ সালের জুলাইয়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ইংল্যান্ডকে ৩ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেটা ছিল মহানাটকীয় এক ম্যাচ।  ট্রাম্পারের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ২৯৯ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে জ্যাকসনের সেঞ্চুরিতে ২৬২ রান করে ইংল্যান্ড। পরের ইনিংসে কাজের কাজটি করেন ইংলিশ বোলাররা। অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ৮৬ রানে অলআউট করে দেয়। ইংলিশ বোলার লকউড মাত্র ২৮ রানে নেন ৫ উইকেট। জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের লক্ষ্য ছিল মাত্র ১২৪ রান। কিন্তু এই ম্যাচে ১২০ রানে গিয়ে আটকে যায় ইংলিশরা। অসি বোলার ট্রাম্বল নেন ৬ উইকেট, আরেক বোলার সান্ডারস নেন ৪টি। ৩ রানে নাটকীয় জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।

ইংল্যান্ডের ৩ রানে জয় (১৯৮২) : সেই অ্যাশেজ সিরিজে আরও একটি ৩ রানের ব্যবধানে ফল নির্ধারণের ঘটনা আছে। ১৯৮২ সালের ডিসেম্বরে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। শেষ উইকেট জুটিতে অস্ট্রেলিয়া রেকর্ড গড়লেও ম্যাচে জিততে পারেনি। শেষ ইনিংসে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ২৯২ রান। কিন্তু ২১৮ রানেই ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলে অসিরা। কিন্তু তখনো বাকি ছিল অনেক নাটক। শেষ জুটিতে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান থম্পসনকে সঙ্গে নিয়ে অ্যালান ৭০ রান করেন। কিন্তু একটুর জন্য শেষ রক্ষা করতে পারেননি। ইয়ান বোথামের পরিকল্পনার কাছে হার মানতে হয় বোর্ডারকে। থম্পসন স্লিপে ক্যাচ তুলে দিলে জিতে যায় ইংল্যান্ড।

নিউজিল্যান্ডের ৪ রানের নাটকীয় জয় (২০১৮) : টেস্ট ক্রিকেটের সব শেষের নাটকীয় ঘটনাটি জন্ম একদিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে। পাকিস্তানকে মাত্র ৪ রানে হারায় নিউজিল্যান্ড। চতুর্থ দিনের লাঞ্চ পর্যন্ত মনে হচ্ছিল ম্যাচটি সহজেই জিতে যাবে পাকিস্তান। তাদের জয়ের জন্য তখন দরকার ছিল মাত্র ৪৬ রান, হাতে ছিল ৬ উইকেট। এমন ম্যাচেও শেষ পর্যন্ত ৪ রানে হেরে যায় পাকিস্তান। টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে কম ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারণী ম্যাচের সেরা পাঁচে জায়গা পেয়ে যায় টেস্টটি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর