মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মিরপুর টেস্টেও স্পিন উইকেট

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মিরপুর টেস্টেও স্পিন উইকেট

মিরপুর টেস্টের আগে অনুশীলনে তিন স্পিনার তাইজুল, মেহেদী মিরাজ ও সাকিব আল হাসান —এএফপি

মাত্র ৬ উইকেটের অপেক্ষা! ছয় উইকেট পেলেই রেকর্ড বইয়ের পাতায় সোনালি কালিতে নিজের নাম লিখে নিবেন তাইজুল ইসলাম। ১০০ উইকেটের ক্লাবে নাম লেখাতে বাঁ হাতি স্পিনারের দরকার এই ছয় উইকেট। ১০০ উইকেটের ক্লাবে নাম কি মিরপুর টেস্টেই লিখতে পারবেন তাইজুল? বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কম টেস্টে ১০০ উইকেটের শিকারি হতে তাইজুলকে চট্টগ্রামের মতো আলো ছড়াতে হবে মিরপুরেও। সেটা কি সম্ভব? তাইজুল অবশ্য আশ্বস্ত হতেই পারেন। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চট্টগ্রামের মতো মিরপুরেও স্পিন উইকেট বানিয়ে গুড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা টিম ম্যানেজমেন্টের। স্পিন উইকেটের পুরো সুবিধা আদায়ে মিরপুরেও খেলবেন স্পিন চতুষ্ঠয় সাকিব আল হাসান, তাইজুল, মেহেদী মিরাজ ও নাঈম ইসলাম। অবশ্য একাদশে পরিবর্তন আসতে পারে একটি। আহত ওপেনার ইমরুল কায়েশের জায়গায় অভিষেক হতে পারে আরেক বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলাম অনিকের। ইনজুরি কাটিয়ে অবশ্য শেষ মুহূর্তে ফিরতে পারেন তামিম ইকবাল। তখন হয়তো সাজঘরে ঠাঁই হতে পারে সৌম্য সরকারের। চট্টগ্রামে দুই ইনিংসে ড্যাসিং সৌম্যের ব্যাট থেকে বেরিয়েছে মাত্র ১২ রান। 

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ১৯ টেস্টের কোনোটিই শেষ হয়নি পৌনে তিন দিনে। স্পিন শাসিত চট্টগ্রামে ৬৪ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। সফরকারী ক্যারিবীয়দের ২০ উইকেটের সবগুলোই নিয়েছেন চার স্পিনার। মাত্র ১৯ বছর বয়সে অভিষিক্ত নাঈম ৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। সাকিব, মিরাজকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে উজ্জ্বল ছিলেন তাইজুল। চার স্পিনারের ঘূর্ণিতে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে ২৪৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবীয়রা গুটিয়ে যায় মাত্র ১৩৯ রানে। সফরকারীদের দুই ইনিংসের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৯৯.২ ওভার! বিপরীতে বাংলাদেশের ইনিংসের স্থায়িত্ব ১২৮.৩ ওভার। স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসের সংগ্রহ ৩২৪ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৫ রান। দুই দলের ৪০ উইকেটের ৩৪টির শিকারি আবার স্পিনাররা।

নিজেদের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম প্রতিপক্ষের দুই ইনিংসের ২০ উইকেট নেওয়ার বিরল কৃতিত্ব দেখিয়েছে টাইগার স্পিনাররা। সফরকারীদের প্রথম ইনিংসে ২৪৬ রানে গুটিয়ে দিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তরুণ অফ স্পিনার নাঈম। ৬ ফুটের উপর উচ্চতাকে কাজে লাগিয়ে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তোলা নাঈমের স্পেল ছিল ১৪-২-৬১-৫। পিছিয়ে ছিলেন না অধিনায়ক সাকিবও। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের স্পেল ছিল ১১-৩-৪৩-৩। মিতব্যয়ী তাইজুলের স্পেল ২০-৩-৫২-১ এবং ইংল্যান্ড বধের নায়ক মিরাজের ১৫-০-৬৭-১। উইকেটের সুবিধাকে কাজে লাগাতে চার স্পিনার বোলিং করেছেন একত্রে ৬০ ওভার। পেসার মুস্তাফিজুর রহমান দুই ইনিংসে দুটি করে বোলিং করেছেন মাত্র ৪ ওভার। দ্বিতীয় ইনিংসেও স্পিন চতুষ্ঠয় সামনে থেকে আঘাত হেনেছেন প্রতিপক্ষদের ওপর। ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৯ রানে গুড়িয়ে দিতে অগ্রণী ভূমিকা ছিল তাইজুলের। টানা তিন টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখানো তাইজুলের স্পেল ১১.২-২-৩৩-৬। ইনজুরি কাটিয়ে খেলায় ফেরা সাকিবের স্পেল ৭-০-৩০-২। যদিও উইকেট পাননি নাঈম। মিরাজ নিয়েছেন বাকি ২ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে পাওয়েলের উইকেট নিয়ে ২০০ উইকেটের ক্লাবে নাম লেখান সাকিব। ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ক্লাবে নাম লিখেছেন স্যার ইয়ান বোথাম, স্যার গ্যারি সোবার্স, জ্যাক ক্যালিস, স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, কপিল দেব, ইমরান খানদের সঙ্গে। অবশ্য সবচেয়ে কম টেস্টে অলরাউন্ডিং মাইলফলকটি গড়েছেন নতুন রেকর্ড।

স্পিন চতুষ্ঠয়ের সম্মিলিত পারফরম্যান্সে দারুণ উচ্ছ্বসিত টিম ম্যানেজমেন্ট। চার স্পিনার খেলানোর সাফল্যে আত্মবিশ্বাসী টিম ম্যানেজমেন্ট মিরপুরেও একই পথে হাঁটবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। কোচ স্টিভ রোডসও জানিয়েছেন, মিরপুরের উইকেটের আচরণ হবে চট্টগ্রামের ন্যায়। স্পিননির্ভর উইকেট তৈরি করায় পেসারদের কোনো ভূমিকা থাকছে না বলে সমালোচনাও যে কম হচ্ছে, সেটা নয়। কিন্তু সাফল্য পেতে মরিয়া টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট এখন চার স্পিনার তত্বেই হাঁটতে চাইছেন। যদিও প্রতিপক্ষ শিবিরে দেবেন্দ্র বিশু, ওয়ারিকান, চেইজের মতো পরীক্ষিত স্পিনার রয়েছেন। যে কোনো সময়ে এসব ক্যারিবীয় স্পিনার ধসিয়ে দিতে পারেন টাইগারদের ব্যাটিং লাইন।

 

সর্বশেষ খবর