মঙ্গলবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
এই নারী ভারোত্তোলক ঘটনার পর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন

ধর্ষণের অভিযোগে তোলপাড় ক্রীড়াঙ্গন

তদন্ত কমিটি গঠন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এস এ গেমসে সোনার পদক জেতার পর মঞ্চে মারিয়া আক্তার সীমান্তের কান্না কি কেউ ভুলতে পারবেন? গেমসে বাংলাদেশের যখন সোনা জেতা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তখন ভারোত্তোলনে অবিশ্বাস্যভাবে নারী বিভাগে সোনা জিতেন মারিয়া। তার গলায় সোনার পদক ঝুলানোর সময় বেজে উঠছিল ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে পাওয়া আমার সোনার বাংলা জাতীয় সংগীত। এক নারী ভারোত্তোলক আন্তর্জাতিক গেমসে দেশকে এত বড় সম্মান এনে দিয়েছেন। মারিয়ার সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিভূত হয়ে ফ্ল্যাটও উপহার দেন। অথচ সেই ভারোত্তোলনে কী ভয়ঙ্কর ও জঘন্য ঘটনাই না ঘটে গেল। এক নারী ভারোত্তোলককে ধর্ষণের শিকারের অভিযোগ উঠেছে। তাও আবার খোদ ভারোত্তোলন ফেডারেশনের এক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে ক্রীড়াঙ্গনে নিন্দার ঝড় বইছে। জাতীয় ভারোত্তোলনে সোনা জয়ী এই নারী ভারোত্তোলক ঘটনার পর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি এখন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নির্যাতিত নারী ভারোত্তোলকের মামার অভিযোগে উঠে এসেছে ফেডারেশনের অফিস সহকারী সোহাগ আলীর নাম। অভিযোগ, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ক্রীড়া পরিষদের পুরনো ভবনের চারতলায় ধর্ষণের শিকার  হয় তার ভাগ্নি। সোহাগ আলীই জোরপূর্বক তার ভাগ্নিকে ধর্ষণ করে। তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে আমি নিজেই ওকে এনেছিলাম ভারোত্তোলক বানানোর জন্য। ১৫ সেপ্টেম্বর খেলা ছিল। যার জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর অনুশীলনের জন্য তার ভাগ্নিকে ডেকে আনা হয়। ওকে দেখানো হয়েছিল চাকরির লোভও। পুরনো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চারতলায় ডেকে এনে রুম লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। ভারোত্তোলকের মামার তথ্য মতে, ঘটনাটি তারা জেনেছেন অনেক পরে। বাড়ি ফেরার পর তার ভাগ্নি ব্যাপারটি কাউকে বলেননি। শুধু কান্নাকাটি করত। ১০ অক্টোবর পুকুরে ডুবে আত্মহত্যার চেষ্টা চালানোর পরই পুরো বিষয়টি সামনে চলে আসে। দরিদ্র ঘরের মেয়ে বলে উন্নত চিকিৎসার বদলে গ্রামের বাড়িতে কবিরাজ দেখানো হয়। তার ভাগ্নে পরে এক আত্মীয়ের কাছে নির্মম ঘটানাটি খুলে বলেন।

এখন ঢাকায় তার চিকিৎসা চলছে। নির্যাতনের শিকার হয়ে কিশোরী ভারোত্তোলক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। এখন কিছুটা সুস্থের দিকে। প্রশ্ন উঠেছে এতদিন পর ঘটনা প্রকাশ করা হলো কেন? কিংবা মামলাও হলো না কেন? মেয়ের মামা বলেন, মামলা হলে পুলিশ বাড়িতে যাবে। গ্রামে মুখ দেখানো যাবে না। তাই ফেডারেশনে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে।

গতকাল বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ফেডারেশনের সহসভাপতি অভিজ্ঞ সংগঠক উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে দোষীরা কেউ ছাড় পাবে না। মেয়েটির পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ জানানোর পরই ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত শুরু করেছে। মেয়েটি এখনো অসুস্থ। ও সুস্থ হলে জিজ্ঞাসা করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছেন ফেডারেশনের সহসভাপতি আতিকুজ্জামান। সদস্যসচিব হাসান ইমাম ও মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। যার নামে অভিযোগ উঠেছে তাকে সাসপেন্ড করা হলেও নজরবন্দী রাখা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরই আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট জমা দেব। দোষ প্রমাণ হলে তারাই শাস্তির ব্যবস্থা করবে।

উল্লেখ্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এই ভবনেই একটি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রীর লাশ পাওয়া গিয়েছিল। কোনো তদন্ত ছাড়াই এই লাশ দাফন করা হয়েছিল।

সর্বশেষ খবর