শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পেসারবিহীন অদ্ভুতুড়ে একাদশ!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ইউটার্ন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের! মিরপুর টেস্ট গড়ানোর আগের দিনও পেসারদের পক্ষে কত যুক্তি উপস্থাপন করেছেন টাইগার অধিনায়ক। অথচ রাত পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু বেমালুম ভুলে গেলেন। ভুলে গেলেন আধুনিক ক্রিকেটে পেসারদের ছাড়া খেলতে নামাটা ভিনগ্রহের ক্রিকেট বলেই বিবেচিত! সেটাই করলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। মিরপুরে ট্র্যাকে প্রতিপক্ষ ক্যারিবীয়দের টুঁটি চেপে ধরতে একাদশে রাখেননি কোনো পেসার। চার স্পিনার দিয়ে সাজালেন একাদশ। অবিশ্বাস্য! বিশ্ব ক্রিকেটে এমন রেকর্ড ছিল এতদিন ভারতের। এবার সেই রেকর্ডে ভাগ বসাল বাংলাদেশ। চার স্পিনার নিয়ে চট্টগ্রামেই টেস্ট খেলেছে টাইগাররা। নিজেদের দেড় যুগের ক্রিকেট ইতিহাসের ১১২ নম্বর টেস্টে এই প্রথম একাদশ সাজানো হলো কোনো পেস বোলার ছাড়া। অবিশ্বাস্য এই কাজটি করেছেন অধিনায়ক সাকিব।

চট্টগ্রাম টেস্টে খেলেছিলেন দেশসেরা পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। খেললে কি হবে? ৬৪ রানের অসাধারণ জয়ের টেস্টে বোলিং করেছিলেন সাকুল্যে ৪ ওভার। তাও আবার দুই ইনিংসে! পরশু মিডিয়ার মুখোমুখিতে টাইগার টেস্ট অধিনায়ক সাকিব ইঙ্গিত রেখেছিলেন একাধিক পেসার খেলানোর। জানিয়েছিলেন, সকালের কুয়াশা ভেজা উইকেটে পেসাররা বাড়তি সুবিধা পাবে। কিন্তু কোথায় কী। গতকাল চার স্পিনার নিয়ে একাদশ দেখে ভিরমি খাওয়ার দশা সবার। মুস্তাফিজ নেই একাদশে। নেই কোনো পেসার। চার স্পিনার নিয়েই বাজিমাত করতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন। দিনশেষে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান তুলে দিন পার করেছে। অভিষেকেই ৭৬ রানের ইনিংস খেলে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত রেখেছেন বাঁ-হাতি ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিক। তামিম ইকবালের পর দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ৪ হাজার রানের ক্লাবের বর্ণিল সদস্য হয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। দিনশেষে দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দারুণ ব্যাটিং করে ৫৫ রানে অপরাজিত রয়েছেন সাকিব।

চার স্পিনার নিয়ে চট্টগ্রামে বাজিমাত করে সাকিবরা। মিরপুরেও সেই পরিকল্পনায় আস্থা রেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মিরপুরের উইকেটে বল লাটিমের মতো ঘুরবে, স্পিনাররা গোখরার ফণা তুলবেন, সেই কল্পনাতেই অধিনায়ক আস্থা রেখেছেন চার স্পিনারের ওপর। চট্টগ্রামের পারফরম্যান্সে আস্থা না রাখার কোনো কারণও নেই। ক্যারিবীয়রা দুই ইনিংসে ব্যাটিং করেছে ৯৯.২ ওভার। মুস্তাফিজের ৪ ওভার বাদে বাকি ৯৫.২ ওভার বোলিং করেছেন চার স্পিনার সাকিব, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম ইসলাম। স্পিন চতুষ্টয় নিয়েছেন ক্যারিবীয়দের ২০ উইকেটের সবগুলো। সাকিব ৫টি, নাঈম ৫টি, মিরাজ ৩টি ও বাকি ৭টি তাইজুলের শিকার। এমন পারফরম্যান্স যখন স্পিনার চারের, তখন অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্ট আস্থা রাখতেই পারে। এবারই প্রথম বাংলাদেশ এক পেসার নিয়ে খেলছে। ১৯৬৭ সালে এজব্যাস্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত খেলতে নেমেছিল চার স্পিনার বিষেণ সিং বেদী, এরাপল্লী প্রসন্ন, শ্রী নিবাসন ভেঙ্কটরাঘবন ও ভগবত চন্দ্রশেখরকে নিয়ে। টেস্টটি ভারত হেরেছিল ১৩২ রানে। ওই টেস্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের ২০ উইকেটের ১৮টিই নিয়েছিলেন স্পিন চতুষ্টয়। চট্টগ্রামে চার টাইগার স্পিনারের শিকার ২০টিই। ২০১৬ সালে মিরপুরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একজন পেসার খেলিয়েছিল বাংলাদেশ। কামরুল ইসলাম রাব্বি বোলিং করেছিলেন মাত্র ৩ ওভার। অধিনায়ক মুশফিক ব্যবহার করেছিলেন পাঁচ স্পিনার। সেবার অবশ্য স্পিনে ভ্যারাইটি ছিল। সাব্বির রহমান রুম্মন ছিলেন লেগ স্পিনার। মিরপুরে সুযোগ পাওয়া চার স্পিনারের দুজন বাঁ হাতি ও দুজন অফ স্পিনার। ব্যাটসম্যানদের পর এখন অপেক্ষায় থাকতে হবে চার স্পিনারের ক্যারিশমার দিকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস, ২৫৯/৫, ৯০ ওভার (সৌম্য সরকার ১৯, সাদমান ইসলাম ৭৬, মুমিনুল হক ২৯, মুশফিকুর রহিম ১৪, মোহাম্মদ মিথুন ২৯, সাকিব আল হাসান ৫৫*, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৩১*। কেমার রোচ ১/৩৮, লিউইস ১/৩৫, দেবেন্দ্র বিশু ২/৬৯, রোস্টন চেইজ ১/৬১।) প্রথম দিন শেষে।

সর্বশেষ খবর