রবিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আবারও সেঞ্চুরির দেখা মাহমুদুল্লাহর

আসিফ ইকবাল

আবারও সেঞ্চুরির দেখা মাহমুদুল্লাহর

উইকেট পাওয়ার পর সাকিবকে অভিনন্দন জানাতে ছুটে এলেন মাহমুদুল্লাহ। এর আগে তিনি সেঞ্চুরি তুলে বাংলাদেশকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গেছেন। ব্যাটিং ও বোলিং মিলিয়ে দিনটি ছিল বাংলাদেশের —রোহেত রাজীব

সবুজ টুপিতে অভিষেক ক্রিকেটারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেড়যুগে (২০০০-২০১৮) সবুজ টুপির ক্রিকেটার এখন শয়ের কাছাকাছি, ৯৪। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সংখ্যাটা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। সমালোচনা ও আলোচনার এমন মিশেলের বিপরীতে ব্যাটসম্যানরা কিন্তু উজ্জ্বল। ব্যর্থতার খোলশ ভেঙে, আঁধার কাটিয়ে আলোয় ভেসে উঠছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস, সাকিব আল হাসানরা। লাটিমের মতো ঘুরতে থাকা উইকেটে তিন অংকের জাদকরি সব ইনিংস খেলে আলোকিত করছেন নিজেদের। এজন্যই হয়তো উত্ফুল্ল মাহমুদুল্লাহ। উচ্ছ্বসিত ধ্রুপদী এই ব্যাটসম্যান। গতকাল মাহমুদুল্লাহ ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি করেছেন শিল্পীর আচরে। খেলেছেন টেস্ট মেজাজে ১৩৬ রানের নান্দনিক ইনিংস। সোনালি কালিতে নিজের নাম লিখেছেন ইতিহাসের বর্ণালী পাতায়।     

পরিসংখ্যানটা কি জানেন মাহমুদুল্লাহ? শান্ত, সৌম্য ও ধীরস্থির মাহমুদুল্লাহ নিশ্চিত করেই জানেন। দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে ক্রিকেটীয় পড়াশোনায় এগিয়ে থাকা মাহমুদুল্লাহ জানেন অপেক্ষা কত জ্বালার! কত বেদনার। একইভাবে জানেন অপেক্ষার অবসান কত মধুর। অম্ল মধুর ক্যারিয়ারের ধারক মাহমুদুল্লাহ ৪৩ টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন সাকল্যে ৩টি। ক্রিকেট শিল্পীর বিচারে সংখ্যাটা খুবই কম। কিন্তু কঠিন বাস্তবতার বিচারে সংখ্যাটা আকাশসম উচ্চতার। ২০০৯ সালে সাদা পোশাকে হাঁটতে শুরু করেন মাহমুদুল্লাহ। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে অভিষেক ইনিংসে তার ব্যাট থেকে বেরিয়েছিল ৯ রান। তবে ওই টেস্টে অসাধারণ বোলিং করে টাইগারদের বিদেশের মাটিতে উপহার দিয়েছিলেন প্রথম জয়। সাদা পোশাকে প্রথম তিন অংকের ইনিংস খেলেন ৫ নম্বর টেস্টের নবম ইনিংসে। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৫ রানের ইনিংসটি ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এরপর শুধুই অপেক্ষা। অপেক্ষার শেষ যেন হচ্ছিল না। অবশেষে অপেক্ষার মধুর অবসান ৮ বছর পর, ২০১৮ সালের নভেম্বরে। ১৪ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেখা পান দ্বিতীয় সেঞ্চুরির। লম্বা সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি করেন ৪১ নম্বর টেস্টের ৭৮তম ইনিংসে। তৃতীয়টি করলেন গতকাল। প্রতিপক্ষ এক সময়কার দৌর্দণ্ড প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৩৬ রানের কারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলেন ২৪২ বলে ১০ চারে। প্রথমটি থেকে দ্বিতীয়টি পেতে অপেক্ষা করেছেন দীর্ঘ আট বছর। বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারকে এতটা সময় তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকতে হয়নি সোনালি কালিতে সেঞ্চুরি লিখতে। ইনিংস খেলতে হয়েছে আরও ৭৩টি। অথচ তিন নম্বর ইনিংসটি তুলে নিয়েছেন মাত্র ১৬ দিনের মধ্যে চার ইনিংসের ব্যবধানে। সেঞ্চুরি পেতে মাহমুদুল্লাহ পরিবর্তন এনেছেন মানসিকতায়। পরিবর্তন এনেছেন টেকনিকে, ‘প্রথম সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয়টি পেতে আমায় অপেক্ষা করতে হয়েছে লম্বা সময়। এই সময়ে আমি আমার টেকনিকে পরিবর্তন এনেছি। মানসিকতায় পরিবর্তন এনেছি।’

মানসিকতায় পরিবর্তন এনে মাত্র ১৬ দিনের ব্যবধানে করেছেন দুটি সেঞ্চুরি। তবে ৯০ থেকে ১০০ রানে পৌঁছাতে দারুণ নার্ভাস ছিলেন ৪৩ টেস্টে ২৪০৭ রান করা মাহমুদুল্লাহ। ব্যাকফুটে স্কয়ার কাটে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল্লাহ বল খেলেছেন ২৮টি! অবশ্য দুবার আউটেরও সুযোগ দিয়েছিলেন। প্রায় ৩১৬ মিনিট ক্রিজে থেকে গড়েছেন ধীরলয়ে সেঞ্চুরির রেকর্ড। সোয়া ৬ ঘণ্টা ক্রিজে থেকে সেঞ্চুরি হাঁকানো মাহমুদুল্লাহ নার্ভাস থাকার কথা বললেন, ‘৯৭ রানে থাকলে সবাই সেঞ্চুরির আশা করে। অন্য সময়ের তুলনায় আজ বেশি নার্ভাস ছিলাম সেঞ্চুরি করতে। তারপরও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, সেঞ্চুরি করেছি। দিনের শুরুতে সাকিব, লিটন, তাইজুল, নাঈমরা ভালো ব্যাটিং করেছেন। ওরা আমাকে সহায়তা করেছেন।’ ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরিটা অন্যভাবে উদযাপন করেন তিনি। বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি উদযাপনের ভঙ্গিটা ছিল ভিন্ন। ক্যারিয়ার সেরা ১৩৬ রানের ইনিংসটিকে উৎসর্গ করেন মমতাময়ী মাকে, ‘আমি সেঞ্চুরিটিকে উৎসর্গ করছি আমার মায়ের নামে। সবার মা-বাবাই সন্তানের সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করেন। আমার মা-ও করেন।’ মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরি, সাকিবের অধিনায়কোচিত ৮০, লিটনের আগ্রাসী ৫৪ ও সাদমানের প্রত্যয়ী ৭৬ রানে ভর করে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫০৮ রান। জবাবে সাকিব ও মিরাজের ঘূর্ণিতে হাঁসফাঁস করেছেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। দুই স্পিনারের সাঁড়াশি আক্রমণে ৭৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাকিব ও মিরাজের ফনা তোলা বোলিংয়ে পাঁচ কারিবীয় ব্যাটসম্যানই সাজঘরে ফিরেছেন বোল্ড হয়ে। দিনের শুরুতে ব্যাটসম্যানদের দেখানো পথে বিকালে হেঁটেছেন স্পিনাররা। বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে যখন মনে হয়েছে উইকেট ব্যাটসম্যানদের সহায়ক। বিকালে সাকিব ও মিরাজের ঘূর্ণিতে সেটা রূপ নিয়েছে রুদ্র মূর্তি। সফরকারীদের টুঁটি চেপে ধরার ব্যথায় মাহমুদুল্লাহ কৃতিত্ব দিলেন স্পিনারদের, ‘চট্টগ্রামের তুলনায় মিরপুরের উইকেট কিছুটা হলেও ভালো। তবে আমি মনে করি আমাদের স্পিনাররা ঠিক জায়গা বোলিং করেছেন। খেয়াল করলে দেখবেন সবগুলোই ছিল বোল্ড।’ জুলাইয়ে ক্যারিবীয়দের মাটিতে চোখের পানি, নাকের পানি এক হয়েছিল মাহমুদুল্লাদের। পাঁচ মাসের ব্যবধানে সেই ক্যারিবীয়দেরই টুঁটি চেপে ধরেছে টাইগাররা। এখন শুধু অপেক্ষা হোয়াইট ওয়াশের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ৫০৮/১০, ওয়েস্টইন্ডিজ : ৭৫/৫ (দ্বিতীয় দিন)

সর্বশেষ খবর