বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পেশাদার লিগে পেশাদারিত্ব নিয়েই যত প্রশ্ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

পেশাদার লিগে পেশাদারিত্ব নিয়েই যত প্রশ্ন

পেশাদার লিগের ১০টি আসর পার হয়ে গেল। এরপরও কি ফুটবলে পেশাদারিত্বের দেখা মিলেছে? লিগ হচ্ছে নিয়মিতভাবেই। তবু হ-য-ব-র-ল অবস্থা। অপ্রিয় হলেও সত্যি যে ২/৩টি ক্লাব ছাড়া অন্যরা পেশাদারিত্বের নিয়মই মানছে না। এক্ষেত্রে বাফুফের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। ফিফার যে গাইড লাইন আছে সেখানে কোনোভাবেই খেলোয়াড় ও কোচদের পারিশ্রমিক বকেয়া রাখা যাবে না। বাংলাদেশে এমন কোনো মৌসুম নেই যে বকেয়া না মেটানোর অভিযোগ পাওয়া যায় না। দুনিয়া জুড়ে এই লিগের নিয়ম হচ্ছে চুক্তিভিত্তিক পারিশ্রমিক মাসে মাসে মেটানো।

ধরলাম বাংলাদেশের সব ক্লাবগুলো এত ধনী নয় যে মাসে মাসে টাকা দেওয়া যাবে। যদিও কিছু কিছু ক্লাব নিয়মটা মানছে। মাসে না হোক অন্তত পারিশ্রমিকটাতো মেটানো উচিত। পেশাদারির যুগে ফুটবলাররা  তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হবেন কেন?

এক্ষেত্রে অবশ্য  বিদেশি ফুটবলারদের ভাগ্যবানই বলা যায়। কেননা তাদের পারিশ্রমিক বাকি রাখা মানে সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলো হুমকির মধ্যে পড়ে যাওয়া। এক সময় দেখা যেত পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দেওয়া তো হতোই না এমনকি দেশে ফেরার সময় বিমানের টিকিটের অর্থও দেওয়া হতো না।

এখন সেই দৃশ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। দেখা যাচ্ছে যদি কোনো কারণে বিদেশির পারিশ্রমিক বকেয়া থেকে যায় তাহলে আর রক্ষা নেই ফিফার কাছে নালিশ চলে যায়। ফিফা তখন আবার বাফুফেকে সময় বেঁধে জানিয়ে দেয় এই সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করতেই হবে। তা না হলে সংশ্লিষ্ট ক্লাব এমনকি বাফুফের বিরুদ্ধে তারা শাস্তির ব্যবস্থা নিবে। কোচ এমেকার অর্থ বকেয়া রাখায় ফিফার চিঠিতে মোহামেডান কি বিপাকেই না পড়ে গিয়েছিল। পরে বাফুফের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে বিপদ মুক্ত হয়েছে।

খেলোয়াড়ের অর্থ মেটানোকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো ক্লাবকে মাশুলও গুণতে হয়েছে। বিদেশিরা পারিশ্রমিক নিয়ে এখন নিরাপদেই আছে বলা যায়। তারপরও সব বিদেশি ফুটবলাররা যে পারিশ্রমিক বুঝে পাচ্ছেন তাও বলা যাবে না। বিশেষ করে অনেক ছোট ক্লাব কম পরিচিত বিদেশিদের বকেয়ার অর্ধেকটা দিয়ে ম্যানেজ করছে। যত যন্ত্রণা স্থানীয় ফুটবলারদের। গত ১০ পেশাদার লিগে কোনো কোনো আসরে এমনও দেখা গেছে স্থানীয়দের পারিশ্রমিকের আশিভাগই বাকি থেকে যাচ্ছে। এরা অবশ্য তেমন পরিচিত নন যারা মফস্বল থেকে খেলতে আসেন।

কথা হচ্ছে কম পরিচিত হলেও স্থানীয় ফুটবলাররা তাদের অর্থ পাবেন না কেন? বাফুফের কি এ ব্যাপারে কিছুই করার নেই। অভিযোগ যে  জানানো হয় না তাও বলা যাবে না। সংশ্লিষ্ট ক্লাবগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দেয় ফেডারেশন। টাকা দেওয়া হয় তবে তার পরিমাণ হাস্যকর।

 

দেখা যায় চুক্তি করা হয়েছে ৫ লাখ, অথচ ২ লাখ টাকা দিয়েই শেষ। অপরিচিত ফুটবলার বলে সাহসও পান না ক্লাবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে। এই ভয়ে যদি সামনে মৌসুমে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়। অবশ্য পরিচিত বা জাতীয় দলের খেলা ফুটবলারদের অবস্থা ভিন্ন। যেসব ক্লাব বকেয়া রাখে তারা খেলোয়াড়দের শর্ত জুড়ে দেয় পুরো টাকাই একটু সময় নিয়ে দেওয়া হবে। তবে ফিফার কাছে নালিশ করা যাবে না।

এভাবেই চলছে পেশাদার লিগ। ক্লাবগুলোও স্বীকার করে স্থানীয়দের বকেয়ার কথা। এখানে আবার তারা যুক্তিও তুলে ধরে। বাফুফেইতো আমাদের অংশগ্রহণ মানি বুঝিয়ে দেয় না। লাখ লাখ টাকা তাদের কাছে পাওনা। সুতরাং খেলোয়াড়দের বকেয়া মেটাতে তো ঝামেলা হবেই। ফিফা নাকি নতুন নিয়ম করতে যাচ্ছে, পেশাদার লিগের ক্লাবগুলো যে খেলোয়াড়দের অর্থ দেওয়া হয় তার  রিসিভের ফটোকপি  তাদের দফতরে পাঠানোর। এই নিয়ম যদি চালু হয় তাহলে বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর সামনে কি কঠিন সময় আসছে তা কি কেউ ভেবে দেখেছে!

সর্বশেষ খবর