শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশের ফুটবল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশের ফুটবল

এক সময় দেশে তারকা ফুটবলারের অভাব ছিল না। এখন এই জনপ্রিয় খেলার এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা যে খেলোয়াড়দের চিনতে হয় জার্সি নম্বর দেখে। তারকা শব্দটা যেন বাংলাদেশের ফুটবল থেকে হারিয়ে গেছে। জাতীয় দলের লাগাতার ব্যর্থতায় ফুটবলে ভালো কিছু ঘটবে তা আর কেউ আশা করেন না। ২০০৩ সালের পর জাতীয় দল আর কোনো ট্রফি জিততে পারেনি। এখনতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল খেলাটিই বাংলাদেশের স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। গত চার আসরে গ্রুপপর্ব খেলেই বাংলাদেশের বিদায়। এবার ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ হওয়ায় অনেকে আশায় ছিলেন দীর্ঘদিনের শিরোপার খরা কাটবে। ভালোভাবেই এগুচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত সেই হতাশাতেই মিশন শেষ হয় স্বাগতিকদের। যেখানে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে খেলার কথা। সেখানে কিনা নেপালের কাছে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায়। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও ব্যর্থতা। এরপর তো বাংলাদেশের ফুটবলে তারকা বলাটা হাস্যকর। অন্ধকারে যতটুকু আশার আলো জেগে আছে তা তরুণ বা কিশোরদের ঘিরে। হতাশা যেখানে জাতীয় দলের নিত্যসঙ্গী। সেখানে কিশোররাই জুনিয়র সাফ জিতে দেশকে উৎসবে মাতিয়েছে। এইতো কিছুদিন আগে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এই টুর্নামেন্টে ২০১৫ সালেও বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল ভারত।

তিন বছরের ব্যবধানে দুই শিরোপা জেতা কম গৌরবের নয়। অনূর্ধ্ব-১৮ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও বাংলাদেশ ঝলক দেখিয়েছিল। দুর্ভাগ্য হেড টু হেডের ফাঁদে পড়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। দুর্দান্ত খেলেছে কিশোররা। জাতীয় দল কবে ভারতকে হারিয়েছে সেই হিসাব অনেকের জানা নেই। কিন্তু কিশোর ফুটবলাররা ঠিকই জয় পাচ্ছে। মালদ্বীপও এখন মামুনুলদের কাছে আতঙ্কের নাম। অথচ বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতে পারছে না মালদ্বীপ।

এক সময় আসলাম, কায়সার হামিদ, মোনেম মুন্না, সাব্বিরদের মতো তারকা ফুটবলাররা ঝলক দেখাতেন। এখন দেখান অপরিচিত তরুণরা। নির্ভর বা আশা-ভরসার প্রতীক এখন তরুণরাই। ঘরোয়া আসরে একেক দলে চারজন করে বিদেশি খেলায় অনেক স্থানীয় ফুটবলাররা সাইড বেঞ্চে বসে থাকছেন। তবে যারা সেরা একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন সেখানে তরুণদের নৈপুণ্যই চোখে ভাসছে। তারকা শব্দের বিলুপ্তির পর বাংলাদেশের ফুটবল এখন তারুণ্যনির্ভর হয়ে পড়েছে।

এরপরও কি বাফুফে তরুণদের নিয়ে আলাদা কিছু ভাবছে? শিরোপা জিতলে অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ব্যস এতটুকুই। কিভাবে এদেরকে দিয়ে ফুটবল জাগানো যায় সেই পরিকল্পনা কি নেওয়া হচ্ছে। মেয়েরা একের পর এক সাফল্য পাচ্ছিল। এখন সবরকম টুর্নামেন্টে মারিয়াদের মাঠে নামানোয় এখানে হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলাররা অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্ট খেলবে থাইল্যান্ডে। ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে চারজাতি এই আসর। স্বাগতিক থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ ও সাইপ্রাসের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। কোচ মোস্তফা আনোয়ার পারভেজ টুর্নামেন্টে ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী। থাইল্যান্ড ও সাইপ্রাস চেনা প্রতিপক্ষ না হলেও জয় আশা করা যায়। তারুণ্যনির্ভর ফুটবল। সময়টা এখন তরুণদেরই। সেক্ষেত্রে শুধু কি খেললেই চলবে? এগিয়ে নিতে বাফুফের পরিকল্পনা কোথায়? পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি এক নয়।

সর্বশেষ খবর