শনিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ওপেনার নিয়ে মধুর সমস্যা

মেজবাহ্-উল-হক

ওপেনার নিয়ে মধুর সমস্যা

টেস্টে ওপেনার সংকট। ঘোরতর সংকট। কিন্তু সাদা পোশাকের এই সংকটই রঙিন পোশাকে হয়ে গেছে মধুর সমস্যা! ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ইনিংস ওপেন করবেন কে কে? এই সিদ্ধান্ত নিতে টিম ম্যানেজমেন্টকে রীতিমতো  হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তামিম ইকবাল ইনজুরি থেকে ফেরায় দলে এখন চার ওপেনার— ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার ও লিটন কুমার দাস— চারজনই ফর্মের তুঙ্গে।

তামিম তো অটোমেটিক চয়েস। দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। আগের সিরিজে যিনি এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচে ১৪৩.৫ গড়ে করেছিলেন ২৮৭ রান। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে একটি হাফ সেঞ্চুরি। এশিয়া কাপে খেলতে গিয়ে প্রথম ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ভাঙা হাত নিয়ে দলের প্রয়োজনে এক হাতে ব্যাট করে দর্শকের বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। ইনজুরিতে পড়ার আগ পর্যন্ত তামিম ছিলেন ২০১৮ সালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সেই তামিমকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবাও যেন পাপ! কিন্তু ড্যাসিং ওপেনারের সঙ্গী হবেন কে? ইমরুল, সৌম্য, নাকি লিটন?

সব শেষ ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ইমরুল ছিলেন ভয়ঙ্কর। আশ্চর্য রকমের ধারাবাহিক এক ব্যাটসম্যান। তিন ম্যাচের ১১৬ গড়ে তিনি করেছেন ৩৪৯ রান। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে একটি হাফ সেঞ্চুরি। প্রথম ম্যাচে ১৪৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৯০ এবং তৃতীয় ম্যাচে আবারও ১১৫ রানের ইনিংস। কী আগুনে পারফরম্যান্স!

তিন ম্যাচে এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর চতুর্থ ম্যাচে সেই ব্যাটসম্যানকে কি ওপেনিং থেকে সরিয়ে দেওয়ার উপায় আছে? এটা যে মহা অন্যায় হয়ে যাবে। তাই তামিমের যোগ্য সঙ্গী বোধ হয় ইমরুলই!

জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের শেষ ম্যাচে ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু এই সুযোগটা নষ্ট করেননি। খেলেছেন ১১৭ রানের ইনিংস। বাইশগজে গিয়ে সাইক্লোন তুলেছিলেন। মাত্র ৯২ বলে খেলেছেন এই মারকাটারি ইনিংস। তার ওই ঝড়ো ইনিংসে ছিল ছয় ছয়টি বিশাল ছক্কার মার। গেইল, ডি-ভিলিয়ার্সদের মতো একের পর এক বল আছড়ে ফেলেছেন গ্যালারিতে। ওই ম্যাচে প্রথম বলেই লিটন আউট হওয়ার পর একজন পারফেক্ট ওপেনারের মতো ঝড়ো ব্যাটিং করেছেন সৌম্য। টি-২০র এই যুগে এমন একজন ব্যাটসম্যানকে ওপেনার হিসেবেই দলের বেশি প্রয়োজন।

শুধু তাই নয়, একদিন আগে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও ৮৩ বলে ১০৩ রানের হার না-মানা ইনিংস খেলেছেন সৌম্য। সেটাও ওপেনিংয়ে নেমে নয়, খেলেছেন ওয়ান ডাউনে। তবে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তার শেষ ম্যাচটির কথা দর্শকের মনে গেঁথে গেছে। তাই হয়তো ওয়ান ডাউনেই সৌম্যকে চিন্তা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু সাতক্ষীরার এই তারকা ব্যাটসম্যান ওপেনিংয়ে খেলার জন্যও জোর দাবিদার। এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে লিটন কুমার দাসের খেলা ১২১ রানের ইনিংসটি ছিল দেখার মতো। দিনাজপুরের এই ব্যাটসম্যান যে কতটা সাহসী তা ভারতের তারকা বোলারদের নাকাচি চুবানি খাইয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন। ওই জাদুকরী ইনিংসের জন্য বিশ্ব মিডিয়ায় প্রশংসিত হয়েছিলেন লিটন। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও রয়েছে তার দুর্দান্ত একটি ইনিংস। ৭৭ বলে ৮৩ রানের স্কোরটিও ছিল দেখার মতো। শেষ চার ম্যাচে একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়েনিংয়ে খেলার দাবি জানাতেই পারেন লিটন!

ওয়ানেডে সিরিজে ওপেনিংয়ে খেলা নিয়ে যেন দারুণ সমস্যাই তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ দলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে কাকে রেখে কাকে দিয়ে ওপেন করাবে টিম ম্যানেজমেন্ট! যদিও বিসিবি সূত্রে পূর্বাভাস—ওয়ানডেতে তামিমের সঙ্গে ওপেন করবেন ইমরুল কায়েস! তিনে খেলবেন সৌম্য সরকার, মিডল অর্ডারে চলে যেতে হবে লিটন দাসকে। না, ঠিক মিডল অর্ডারে নয়, লোয়ার মিডল অর্ডারে!

তিনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে সৌম্যকেও। কেননা ইনজুরি থেকে ফিরেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। সাধারণত তিনিই খেলেন ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বর পজিশনে। কিন্তু সৌম্যর আগুনে ফর্মের কথা চিন্তা করে হয়তো ওয়ানডাউন পজিশনটি ছেড়ে দিতে হতে পারে সহঅধিনায়ককে। সে ক্ষেত্রে ব্যাটিং অর্ডারের পাঁচ ও ছয় নম্বরে তো দুই সিনিয়র মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ রয়েছেন। তাই লিটনের জন্য জায়গা ফাঁকা আছে কেবল মাত্র সাত নম্বরে।

ওপেনিংয়ে পারফর্ম করেও খেলতে হবে লোয়ার মিডল অর্ডারে— এটা লিটনের জন্য বেদনারই বটে! কিন্তু দলে পারফর্মারের সংখ্যা বেড়ে গেলে এমন মধুর সমস্যায় পড়তে হয় বৈকি। প্রতিটি দলই তো চায়, তাদের দলে এমন মধুর সমস্যা তৈরি হোক। এমন সমস্যাই ইঙ্গিত করে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে এখন দল হিসেবে এক পরাশক্তি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর