মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তবু তৃপ্ত নয় টাইগাররা

মেজবাহ্-উল-হক

তবু তৃপ্ত নয় টাইগাররা

মাশরাফির প্রিয় ভেন্যু মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম। আজই এ মাঠে ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে খেলতে পারেন তিনি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘টেস্টে স্পিন বিষে নীল করে দেওয়ার পর এবার প্রতিপক্ষকে পেস তা বে গুঁড়িয়ে দেওয়া।’ ‘প্রতিপক্ষকে ২০০ রানের আগেই আটকে দেওয়ার পর মাত্র ৩৫ ওভারেই জয় তুলে নেওয়া।’ ‘সদ্য ইনজুরি থেকে ফেরা তামিমের ক্যারিশম্যাটিক ক্যাচ, মিরাজ-লিটনের অসাধারণ ফিল্ডিং!’

তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বলার মতো কত ইতিবাচক ঘটনাই না ঘটেছে। টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার পর ওয়ানডে সিরিজও শুরু হলো উড়ন্তভাবে। এমন শুরুতেও তৃপ্ত নয় বাংলাদেশ।

আসলে ভালোর কোনো শেষ নেই! সাফল্যের মুকুটে যতই ‘পালক’ যুক্ত হোক না কেন তবু প্রতিনিয়ত ‘নতুন পালক’ যুক্ত করার আকাক্সক্ষা থাকবেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাত্র ১৯৫ রানে আটকে দেওয়াটা সুখের হলেও এক ম্যাচে ‘হাফ ডজন’ আউটের সুযোগ নষ্ট করাটা তো দোষেরই! বাংলাদেশের স্কোয়াডে থাকা প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই ফর্মের তুঙ্গে, তারপরও কেন ১৯৬ রানের টার্গেটে পৌঁছাতে হারাতে হয়েছে ৫ উইকেট?

যদিও জয়ের পর ছোট ছোট ভুলভ্রান্তি চোখে পড়ে না, কিন্তু মাশরাফির দৃষ্টি এড়ায়নি এই বিষয়গুলো। আজ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামার আগে নিজেদের ছোটখাটো ভ্রান্তিগুলো নিয়েই আলোচনা করেছেন ক্যাপ্টেন। ক্রিকেটে খেলোয়াড়দের ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ’ একটা বড় বিষয়। কোনো দলের ক্রিকেটাররা কতটা আÍবিশ্বাসী সেটা তাদের শরীরী ভাষাতেই পরিষ্কার ফুটে ওঠে। প্রথম ম্যাচে একের পর এক আউটের সুযোগ নষ্ট হয়েছে তবুও ভেঙে পড়েননি বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। বরং ঠাণ্ডা মাথায় নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন।

সাকিবের বলে ক্যারিবীয় ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান অধিনায়ক রোভমান পাওয়েলের ক্যাচ মিস করলেন রুবেল হোসেন। এমন সময় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের রাগ হওয়ার কথা, নিদেনপক্ষে হতাশা প্রকাশ করার কথা! কিন্তু সাকিব উল্টো পাওয়েলের কাঁধ ঝুঁকিয়ে হাস্যরস করলেন! বিষয়টা এমন যে, ‘একটা সুযোগ নষ্ট হয়েছে তো কী হয়েছে, সামনে আরও সুযোগ আছে।’ এমন খ  চিত্রগুলো আÍবিশ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ। আজ জিতলেই সিরিজ নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। সেই লক্ষ্যেই মাঠে নামছেন টাইগাররা। কিন্তু এই সিরিজ জয়ের অন্তরালে আছে আরও বড় টার্গেট। সেটি বিশ্বকাপ ২০১৯। হাতে খুব বেশি সময় নেই- মাত্র ছয় মাস! তাই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই কম্বিনেশন ঠিক করছে বাংলাদেশ। এ কারণেই ফর্মে থাকা কোনো ব্যাটসম্যানকে বাদ দিতে চাননি কোচ। তাই প্রথম ওয়ানডেতে খেলানো হয়েছে এক সঙ্গে চার ওপেনারকে। ম্যাচে তামিমের সঙ্গে ওপেন করেছেন লিটন দাস। আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েস খেলেছেন তিনে। কিন্তু সৌম্য সরকারকে খেলানো হয়েছে ছয়ে। চার ওপেনার খেলানোর ব্যাখ্যাও পরিষ্কার, একমাত্র তামিম ছাড়া বাকি তিনজনের বিভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং করার অভিজ্ঞতা আছে। সৌম্য হাতে ভয়ঙ্কর মার আছে বলেই তাকে অনায়াসে খেলানো যায় লোয়ার অর্ডারেও। আজকের ম্যাচেও ব্যাটিং অর্ডার সম্ভবত একই রকম থাকছে। তবে ফর্মে থাকার পরও মোহাম্মদ মিথুনের জায়গা হয়নি একাদশে। সে কারণে টাইগার দলপতি দুঃখও প্রকাশ করেছেন। তবে মিথুন নজরে আছেন বলেও জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে মিথুন যাতে মনঃক্ষুণœ না হন, সে কারণে তার সঙ্গে কথাও বলে নিয়েছেন মাশরাফি। ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হচ্ছে মিডল অর্ডার। সেখানে রয়েছেন তিন সিনিয়র সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। বাংলাদেশের বোলিং কম্বিনেশনও চমৎকার। ফর্মের তুঙ্গে থাকা দুই স্পিনার সাকিব ও মিরাজ। সেই সঙ্গে পেস ত্রয়ী মাশরাফি-মুস্তাফিজ-রুবেল। যদিও আগের ম্যাচে রান একটু বেশি দিয়েছেন রুবেল। তবে তার অভিজ্ঞতাই এগিয়ে রাখছে একাদশে সুযোগ পেতে। এছাড়া পার্টটাইম স্পিনার হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং মিডিয়াম পেসার সৌম্য তো রয়েছেনই। যখন নিয়মিত বোলারদের কেউ সুবিধা করতে পারবেন না তখনই তাদের কাজে লাগাবেন অধিনায়ক।

প্রথম ম্যাচে পার্টটাইম বোলারদের প্রয়োজনই হয়নি। নিয়মিত বোলারই নাকাল করে ছেড়েছেন ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইন আপকে। বোলারদের দাপটের পর ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা হয়ে গিয়েছিল একবারে সহজ। ম্যাচে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। তবে প্রথম ম্যাচে উড়ন্ত জয়ের পরও তৃপ্ত নয় বাংলাদেশ। বরং টাইগারদের জয়ের ক্ষুধা আরও বেড়ে গেছে। তা ছাড়া চিরন্তন সত্য তো এটাই যে, যতক্ষণ ‘পাওয়ার’ আকাক্সক্ষা থাকে ততক্ষণ ‘পাওয়ার’ স্বাদও থাকে। কোনো কিছু পাওয়া হলে গেলে তখন তার স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এক একটি জয়ে লাল-সবুজরা যেমন প্রাপ্তির ভাণ্ডারে প্রতিনিয়ত হিরে- মণিমুক্তা যুক্ত করছে, তেমনি নতুন করে ক্রিকেটের স্বাদ আস্বাদনে ব্যাকুল হয়ে উঠছে। দিন দিন যেন ক্ষুধা বেড়েই চলেছে মাশরাফিদের। আজ  মিরপুরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সামনে পাবে ক্ষুধার্ত বাংলাদেশকে। আজই  যে সিরিজ নিশ্চিত করতে চায় টাইগাররা।

আরেকটি কারণে আজকের ম্যাচটি মহাগুরুত্বপূর্ণ, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও সম্ভবত ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এটিই মাশরাফির শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে। এমন ম্যাচে কে হারতে চায় বলুন?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর