বৃহস্পতিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সিলেটের অভিষেকেই ফাইনাল!

সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ

মেজবাহ্-উল-হক

সিলেটের অভিষেকেই ফাইনাল!

দৃষ্টিনন্দন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালে, জিম্বাবুয়ে বনাম আয়ারল্যান্ড টি-২০ ম্যাচ দিয়ে। এই ভেন্যুতে ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাট টেস্টের যাত্রা শুরু গত নভেম্বরে, বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে ম্যাচ দিয়ে। এবার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রথম ওয়ানডে। সিলেট স্টেডিয়ামের অভিষেক ম্যাচটি বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ‘অঘোষিত’ ফাইনাল। মাশরাফিরা চেয়েছিলেন ঢাকাতেই ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করতে। তারপর সিলেটে গিয়ে খেলবেন উৎসবের আমেজে। কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি! বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ক্যারিবীয়দের উড়িয়ে দিলেও রুদ্ধশ্বাস দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে যায়। একের পর এক ভুলে কারণেই ম্যাচটি জিততে পারেননি মাশরাফিরা। যেখানে একটি ক্যাচই ক্রিকেটে ম্যাচ মিসের জন্য যথেষ্ট সেখানে এই ম্যাচে একের পর এক ক্যাচ ফেলেছেন টাইগার ফিল্ডাররা। রান আউটের সহজ সুযোগ নষ্ট হয়েছে। ব্যাটিংয়ে স্লোক ওভারে ঠিকমতো রান তুলতে পারেনি স্বাগতিকরা। তবে ভুলের সমাহারের পরেও শেষ পর্যন্ত সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে শেষ মুহূর্তে বোলাররা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। অনেক ভুলের মাশুল গুনতে হয়েছে ম্যাচে হেরে গিয়ে।

শেষ ৫ ওভারে এসেছে মাত্র ২৬ রান। অথচ এই সময় ৫০-৬০ রান আসার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পারেননি। অবশ্য এই ম্যাচে মিডল অর্ডারে যেখানে মুশফিক-সাকিবরা ব্যাটিং করেছেন, সেই ধারা অব্যাহত থাকলে রান তিনশই হয়ে যেত! সেখানে হয়েছিল মাত্র ২৫৫ রান। তারপরও ম্যাচে জেতা সম্ভব ছিল। কিন্তু ফিল্ডাররা হাস্যকরভাবে একের পর এক ক্যাচ মিস করায় তা আর হয়নি। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে অনুশীলনে সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করা হয় ফিল্ডিংয়ের জন্য। দ্বিতীয় ম্যাচের আগের দিন সারাক্ষণ ফিল্ডারদের ক্যাচ প্রাকটিস করানো হয়েছিল। কিন্তু মূল লড়াইয়ে গিয়ে তবুও মিসের সমাহার। স্লোক ওভারে এখনো বাংলাদেশের পেস বোলিং কার্যকর হচ্ছে না। এই স্লোক ওভারে বোলিং ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশ যে কত ম্যাচ হেরেছে তার শেষ নেই। সব শেষ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধেও প্রায় জেতা ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে যায়। তার আগে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদাহাস ত্রি-দেশীয় টি-২০ সিরিজের ফাইনালেও স্লোক ওভারে পেসারদের ব্যর্থতায় হেরেছে বাংলাদেশ।

এই ম্যাচে জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ২২ রান। কিন্তু ৪৯তম ওভারে বল করতে গিয়ে দলের সেরা পেসার মুস্তাফিজুর রহমান দিয়ে বসেন ১৬ রান। এরপর ম্যাচ চলে যায় ক্যারিবীয়দের হাতে। ম্যাচে রান পেয়েছেন চার সিনিয়র ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনজনেরই হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু কোনো সেঞ্চুরি নেই। ক্রিকেটে একটি চরম সত্য হচ্ছে বাইশগজে যে ব্যাটসম্যান যেদিন সেট হয়ে যান, তার দায়িত্ব তত বেড়ে যায়! পঁচিশ-ত্রিশ হয়ে গেলে, হাফ সেঞ্চুরির দিলে লক্ষ্য এবং হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গেলে সেঞ্চুরি! কিন্তু চার সিনিয়র কিভাবে এই চরম সত্যটি ভুলে গেলেন। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাই হোপ একাই হার না মানা ১৪৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ বের করে নিয়ে চলে গেলেন। অন্য ব্যাটসম্যানদের কেউ যেখানে ত্রিশও করতে পারেননি সেখানে হোপ একাই ম্যাচ শেষ করে দিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের চার সিনিয়র ব্যাটসম্যান উইকেটে সেট হওয়ার পরও পারলেন না। ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোনো বিভাগেই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে নয়! তারা কেবল একটি জায়গাতেই অপ্রতিরোধ্য তা হচ্ছে হার্ডহিটিং ব্যাটিংয়ে। ক্রিকেট বুদ্ধির খেলা, শরীরের জোর দিয়ে খুব বেশি কিছু করা যায় নাÑখাটাতে হয় মাথা। টেস্ট সিরিজের দুই ম্যাচ এবং ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সে কাজটি সুচারুভাবেই করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে পারেননি মাশরাফিরা। তবে এই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে সিরিজে তৃতীয় ওয়ানডেতে খেলতে নামবে টাইগাররা। সিলেটের নজরকাড়া এই ক্রিকেট ভেন্যুতে টেস্ট অভিষেক স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি স্বাগতিকরা।

 হেরেছিল জিম্বাবুয়ের কাছে। কিন্তু ওয়ানডে অভিষেক মুহূর্তটিকে রাঙিয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মাশরাফিরা।

সর্বশেষ খবর