শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
অলিখিত ফাইনাল আজ

সিলেট রাঙাতে মরিয়া টাইগাররা

মেজবাহ্-উল-হক

সিলেট রাঙাতে মরিয়া টাইগাররা

আগের ম্যাচে বোলিংয়ে জ্বলে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। আজ শেষ ওয়ানডেতে সেই ব্যর্থতার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সে লক্ষ্যে অনুশীলন করছেন মুস্তাফিজ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘পান থেকে চুন খসলেই...’ -লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকারের ওপর যেন হামলে পড়ে একের পর এক স্ট্যাটাস দেওয়া শুরু হয়ে যায় স্যোশাল মিডিয়ায়! -কত যে বিরূপ মন্তব্য! কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচেই দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়াম। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই ক্যারিবীয় গতি দানব ওশেন থমাসের বলে লিটন দাসের ডান পায়ের অ্যাঙ্কেলে আঘাত লাগে। তারপরও দৌঁড়ে রান সম্পন্ন করেন। কিন্তু উইকেটের অপরপ্রান্তে যাওয়ার পরই ঘাসের ওপর লুটিয়ে পড়েন লিটন।

অবস্থা সুবিধের নয় দেখে হাতের ইশারায় স্ট্রেচার নিয়ে যাওয়ার কথা জানালেন সঙ্গী তামিম ইকবাল। অবশ্য প্রথমে লিটন দুই জনের কাঁধে ভর করে মাঠ থেকে বের হয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারলেন না। স্ট্রেচারেই উঠতে হলো তাকে।

ফুটবল মাঠ থেকে স্ট্রেচারে করে খেলোয়াড় বাইরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য হর-হামেশায় দেখা যায়। কিন্তু ক্রিকেটে এমন ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। মারাÍক আহত না হলে এমন দৃশ্য সচরাচর চোখেও পড়ে না।

হয়তো লিটনও বুঝতে পেরেছিলেন- তার অবস্থা খারাপ! এই সিরিজে তো নয়ই, বিশ্বকাপ মিশনই শেষ হয়ে যায় কিনা! নানা শঙ্কায় বিমর্ষ চিত্রে স্ট্রেচারে মাঠ থেকে বের হচ্ছিলেন বাংলাদেশের এই ওপেনার। ২৫ হাজার দর্শকে ঠাসা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তখন যেন পিনপতন নীরবতা!

দ্রুত লিটনকে নেওয়া হলো স্থানীয় এক ক্লিনিকে। এদিকে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে লিটন-বন্দনা এবং প্রার্থনা! গ্যালারিতে কেউ কেউ কেঁদেও ফেললেন। একদিন আগেও যারা তার সমালোচনায় মুখর ছিলেন হয়তো সেই দর্শকদেরই মনে পড়ে গিয়েছিল এশিয়া কাপের ফাইনালে ১২১ রানের সেই মহাকাব্যিক ইনিংসটির কথা! বিশ্বকাপ মাতাতে হলে যে ইংল্যান্ডের বাউন্সি উইকেটে তামিমের সঙ্গী হিসেবে লিটনের বড় বেশি প্রয়োজন দলে!

নানা ভাবনার মাঝেই যখন লিটন আবার বাইশগজে ফিরলেন, তখন শেরেবাংলার গ্যালারিতে সে কী উল্লাস। লিটন, লিটন স্লোগানে প্রকম্পিত হলো পুরো স্টেডিয়াম। আসলে এটাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের আসল চিত্র। ক্ষণিকের তরে সমর্থকদের সাম্প্রদায়িক মনে হলেও তারা যে অসাম্প্রদায়িক তার প্রমাণ মেলে মাঝে মধ্যেই।

কয়েক মাস আগে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ হারের পর সাকিবকে ‘অপরাধী’ বানিয়ে এক গানের ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। তারপর এশিয়া কাপে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার যখন দেশের কথা চিন্তা করে ইনজুরি নিয়েও খেলে প্রায় বিপদ ডেকে এনেছিলেন তখন তার প্রতি মমত্ববোধের শেষ ছিল না। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে তামিমকে। চাচা আকরাম খান বোর্ডের পরিচালক হওয়ায় মাঝে মধ্যেই তাকে নিয়ে কথা শুনতে হয়। কিন্তু এশিয়া কাপে এক হাতে ব্যাটিং করে সমর্থকদের কাছে ‘জাতীয় বীর’ এর মর্যাদা পেয়ে যান তামিম!

আবেগপ্রবণ এই ক্রিকেট পাগল জাতির মনের ভাষাটা খুব ভালো করে বোঝেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি। এদেশের মানুষ রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে নানাভাবে নানা কারণে বিভক্ত হতে পারে কিন্তু ক্রিকেটে সবাই এক ও অভিন্ন। এই একাÍতার বন্ধনকে আরও দৃঢ় করতেই আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মাঠে নামছে মাশরাফির বাংলাদেশ। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভয়ঙ্কর দল। ক্রিকেটের সবচেয়ে পাগলাটে দলও বটে। এক একজন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার জন্য একজনই যথেষ্ট। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই এক সাই হোপ একাই অপরাজিত ১৪৬ রানের ইনিংস খেলে জয় তুলে নেন। অথচ তাদের অন্য ব্যাটসম্যানদের কেউ ত্রিশও করতে পারেননি।

আজ তাই সতর্ক হয়েই মাঠে নামছে টাইগাররা। সিরিজে এখন ১-১ সমতা। এই ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে আরও শাণিত হয়েই খেলবেন স্টিভ রোডসের শিষ্যরা। আগের ম্যাচে বাংলাদেশ স্লোক ওভারে ভালো ব্যাটিং করতে পারেননি, বেশ কয়েকটি ক্যাচ মিস হয়েছে, স্লোক ওভারের বোলিংয়েও নজর কাড়তে পারেননি টাইগার পেসাররা।  ছোট ছোট ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আজ নবোদ্যোমে সিলেটে খেলতে নামছে টাইগাররা।

কয়েক মাস আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফরে টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর ফ্লোরিডায় টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেছিলেন সাকিবরা। নেপথ্যে বড় কারণ ছিল গ্যালারির হাজারও বাঙালি দর্শকের উচ্ছ্বাস। আজ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ওয়ানডে অভিষেক। স্মরণীয় ম্যাচে জয় দিয়ে অবিস্মরণীয় করতে চাইছে বাংলাদেশ। যদিও টেস্ট অভিষেকে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছিল টাইগাররা। সিলেটের দর্শকরা ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল। এবার ক্রিকেট পাগল এই ভক্তদের জন্যই আজ জিতে সিলেট রাঙিয়ে দিতে মরিয়া বাংলাদেশ!

একে তো বছরের শেষ ওয়ানডে। হয়তো ঘরের মাঠে টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফির শেষ ম্যাচ। তাছাড়া এবারই প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ইউরোপে যাবে লাল-সবুজরা। তার আগে দেশের মাটিতে টাইগারদের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। সবার একটাই চাওয়া-সিরিজ জয়ের পাশাপাশি জয় দিয়েই শুরু হোক টিম-টাইগার্সের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি মিশন!

 

সর্বশেষ খবর