শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সৌম্যের সাইক্লোন তামিমের তাণ্ডব

মেজবাহ্-উল-হক

সৌম্যের সাইক্লোন তামিমের তাণ্ডব

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দল - বাংলাদেশ প্রতিদিন

মারলন স্যামুয়েলসের বল লং অন দিয়ে সোজা গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেন সৌম্য সরকার। ৯০ মিটার লম্বা এক ছক্কা! সিলেটবাসী হয়তো তখন আন্দাজ করতে পারেননি সামনে আরও কী অপেক্ষা করছে?

এরপর ফ্যাবিয়ান অ্যান্থনি অ্যালেনের এক ওভারের দুই ছক্কায় সৌম্য দুই-দুইবার বল আছড়ে ফেললেন গ্যালারিতে। ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ৯৫ মিটার এবং কাউকর্নার দিয়ে ৯৭ মিটার! ৮১ বলে ৮০ রানের ক্যারিশম্যাটিক এক ইনিংস। সৌম্যর সাইক্লোনের দিনে অপরাজিত ৮১ রানের ইনিংস খেলেছেন তামিম ইকবাল। ৬৯ বল আগেই ৮ উইকেটে জিতে যায় বাংলাদেশ। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করে মাশরাফিরা।

সৌম্যর পাঁচ ছক্কার সাইক্লোন ব্যাটিং যদি ম্যাচের হাইলাইটস হয় তবে তামিমের ইনিংসটি টাইগার-ক্রিকেটের নির্ভরতার প্রতিচ্ছবি! আগের ম্যাচেও দুর্দান্ত এক হাফ সেঞ্চুরি করেছেন এই ড্যাসিং ওপেনার। তামিম ইকবাল যে ফর্মে থাকতে ইনজুরি আক্রান্ত হয়েছিলেন, ঠিক সে ফর্ম দিয়েই যেন ফিরলেন এই সিরিজে। প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে না পারলেও উড়ন্ত এক ক্যাচ নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মন কেড়েছিলেন। তারপর দুই ম্যাচেই দুই হাফ সেঞ্চুরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সামনে পেলে যেন একটু বেশি উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন তামিম। চলতি বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচে ১৪৩.৫ গড়ে করেছিলেন ২৮৭ রান। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে একটি হাফ সেঞ্চুরি।

ঘরোয়া লিগ, প্রস্তুতি ম্যাচ এবং জাতীয় দল সব জায়গায়ই দারুণ ছন্দে ছিলেন সৌম্য। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে সিরিজের শেষ ম্যাচে ওয়ানডাউনে সুযোগ পেয়েই ১১৭ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। তারপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে তামিম ফেরায় প্রথম দুই ম্যাচে টপ অর্ডারেই জায়গা হয়নি বাম হাতি এই মারকুটে ব্যাটসম্যানের। অথচ ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে ওয়ানডাউনে অপরাজিত সেঞ্চুরি ছিল তার। এরপরও ওপেনিংয়ে তামিম-লিটন এবং ওয়ানডাউনে ইমরুলকে জায়গা করে দিতে সৌম্যকে নেমে যেতে হয়েছিল ব্যাটিং অর্ডারের ৬-৭ নম্বরে। পর পর দুই ম্যাচে রান না পাওয়ায় সিলেটে সিরিজের ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে জায়গা হয়নি ইমরুলের। এই সুযোগে ওয়ানডাউনে সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করে দিলেন সৌম্য। ৮০ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে তার ৫ ছক্কা ছাড়াও ৫টি বাউন্ডারির মার। সৌম্য যতক্ষণ ব্যাটিং করেছেন, আতঙ্কে ছিলেন ক্যারিবীয় বোলাররা। ছক্কা না থাকলেও তামিমের ইনিংসে ছিল ৯টি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি। কালকের ম্যাচে জাদু দেখিয়েছেন মেহেদী মিরাজ তার স্পিনে। মাত্র ২৯ রানেই নিয়েছেন ৪ উইকেট। আবারও ওয়েষ্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান শিমরন হেটমায়ারকে আউট করেছেন তিনি। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে মিলে এ পর্যন্ত সাত ইনিংসের মধ্যে এই ক্যারিবীয় তারকা ছয়বারই মিরাজের স্পিনে ধরাশায়ী হয়েছেন। গতকাল তো হেটমায়ারকে রানের খাতাই খুলতে দেননি মিরাজ। এ ছাড়া এই ঘূর্ণি জাদুকরের বাকি তিন শিকার হচ্ছেন ওপেনার চন্দ্রপল হেমরাজ, ওয়ানডাউনে নামা ড্যারেন ব্রাভো এবং ক্যারিবীয় দলপতি রোভম্যান পাওয়েল। শুধু মিরাজ নয়, সিলেটে কাল বাংলাদেশের বাকি পাঁচ বোলারও দারুণ বোলিং করেছেন। ক্যাপ্টেন মাশরাফি ৩৪ রানে নিয়েছেন দুই উইকেট। সাকিব আল হাসানও দুই উইকেট নিয়েছেন, ৪০ রান দিয়ে। উইকেট না পেলেও দারুণ বোলিং করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টার ১০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৩৩ রান। রুবেল হোসেনের জায়গার কাল একাদশে সুযোগ পেয়েছেন অলরাউন্ডার সাইফুদ্দিন। ৩৮ রানে নিয়েছেন এক উইকেট। অন্য বোলাররাও ছিলেন দারুণ কিপটে। সবাই ওভারপ্রতি ৫-এর কম রান দিয়েছেন। বোলারদের দাপুটে পারফরম্যান্সে কাল উইন্ডিজ ১৯৮ রানের বেশি করতে পারেনি। উইন্ডিজের এই ইনিংসও ওয়ানম্যান শো! আগের ম্যাচে ১৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা ক্যারিবীয় ওপেনার সাই হোপ এ ম্যাচেও খেলেছেন হার না মানা ১০৮ রানের ইনিংস। তারপরও ম্যাচে তার চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সৌম্য-তামিমকে নিয়ে। ইতিহাসে পরাজিত বীরের মূল্য কোথায়!

বাংলাদেশ দলে এবার চার ওপেনার নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছিল। প্রথম দুই ম্যাচের একাদশে চার ওপেনারকে খেলানো হলেও গতকাল একজনকে (ইমরুল) বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তবে বাকি তিন ওপেনার তামিম, সৌম্য ও লিটন দাসই তো ম্যাচ শেষ করে দিয়েছেন (মুশফিকের ১৬ রান ছাড়া)। যদিও লিটন করেছেন মাত্র ২৩ রান। তবে তামিমের সঙ্গে তার ওপেনিং জুটিতে এসেছে ৪৫ রান। এরপর তামিমের সঙ্গে সৌম্যর ১৩১ রানের জুটিতে ৩৮.৩ ওভারেই জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্ট অভিষেকে বাংলাদেশ হেরেছিল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। সেই ভেন্যুতেই এবার মেহেদী মিরাজের ঘূর্ণি জাদু এবং সৌম্যর সাইক্লোন ও তামিমের তা বে ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে ওয়ানডে অভিষেক রাঙিয়ে রাখলেন টাইগাররা।

সর্বশেষ খবর