মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

টাইগারদের দুঃস্বপ্নের এক ম্যাচ

মেজবাহ্-উল-হক

টাইগারদের দুঃস্বপ্নের এক ম্যাচ

এমন ম্যাচের কথা ভুলে থাকতে চাইবেন না ক্রিকেটাররা! দর্শকরাও মনে রাখতে চাইবেন না হয়তো! ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ১২৯ রানে অলআউট। তারপর মাত্র ১০ ওভারেই খেলা শেষ করে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হার। যে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুই দিন আগেই ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে ক্যারিবীয়দের উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ, সেই ভেন্যুতেই কিনা কাল প্রথম টি-২০তে দুঃস্বপ্ন দেখল স্বাগতিকরা।

তিন ওপেনার তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও সৌম্য সরকারের ব্যাটেই শেষ ওয়ানডে জিতেছিল লাল-সবুজরা। গতকাল তিনজনের কেউ ডাবল ফিগারেই পৌঁছাতে পারেননি। টপ অর্ডারে ব্যর্থতার পর মিডল অর্ডার-লোয়ার অর্ডারও যাচ্ছেতাই ব্যাটিং করেছেন। একমাত্র সাকিব আল হাসান ছাড়া কোনো ব্যাটসম্যান ক্যারিবীয় বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি। ক্যারিবীয় পেসার শেলডন কটরেল একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট।

গতকাল ক্যারিবীয় বোলারদের চেয়েও যেন বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন তাদের ব্যাটসম্যানেরা। শেষ দুই ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করা সাই হোপ টি-২০তেও ঝড় তুলেছিলেন। মাত্র ২৩ বলে করেছেন ৫৫ রান। ৩টি চারের সঙ্গে ৬টি বিশাল ছক্কার মার। এ ছাড়া কেমো পল ১৪ বলে খেলেছেন অপরাজিত ২৮ রানের ইনিংস। অপরাজিত ২৩ রান করেছেন নিকোলাস পুরান।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সাকিব, মাহমুদুল্লাহ ছাড়া আর কেউ সুবিধা করতে পারেননি। ওয়ানডের তারকা বোলার মেহেদী হাসান মিরাজ মাত্র ২ ওভারে দিয়েছেন ৩৭ রান। আবু হায়দার রনি, মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন তিন পেসার ৩ ওভারে দিয়েছেন মোট ৪৩ রান। ওয়ানডে সিরিজ হারার পর ক্যারিবীয়রা যেন টি-২০তে জয়ের জন্য ভিশন ক্ষুধার্ত ছিল। প্রথম ম্যাচে তাই বোলারদের পর উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানেরাও ঝড় তুলেছিলেন।

লক্ষ্য ছিল মাত্র ১৩০ রান। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের যেন তর সইছিল না। তাই তো ওভারপ্রতি ১২ করে রান করে ৫৫ বল আগেই খেলা শেষ করে দেন। গতকাল পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারেই ৯১ রান করেছিল উইন্ডিজ। দলীয় হাফ সেঞ্চুরি হয়েছিল মাত্র ১৯ বলে। তবে সেঞ্চুরি হয়ে ৪৯ বলে। সাই হোপ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র ১৬ বলে। টি-২০ ইতিহাসে টাইগার বোলারদের এমন ঝড়ের কবলে পড়তে হয়েছিল কিনা সন্দেহ!

বাংলাদেশের বোলারদের নাস্তানাবুদ হওয়ার দিনে উল্টো দাপট দেখিয়েছেন ক্যারিবীয় বোলাররা। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একটু যা ঝলক দেখাতে পেরেছেন সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ৪৩ বলে খেলেছেন ৬১ রানের ইনিংস। ৮টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা। বাংলাদেশের ইনিংসেও সব মিলে ছক্কা এ ২টি। অথচ ক্যারিবীয়রা তাদের ১০.৫ ওভারের ব্যাটিং করেই ছক্কা হাঁকিয়েছেন ১০টি। সাকিবের ইনিংসটির কথা বাদ দিলে এ ম্যাচে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বলার মতো আর কিছুই থাকে না।

জয়ে আনন্দ থাকে আর হারে থাকে লজ্জা। ম্যাচ শেষে সে কথাই বলেছেন টাইগার ক্যাপ্টেন সাকিব, ‘টস ছাড়া আর যা করেছি আমাদের সবকিছুই ভুল হয়েছে। আমরা ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি, ভালো বোলিং করতে পারিনি। এ উইকেটে কমপক্ষে ১৭৫ রান হওয়া উচিত ছিল। আমাদের কোনো কিছুই ক্লিক করেনি। তবে এ ম্যাচ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।’

সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এই দলের বিরুদ্ধেই তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। অবশ্য ওই সিরিজেও ক্যারিবীয় দ্বীপে (সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস) প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। তখনো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর টি-২০তে নাকাল হতে হয়েছিল। এরপর আমেরিকার ফ্লোরিডায় টানা দুই ম্যাচে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেছিল টাইগাররা। তাই সিলেটে হারলেও ঢাকায় দুই ম্যাচ আছে। এখনো সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। তা ছাড়া ওয়ানডে সিরিজেও বাংলাদেশ একইভাবে জিতেছে প্রথম ম্যাচে জয়, দ্বিতীয়টিতে হার ও তৃতীয়টি জিতে সিরিজ নিশ্চিত। তবে কি এবার টি-২০তে পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে? এখন সিলেটকে টাইগাররা সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস ভাবলেই হয়, আর ঢাকা তো সাকিবদের জন্য ফ্লোরিডা হতেই পারে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ১২৯/১০ (১৯ ওভার) ওয়েস্টইন্ডিজ : ১৩০/২ (১০.৫ ওভার)

সর্বশেষ খবর