বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

২০২২ সালে হকির বিশ্বকাপে বাংলাদেশ!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

২০২২ সালে হকির বিশ্বকাপে বাংলাদেশ!

মামুনুর রহমান চয়ন

ক্রিকেটের আগেই হকিতে বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু পরিকল্পনা না থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। বেশ আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বললেন দেশের তারকা খেলোয়াড় মো. মামুনুর রহমান চয়ন। ২০১১ থেকে ২০১৬ টানা পাঁচ বছর বিভিন্ন টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। পারফরম্যান্সই তাকে তারকার খ্যাতি এনে দিয়েছে। চয়নের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ভারতে অনুষ্ঠিত শেষ হওয়া হকির বিশ্বকাপ নিয়ে। এবারের আসরে নতুন চ্যাম্পিয়নের সন্ধান মিলেছে। ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসকে শুট আউটে হারিয়ে হকির নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে বেলজিয়াম। অথচ বিশ্বকাপের ইতিহাসে এবারই প্রথম ফাইনাল খেলে ইউরোপের দেশটি।

গত অলিম্পিক গেমসেও রুপা জিতেছিল বেলজিয়াম। ফাইনালে তারা আর্জেন্টিনার কাছে হেরে যায়। জার্মানি, নেদারল্যান্ডস আগেই হকির পরাশক্তি খ্যাতি পেয়েছে। নতুন উত্থান হলো বেলজিয়ামের। এতেই প্রমাণ মিলে ফুটবলের মতো হকিও ইউরোপের দখলে। অবশ্য বেলজিয়াম হঠাৎ করে এ অবস্থানে আসেনি। দীর্ঘ পরিশ্রম ও পরিকল্পনায় বিশ্বসেরা হতে পেরেছে।

বিষয়টি নিয়েই কথা হচ্ছিল চয়নের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনায় অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে তার বড় প্রমাণ বেলজিয়াম। ওদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির জাতীয় দল রয়েছে। একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে তারা খেলোয়াড় সন্ধানে নেমেছে অনেক আগে থেকেই। বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে কোচ মিশেলের অবদানই বড় করে দেখছি। উনি অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটা শক্তিশালী দল গড়েছেন। ফুটবলের মতোই হকিতে ব্যস্ত বেলজিয়াম। টানা অনুশীলনের পাশাপাশি প্রচুর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। ঘরোয়া আসরকে সাজানো হয়েছে অন্য রূপে। কর্মকর্তারা মেধা দিয়ে পরিকল্পনা করেছেন বলে অসম্ভবকে সম্ভব করা গেছে।

বাংলাদেশ কি এমন পরিকল্পনা করে এগুতে পারে না। প্রশ্নটা শুনে কিছুটা নীরব হয়ে গেলেন চয়ন। এরপর আবেগ আপ্লুুত কণ্ঠে বললেন, ‘যে চীনকে আমরা ঘরে ও বিদেশের মাটিতে হারাই তারাই কিনা বিশ্বকাপ খেলছে! অথচ ক্রিকেটের আগে হকিতে বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা ছিল আমাদের।’ কেন হলো না? চয়ন বলেন, ‘কারণ একটাই হকিকে কখনো কেউ গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি। এক্ষেত্রে ফেডারেশন বা কর্মকর্তারা দায় এড়াতে পারবেন না। তারা সেভাবে হকিকে পরিচালিত করতে পারেনি।’ তাহলে কি ফুটবলের মতো হকিতে বিশ্বকাপ খেলাটা বাংলাদেশের স্বপ্নই বলা যায়?

চয়ন মাথা নাড়িয়ে বললেন, স্বপ্ন হবে কেন, বাংলাদেশ ২০২২ সালে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বিশ্বকাপ খেলার সামর্থ্য রাখে। কথাটি বলেই চয়ন নিজেই প্রশ্ন তুললেন, কি আমার এই কথা শুনে অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন মাত্র চার বছরে এই অসম্ভবকে কিভাবে রূপান্তরিত করা যায়। দেখেন এখানে সরকারের সব রকমের সহযোগিতা থাকতে হবে। খেলোয়াড়রা যেন কোনো রকমের সমস্যায় না পড়ে তার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ফেডারেশনকে নিতে হবে পরিকল্পনা। এশিয়া কাপ, এশিয়ান গেমস বা ওয়ার্ল্ড হকি লিগ ঘিরে সাজাতে হবে ছক।

চয়ন বলেন, ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়ার কথা বাদ দিলাম। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া যে ধরনের কর্মসূচি নেয় সেটাকে অনুসরণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক গেমস এনেই নামমাত্র প্রশিক্ষণের কথা বাদ দিয়ে ক্রিকেটের মতো জাতীয় দলের প্রস্তুতি সারা বছরই চালাতে হবে। খেলতে হবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ। এসব কর্মসূচির জন্য টার্ফের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বেলজিয়াম তো আর হুট করে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়নি। শুনলে অবাক হবেন তাদের টার্ফের সংখ্যা চারশর কম হবে না।

বাংলাদেশে এত টার্ফ বানানো কি সম্ভব? অবশ্যই না। তবে প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে টার্ফ বসানোটা জরুরি হয়ে পড়েছে। উদ্যোগ নিলেই প্রত্যেক বিভাগে টার্ফ বসানো সম্ভব। উদ্যোগ নিতে হবে ফেডারেশনকে। আমার বিশ্বাস অবশ্যই এক্ষেত্রে স্পন্সর পাওয়া যাবে। জাপান এক সময় আমাদের পেছনে থাকলেও এখন তারা এশিয়ান গেমসে চ্যাম্পিয়ন। যে ভারত হকিতে বড্ড পিছিয়ে গিয়েছিল তারাও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে নানা পরিকল্পনায়। ২০২২ সালেই বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলা সম্ভব। যদি সবকিছুই পরিকল্পনা করে এগুনো যায়। তা না হলে এই অবস্থান থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর