মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

শেখ হাসিনার হ্যাটট্রিক, ক্রীড়াঙ্গনে স্বস্তি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

শেখ হাসিনার হ্যাটট্রিক, ক্রীড়াঙ্গনে স্বস্তি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রীড়া পরিবারের লোক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাঠ কাঁপানো ফুটবলার ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী ওয়ান্ডারার্স ক্লাবকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। দেশের জনপ্রিয় ক্লাব ঢাকা আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামাল। শুধু তাই নয় ক্রিকেট ও বাস্কেটবল খেলে সুনাম কুড়ান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল। তার স্ত্রী সুলতানা কামাল ছিলেন দেশখ্যাত অ্যাথলেট।  শেখ জামালও নিয়মিত ফুটবল খেলতেন। এমন পরিবারে থেকে শেখ হাসিনা খেলাধুলাকে ভালোবাসবেন এটাই স্বাভাবিক। গত ১০ বছরের ক্রীড়াঙ্গনে যে অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটেছে তার পেছনে বড় অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই।

শত ব্যস্ততার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছুটে যান মাঠে। এমনকি ড্রেসিংরুমে গিয়ে তিনি খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা জোগান। খেলাধুলার মান বাড়াতে শেখ হাসিনা সহযোগিতা করে থাকেন। যখন যে ফেডারেশন তার সহযোগিতা চেয়েছে প্রধানমন্ত্রী না করেননি। ক্রিকেটে বিখ্যাত ধারাভাষ্যকাররা শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেছেন একজন প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলাকে এতটা ভালোবাসেন বা বোঝেন তা ভাবাই যায় না।

গত ১০ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অর্থাৎ মহাজোট সরকারের আমলে ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। যা অতীতের সব রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে। ক্রিকেট, ফুটবল, হকি এই বড় তিন খেলা ছাড়াও সাঁতার, শুটিং, আরচারি, ভলিবল, হ্যান্ডবল, ভারোত্তোলনসহ আরও খেলায় অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। পুরুষ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। এশিয়া কাপে তিনবার ফাইনাল, নিদহাস ট্রফিতে ফাইনাল খেলার কৃতিত্ব রয়েছে। এশিয়া কাপ ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম সোনা এসেছে ক্রিকেট থেকেই। মেয়েরা জিতেছে রুপা।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে মেয়েদের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের শিরোপা। ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে ফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সালমারা। মেয়েদের ফুটবলেও অবিশ্বাস্য সাফল্য এসেছে। পুরুষ ফুটবলে প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসে নক আউট পর্বে খেলার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দলীয় খেলা হ্যান্ডবল ও ভলিবলে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সাফল্য এসেছে। আরচারিতে ইসলামি সলিডারিটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।

সাউথ এশিয়ান গেমসে (এস এ গেমস)ও অভাবনীয় সাফল্য আসে। ২০১০ সালে রেকর্ডগড়া ১৭টি সোনা জয় করে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে এ গেমসে মেয়েদের সাঁতারে মাহফুজা খাতুন শিলা দুই ও ভারোত্তোলনে মাবিয়া আক্তার সীমান্ত একটি সোনা জয় করে বিরল রেকর্ড গড়েন। প্রধানমন্ত্রী শুধু উন্নয়ন নয়, ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকরা অসুস্থ হলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সাফল্যের কারণে ক্রীড়াবিদদের প্লট ও ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

১০ বছর হাসিনার নেতৃত্বে মহজোট সরকার ক্ষমতাকালে ক্রীড়াঙ্গনে উন্নয়ন ঘটেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো মহাজোট সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ে ক্রীড়াঙ্গনে স্বস্তি নেমে এসেছে। হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কিংবদন্তি খেলোয়াড় আবদুস সাদেক, বাফুফে সভাপতি কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান বলেছেন, ক্রীড়া উন্নয়নে ধারাবাহিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।

আবদুস সাদেক আবাহনীর ফুটবল ও হকি দলের প্রথম অধিনায়ক। বিশেষ করে হকিতে তার অবদান ভোলবার নয়। হকিতে জাতীয় দলের প্রথম অধিনায়ক এবং একমাত্র বাঙালি খেলোয়াড় হিসেবে হকিতে পাকিস্তান জাতীয় দলে খেলেছেন তিনি। বর্তমানে সাদেক হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। সাদেক জানালেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রীড়া পরিবারের সদস্য। স্বাভাবিকভাবেই খেলাধুলার প্রতি তার আলাদা টান থাকবেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ক্রীড়াঙ্গন এগিয়ে চলেছে। আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। এটা ক্রীড়াঙ্গনের জন্য খুবই খুশির খবর।’

সাদেক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় হকিতে ফ্লাডলাইট বসানো সম্ভব হয়েছে। ৩২ বছর পর ঢাকায় সফলভাবে এশিয়া কাপ আয়োজন করেছে। এশিয়া কাপ ও এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ ভালো খেলেছে। তবে এগিয়ে যেতে আরও উন্নয়ন জরুরি। বেলজিয়াম এমন একটা দেশ যার লোকসংখ্যা ঢাকার চেয়েও কম। অথচ এই ছোট দেশটিই এখন হকিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। ফুটবল ও হকিতে দুই খেলাতেই র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে তারা। এটাতো আর হুট করে হয়নি। অনেক পরিশ্রম ও পরিকল্পনা করে এগিয়েছে তারা’।

সাদেক বলেন, ‘হকিতে বিশ্বমানে যাওয়া সম্ভব। এর জন্য যেমন পরিকল্পনা দরকার তেমনি প্রয়োজন অর্থের। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম ও সাভার বিকেএসপিতে টার্ফ রয়েছে। অথচ টার্ফ ছাড়া হকি অচল। প্রতিটি জেলায় সম্ভব নয়, অন্তত প্রতিটি বিভাগে টার্ফ ও ফ্লাডলাইট বসানোটা জরুরি হয়ে পড়েছে। মেয়েরাও হকিতে এগিয়ে আসছে। অনেক পরিকল্পনা আছে আমাদের। বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে বসবো। আমার বিশ্বাস হকির উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। ১০ বছরের ক্রীড়াঙ্গন যতদূর এগিয়েছে আমি আশা করি সামনে আরও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।’

কাজী সালাউদ্দিন। বাংলাদেশ ফুটবলের উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। ফুটবল নয়, ক্রীড়াঙ্গনের প্রথম সুপার স্টার তিনি। জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কোচও হয়েছেন। গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশের ফুটবলে অভিভাবক সালাউদ্দিন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট নির্বাচনে জেতায় বাফুফে সভাপতি খুশি। তিনি বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুয়ার সব সময় খোলা থাকে। খেলাধুলার জন্য কখনো তিনি না শব্দটা উচ্চারণ করেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রীড়াপ্রেমিক বলেই গত ১০ বছরে ক্রীড়াঙ্গনে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। ফুটবলেও অগ্রগতি হয়েছে। মেয়েরা শিরোপা জিতেছে। এশিয়ান গেমস ইতিহাসে গ্রুপপর্ব পেরিয়ে প্রথমবার নক আউটপর্ব খেলেছে বাংলাদেশ। কিশোররা সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আয়োজন করা গেছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ।’

সালাউদ্দিন বলেন, ‘ফুটবলে যেকোনো প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছি তিনি তা না করেননি। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি ফুটবল মাঠে ছুটে আসেন। শুধু তাই নয় নিয়মিত ফোন করে প্রধানমন্ত্রী ফুটবলের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত ক্রীড়াপ্রেমিক বলেই তারই মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। ফুটবল উন্নয়নে আমরা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এতে দরকার ফ্যান্ড। এ ব্যাপারে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বসবো। আমার বিশ্বাস তিনি, সবধরনের সহযোগিতা করবেন।’

সালাউদ্দিন বলেন, ‘১০ বছরে ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। নির্বাচনে আবারও জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট। শেখ হাসিনা ইতিহাস গড়ে টানা তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। এটা নিঃসন্দেহে ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বড় প্রাপ্তি। ১০ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে আমার বিশ্বাস এই সাফল্য আরও বড় আকার ধারণ করবে।’

ক্রিকেটে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান। বাংলাদেশের প্রথম তারকা ক্রিকেটার তিনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট পুনরায় নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় রকিবুল খুশি। তিনি বলেন, ‘১০ বছরে ক্রীড়াঙ্গনে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। ক্রীড়াঙ্গনের জন্য শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। ক্রীড়াপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রী বলেই অধিকাংশ খেলাতেই সাফল্য আসছে।’

রকিবুল বলেন, ‘গত ১০ বছরে সাফল্য প্রমাণ করেছে ক্রীড়ার জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ও ক্রীড়াবান্ধব বাজেট দরকার। এতে ক্রীড়াঙ্গনের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে। শেখ হাসিনার কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলাধুলায় বাংলাদেশ আলাদা আসন করে নিয়েছে। এখন আর যৌথ নয় ক্রীড়াঙ্গনে দরকার আলাদা মন্ত্রণালয়। আমার বিশ্বাস নতুন সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা আমাদের সেই আশা পূরণ করবেন।’

 

সর্বশেষ খবর