মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নতুন বছর নতুন স্বপ্ন

মেজবাহ্-উল-হক

নতুন বছর নতুন স্বপ্ন

ক্রিকেটে দুর্দান্ত একটি বছর ছিল ২০১৮ সাল। টেস্ট ও টি-২০তে পারফরম্যান্স সাদামাটা হলেও ওয়ানডেতে দুর্দান্ত দাপট দেখিয়েছে টাইগাররা। ২০ ম্যাচের মধ্যে ১৩ ম্যাচে জিতেছিল মাশরাফি মর্তুজার দল। পছন্দের এই ফরম্যাট ঘিরেই নতুন বছরে (২০১৯ সালে) নতুন স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য এবার বিশ্বকাপ জয়। মাস কয়েক পরেই ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর আইসিসি বিশ্বকাপ। এই আসরকে মাথায় রেখে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে টাইগাররা। অধিনায়ক, কোচ তথা টিম ম্যানেজমেন্ট বিশ্বকাপের স্কোয়াড নিয়েও ভাবছেন অনেক আগে থেকেই।

যদিও বিশ্বকাপের আগে আরও দুটি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। দুটিই দেশের বাইরে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে যাবে ক্রিকেট দল। তারপর আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি সিরিজ হবে। সেখান থেকেই বিশ্বকাপ খেলতে ইংল্যান্ড পাড়ি জমাবে টাইগাররা।

২০১৯ সাল প্রধান লক্ষ্যই বিশ্বকাপ। যদিও এর আগে ঘরের মাঠে সেলিব্রেটি টি-২০ টুর্নামেন্ট বিপিএলে (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) অংশ নেবেন ক্রিকেটাররা। এছাড়া নিউজিল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড সফর তো আছেই। তবে ফোকাস থাকবে বিশ্বকাপেই।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বে উদীয়মান শক্তি। কিন্তু এখনো বড় কোনো ট্রফি জিততে পারেনি। বার বার ফাইনালে উঠেও একটুখানি ভুলের জন্য হচ্ছে না। তবে এবার বিশ্বকাপ জয়ের মিশন নিয়েই ধীরে ধীরে এগুচ্ছে টাইগাররা।

২০১৮ সালে বাংলাদেশ দলটি তিনটি ফাইনালে খেলেছে। কিন্তু একবারও জিততে পারেনি। ঘরের মাঠে ত্রি-দেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হেরেছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিদাহাস ট্রফি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া কাপের ফাইনালেও অংশ নিয়েছে টাইগাররা। কিন্তু এই দুই ফাইনালেই ভারতের বিরুদ্ধে হারতে হয়েছে। তবে নিদাহাস ট্রফি ছিল টি-২০ ফরম্যাটে।

এশিয়া কাপে বরাবরই দুর্দান্ত খেলছে বাংলাদেশ। শেষ চার আসরের মধ্যে তিনবারই ফাইনালে উঠেছিল। ২০১২ সালে ঘরের মাঠে একটুর জন্য এশিয়ার সেরা হতে পারেনি লাল-সবুজরা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ২ রানে হারতে হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালেও শিরোপার খুব কাছাকাছি গিয়েছিল সাকিবরা। টি-২০ ফরম্যাটের ওই এশিয়া কাপেও হেরে যায় ভারতের বিরুদ্ধে। আর সব শেষের হারটি তো চলতি বছরেই।

আইসিসির টুর্নামেন্টেও ক্যারিশমা দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে চমক দেখিয়েছিল মাশরাফি মর্তুজার দল। এরপর ২০১৭ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও সেমিফাইনালে উঠেছিল টাইগাররা। আইসিসির সবশেষ এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ছিল স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের গ্রুপে থেকেও নকআউট নিশ্চিত করে বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটি ছিল টাইগারদের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ম্যাচ। ব্লাক ক্যাপসদের বিরুদ্ধে ২৬৬ রানের বিশাল টার্গেটে খেলতে নেমে মাত্র ৩৩ রানেই বাংলাদেশের টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান আউট হয়েছিল। এরপর সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ক্যারিশম্যাটিক ৫ উইকেটের দুরন্ত জয় পেয়েছিল টাইগাররা।

সেই যুক্তরাজ্যেই এবার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মাশরাফিদের জন্য প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে -ইংল্যান্ডে গ্যালারিতেও থাকে লাল সবুজের জোয়ার। বাংলাদেশের পর টাইগাররা সবচেয়ে বেশি সমর্থন পায় ইংল্যান্ডেই। যুক্তরাজ্যের ক-িশন, দর্শকের সমর্থন এবং ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই এবার বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বাংলাদেশ দল এবার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। দলের প্রাণভোমরা হচ্ছেন ‘পঞ্চপা-ব’ খ্যাত পাঁচ তারকা- সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ ও স্বয়ং মাশরাফি। এছাড়া তরুণ ক্রিকেটাররাও দুর্দান্ত দাপট দেখাচ্ছেন। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং -তিন বিভাগেই শক্ত এখন বাংলাদেশ। কিছুদিন আগেও ব্যাটিংয়ে ওপেনিং জুটি নিয়ে দুর্বলতা ছিল। এখন দলে চার ওপেনার- দলে জায়গা পাওয়া নিয়েই রীতিমতো যুদ্ধ। স্পিন-পেস বোলিংয়েও দারুণ ছন্দে টাইগাররা। সে কারণেই এবারের বিশ্বকাপকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন ক্রিকেটাররা। আর দলের অধিনায়ক মাশরাফি সদ্য জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় চ্যালেঞ্জে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। নড়াইল এক্সপ্রেস নেতৃত্বে বরাবরই ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, ‘সাংসদ মাশরাফি’ বিশ্বকাপে নতুন কী ক্যারিশমা নিয়ে হাজির হন!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর