বুধবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বছরটা রাঙাতে চায় নারী ফুটবলাররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বছরটা রাঙাতে চায় নারী ফুটবলাররা

২০১৮ সালটা ফুটবলের ভালোই কেটেছে বলা যায়। ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জাতীয় দল গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলেও বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপে সেমিফাইনাল খেলেছে। এশিয়ান গেমসে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। ১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশ এশিয়ান গেমসে অংশ নিলেও কখনো গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারেনি। বড় সাফল্য ছিল ১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়াডে মালয়েশিয়াকে ২-১ গোলে হারানো। বড় জোর ১টি জয় ছাড়া ফুটবলে সাফল্য আসছিল না।

অবশেষে ভাগ্য খুলে যায় ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৮তম এশিয়ান গেমসে। ফুটবলে শক্ত গ্রুপে থেকেও নকআউট পর্বে জায়গা করে নেয়। শক্তিশালী কাতারকে হারিয়ে শেষ ষোলতে জায়গা পাওয়াটা চাট্টিখানি কথা নয়। আসলে এই প্রাপ্তিই পুরনো বছরের গ্লানিটা দূরে ঠেল দিয়েছে। তারপর আবার অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে কিশোরদের শিরোপাটা ফুটবলে স্বস্তি এনে দেয়।

২০১৮ সালটা ছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের রাঙানো বছর। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ বাছাই পর্ব ও সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ের নিশানা উড়িয়েছে মারিয়া, আঁখি, স্বপ্না, শামসুন্নাহাররা। হংকং জকি কাপেও শিরোপা জিতেছে। প্রতিপক্ষদের গোলের বন্যায় ভাসিয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানকে গোলের বন্যায় ভাসানোটা ছিল বড় ঘটনা। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে ১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৮তে ১৭ গোলে পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করে। যা বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন ইতিহাসই বলা যায়।

নতুন বছরটাও রাঙাতে চায় নারী ফুটবলাররা। ২০১৯ সালে বড় তিন টুর্নামেন্ট খেলতে হবে মারিয়াদের। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় বসবে এএফসি কাপ অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্টে বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ড। গত বছর বাছাই পর্বে প্রথম রাউন্ডে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সেই সুবাদে দ্বিতীয় রাউন্ড খেলছে। চ্যাম্পিয়ন হলেই আগামী সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।

মার্চের ১২ তারিখ থেকে নেপালে পর্দা উঠবে নারী সাফ সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের। ভেন্যু নির্ধারিত না হলেও চলতি বছরে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়ন অনুষ্ঠিত হবে। ফিফা উইন্ডো কর্মসূচিও রয়েছে। নারী ফুটবলারদের মাঠে নামাটা দীর্ঘদিনের নয়। তবু এর মধ্যে ৭টি ট্রফি জিতে নিয়েছে। যা ৪২ বছরে পুরুষ দলের পক্ষেও সম্ভব হয়নি।

মেয়েদের চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্সের কারণে এই সাফল্য এসেছে। এখন অনেক নারী ফুটবলার পরিচিতও হয়ে উঠেছেন। এর পেছনে বড় ভূমিকা ও কৃতিত্ব যদি দিতে হয় তাহলে সবার আগে নাম আসবে গোলাম রব্বানী ছোটনের। দেশের প্রখ্যাত ফুটবলার শহিদুর রহমান সান্টুও নারী দলের প্রশিক্ষক ছিলেন। কিন্তু ছোটন দায়িত্ব নেওয়ার পর ফুটবলে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলে নারীরা।

ছোটনের যোগ্য প্রশিক্ষণে বিশ্ব ফুটবল মানচিত্রে নারী দল আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। স্বল্প দিনে যা অর্জন তা সবই ছোটনের প্রশিক্ষণে। মারিয়ারা নতুন বছরটা রাঙাতে চায়। কোচ ছোটনও গতকাল জানালেন, ‘সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। তিনটি টুর্নামেন্ট আমাদের সামনে। আগামী মাসের শেষের দিকে ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ দলের দ্বিতীয় রাউন্ড। চ্যাম্পিয়ন হলেই স্বপ্নের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা হবে। ঘরের মাঠে সুযোগ যেন হাত ছাড়া না হয় সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছি।’ অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল বলেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলাটা স্বপ্নই বলা যায়। তাই এই অঞ্চলের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে বিশ্বকাপ বলা হয়। বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় দল এই আসরে একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এখন সেমিফাইনালই খেলতে পারছে না। অথচ নারীদের সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে বাংলাদেশ রানার্স আপ হয়েছে।

সেই সিনিয়র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপই নেপালে গড়াবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ১২ মার্চ পর্দা উঠবে। উপমহাদেশে সাফ খুবই জনপ্রিয় টুর্নামেন্ট। গতবার না পারলেও এবার বাংলাদেশের লক্ষ্য শিরোপা। বাংলাদেশের গ্রুপে রয়েছে নেপাল, ভুটান ও পাকিস্তান। সেই হিসেবে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলাটা নিশ্চিতই বলা যায়।

কোচ ছোটন দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, ‘জুনিয়রের পর এবার সাফে সিনিয়র ট্রফি দেশকে উপহার দিতে চাই। কাজটি কঠিন নয়, তার আগে আমরা বড় এক টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছি। সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামব। আমার বিশ্বাস মেয়েরা মাঠে যোগ্যতার পরিচয় দেবে।’

সর্বশেষ খবর