সোমবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

শেষ ওভারে রাজশাহীর জয়

আসিফ ইকবাল

শেষ ওভারে রাজশাহীর জয়

শেষ ওভারে মুস্তাফিজের দুরন্ত বোলিংয়ে হারা ম্যাচ জিতে যায় রাজশাহী কিংস। ম্যাচ শেষে আনন্দে কাটার মাস্টারের কাঁধে চড়লেন অধিনায়ক মিরাজ। পাশে বিমর্ষ রংপুরের ফরহাদ রেজা মাঠ ছাড়ছেন -রোহেত রাজীব

জায়ান্ট স্ক্রিনে যখন ভেসে উঠল রংপুর রাইডার্সের দরকার ১ বলে ৭ রান, স্ট্রাইক অ্যান্ডে দাঁড়ানো রিলি রুশোর মনে বোধ হয় তখন ভেসে উঠেছিল স্বদেশি ব্রায়ান ম্যাকমিলানের ছবি! ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টি ম্নাত সেমিফাইনালে তার প্রিয় জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার অবিশ্বাস্য হার স্ট্রাইক অ্যান্ডে দাঁড়িয়ে কান্নাভেজা চোখে দেখেছিলেন ম্যাকমিলান। বৃষ্টির সোঁদা ছড়ানো গন্ধে জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা প্রোটিয়াসরা ম্যাচটি হেরেছিল অদ্ভুত এক আইনের মারপ্যাঁচে। সিডনির জায়ান্ট স্ক্রিনে ১ বলে ২২ রান লেখা উঠতেই চরম হতাশায় কষ্টের হাসি হেসেছিলেন ম্যাকমিলান। ২৭ বছর পর ২০১৯ সালে মিরপুর স্টেডিয়ামে কাল রুশো একইভাবে মুষড়ে পড়েন জেতা ম্যাচটি হাতছাড়া হওয়ায়। ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে...’ গানের মতো কাল রশোও দেখলেন শেষ ওভারে ৯ রানের মামুলি টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৫ রানে কষ্টার্জিত হার। অবশ্য টানেলের শেষ প্রান্তে আলো দেখার মতো অবিশ্বাস্য জয়ের সুক্ষ্ন একটি সম্ভাবনা ছিল। সেই অবিশ্বাস্য কাজটি সুচারুভাবে করতে পারেননি প্রোটিয়া ক্রিকেটার। তাই শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচ হারের দুর্বিষহ যাতনা নিয়ে ঢাকা পর্ব শেষ করতে হল মাশরাফি, ক্রিস গেইল, রুশোর রংপুর রাইডার্সকে।         

টার্গেট আকাশসম নয়, মাত্র ১৩৬। টি-২০ ম্যাচে যা হেসে খেলে সম্ভব। এমন সহজ সরল ম্যাচটি হেরেছে রংপুর। জয়ের সরল রেখায় হাঁটতে থাকা ম্যাচের শেষ ওভারে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের দরকার ছিল ৯ রান। উইকেটে ছিলেন ৪২ রানে ব্যাট করতে থাকা রুশো। তাই আগাম উৎসবের মঞ্চ তৈরি করা অন্যায় ছিল না। কিন্তু ক্রিকেট যে নাটকের চেয়েও নাটকীয়, মিরপুরের দর্শক আরও একবার উপভোগ করলেন। ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে প্রান্ত বদল করেন রুশো। শেষ ৫ বলে ৮ রান চাই রংপুরের। ব্যাট হাতে অভিজ্ঞ ফরহাদ রেজা। অথচ মুস্তাফিজের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের টানা তিন বলে ব্যাটই ছোঁয়াতে পারেননি তিনি। অবিশ্বাস্য! সতীর্থের এমন ব্যর্থতায় উইকেটের আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকে বেদনার্ত না হওয়ার কোনো কারণ ছিল না রুশোর। ষষ্ঠ বলে স্ট্রাইক পেলেন ২৯ বছর বয়স্ক প্রোটিয়া তরুণ। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ হাতছাড়া। অবশ্য সুপ্ত সম্ভাবনা ছিল না যে, তা নয়। এজন্য রাজশাহীর মুস্তাফিজকে হয় ‘নো’ কিংবা ‘ওয়াইড’ করতে হতো। সেটা না করে ঠান্ডা মাথায় নিখুঁত জায়গায় বল করেন। রুশো এক রান নিয়ে প্রান্ত বদল করে ব্যবধান কমান শুধু। তবে শেষ বলে যদি ছক্কা মারতে পারতেন, তাহলে সুপার ওভারে গড়াতো ম্যাচটি। আগের দিন তারই স্বদেশি ফ্রাইলিঙ্ক পরপর দুই ছক্কা মেরে সুপার ওভারে নিয়ে যান। সুপার ওভারেও অসাধারণ বোলিং করে খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয় উপহার দেন চিটাগং ভাইকিংস।

শেষ ওভারে রংপুরের দরকার ছিল ৯ রান। মাত্র ৩ রান নিতে সক্ষম হন রংপুরের দুই ব্যাটসম্যান। রুশো ২ বল খেলে দুই রান নিলেও ফরহাদ চার বলে কোনো রানই নিতে পারেননি। তাই মাঠে উপস্থিত ক্রিকেট সমর্থকরা শ্বাসরুদ্ধকর এমন ম্যাচে জয়ের জন্য মুস্তাফিজকে সাধুবাদে ভাসিয়ে দেননি। সহজ ম্যাচ হেরে যাওয়ায় দুষলেন ফরহাদকে। রংপুরের অধিনায়ক মাশরাফি নাটকীয়তায় ভরপুর শেষ ওভারে হারটাকে মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু ক্যাপ্টেন সিটে বসে কোনোভাবেই হারের জন্য ফরহাদ রেজাকে দুষলেন না, ‘জয়ের ওই রানটা আহামরি কিছু ছিল না। মুস্তাফিজ শেষ ওভারে থাকার পরও আমাদের নির্দেশনা ছিল রুশোকে স্ট্রাইক দিতে। ফরহাদ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সে জানে কি করতে হবে। উচিত ছিল যতটা সম্ভব রুশোকে স্ট্রাইক দেওয়া। চারটি ডট বল আমাদের ডুবিয়েছে।’

আগামীকাল থেকে সিলেট পর্ব শুরু। ঢাকায় প্রথম পর্বে পাঁচ ম্যাচে দুই জয় নিয়ে সিলেটে পা রাখবেন মাশরাফিরা। সাত দলের এই টুর্নামেন্টে শীর্ষ চার দল হতে বাকি ৭ খেলায় জয় পেতেই হবে রংপুরকে। সাদা চোখে কাজটি বড্ড কঠিন। রংপুর অধিনায়ক অবশ্য সেই চাপে ভেঙে পড়তে রাজি নন। ঢাকা ও রাজশাহীর কাছে শেষ ওভারে নাটকীয় হারের পরও, ‘গত আসরের শুরুতে ৬ ম্যাচে তিন জয় ছিল আমাদের। সুতরাং এখনই হাফ ছেড়ে দেওয়ার কিছু নেই।’ রংপুর অধিনায়ক সত্যি বলেছেন। প্রথম লেগে ৫০ শতাংশ সাফল্যেও পরও শেষ হাসি কিন্তু হেসেছিল রংপুর রাইডার্স। এবারও মাশরাফির সোনার হাতের ছোঁয়ায় তেমন কিছু হলে, অবাক হওয়ার কিছু নেই।

আগের ম্যাচে ঢাকার কাছে শেষ ওভারের উত্তেজনায় হেরেছিল ২ রানে। গতকাল হেরেছে ৫ রানে। ঢাকা পর্বের শেষ দিনে শুরুতে ব্যাট করে চার নম্বর ম্যাচের দ্বিতীয় জয় তুলে নিতে রাজশাহী প্রথমে সংগ্রহ করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৫ রান। ম্যাচসেরা জাকির হাসান ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন মাত্র ২৬ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায়। ১৩৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বিস্ময়ের জন্ম দেন মাশরাফি ওপেন করতে নেমে। যদিও হঠাৎ ওপেন করতে নেমে সাজঘরে ফিরেন শূন্য রানে। ওপেন করার সিদ্ধান্ত হঠাৎ ছিল না বলেন, ‘আমরা যেহেতু একজন ওপেনার কম নিয়েছি, তাই আমিই ওপেন করেছি।’

মাশরাফির ওপেন কিংবা শেষ ওভারে ফরহাদের ব্যর্থতায় হার এড়াতে পারেনি রংপুর। কিন্তু এটা সত্যি, এমন শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ প্রাণ দিয়েছে বিপিএল উৎসবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর