বুধবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

গেইল ফিরলেন চেনা রূপে

মেজবাহ্-উল-হক

গেইল ফিরলেন চেনা রূপে

রংপুরের অ্যালেক্স হেলস হাফ সেঞ্চুরি করার পর দর্শকদের অভিনন্দনের জবাব দিচ্ছেন। পাশে তা দাঁড়িয়ে দেখছেন ক্রিস গেইল। শেষ পর্যন্ত তার ব্যাটও কথা বলেছে। এবার বিপিএলে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি মুখ দেখলেন এ ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান। গেইল রানে ফেরায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন তার ভক্তরা -রোহেত রাজীব

অ্যালেক্স হেলসের স্ট্রাইকরেট যখন ২০৭.৬৯, তখন টি-২০ সম্রাট ক্রিস গেইলের স্ট্রাইকেরেট মাত্র ৪০.০০! আরও পরিষ্কার করে বললে হেলস যখন ২৬ বলে ৫৪ তখন ১০ বলে গেইলের রান মাত্র ৪! একই সঙ্গে দুজন ইনিংস ওপেন করতে নেমেছেন। কিন্তু হেলস ৩ ছক্কার পাশাপাশি ৮টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন, ক্যারিবীয় ঝড় তখনো ছিলেন দর্শক। ননস্ট্রাইকিং প্রান্তে নির্বাক তাকিয়ে দেখেছেন সতীর্থের হাঁকানো একের পর এক ছক্কা-চার। টি-২০র ইতিহাসে সত্যিই এ যেন এক বিরল দৃশ্য!

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে খুলনা টাইটানসের বিরুদ্ধে রংপুর রাইডার্সের পাওয়ার প্লেতে গতকাল এমন এক অদ্ভুত ঘটনাই ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত গেইলের ব্যাটে ঠিকই ঝড় উঠেছিল। বাইশগজে ঝড় তুলেছিলেন ৩৬০ ডিগ্রি এবি ডি ভিলিয়ার্সও। তিন তারকার (হেলস, গেইল, ভিলিয়ার্স) ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিংয়ে খুলনা টাইটানসের দেওয়া ১৮২ রানের টার্গেটে সহজেই পৌঁছে যায় রংপুর রাইডার্স।

প্রথম ১২ ওভারে উত্তরাঞ্চলের দলটির ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল যেন হাইলাইটস চলছে। হেলস, ভিলিয়ার্স ও গেইল মিলে ৭২ বলেই করেন ১২০ রান। এরমধ্যে ৯টি ছক্কা, ১২টি চার। তবে এই ১২০ রানের মধ্যে তখন গেইলের ব্যাট থেকে এসেছিল মাত্র ২৪,  হেলসের ৫৫ এবং ভিলিয়ার্সের ৪১। বাইশগজে গতকাল গেইল ছিলেন ধৈর্যের মূর্তপ্রতীক। তাকে একপ্রান্তে রেখে অ্যালেক্স হেলস ২৯ বলে ৫৫ রানের সাইক্লোন ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান। তারপর ভিলিয়ার্সও ২৫ বলে ৪১ রান করে ফিরে যান। কিন্তু গেইল আঁকড়ে পড়েছিলেন উইকেটে। আগের ৫ ম্যাচের মধ্যে চার ম্যাচেই নিজের স্কোরকে ডাবল ফিগারে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছেন এই সুপার স্টার। সে কারণেই কিনা গতকাল শুরু থেকেই ছিলেন ভীষণ সতর্ক।

গতকাল ১৯ ওভার পর্যন্ত ছিলেন উইকেটে গেইল। তবে দীর্ঘ সময় বাইশগজে থাকলেও ক্যারবীয় তারকা অর্ধশত করেছেন ঝড়ো গতিতেই। গেইল হাফ সেঞ্ঝুরি পূরণ করেন ৩৪ বলে। ৫টি ছক্কা ও ২টি চার। আউট হওয়ার আগে ৪০ বলে খেলেন ৫৫ রানের ইনিংস। তবে দলের জয় নিশ্চিত করেই ফিরতে পারতেন ক্যারিবীয় তারকা। কিন্তু জয় থেকে রংপুর যখন মাত্র ১১ রান দূরে তখন ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ হয়ে যান টি-২০ সম্রাট। আগের ম্যাচেই সিলেট সিক্সার্সের দেওয়া ১৯৫ রানের টার্গেট টপকে জিতে আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় রাইডার্স। আর গতকাল খুলনা টাইটানসের ১৮২ রানের টার্গেটে  পৌঁছে যায় অনায়াসেই। তবে গেইল আউট হওয়ার পর শেষ ওভারে একটুখানি থ্রিলের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল টাইটানস। তবে প্রথম বলেই মিথুনের উইকেট হারালেও তৃতীয় বলে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে রংপুর জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন বিপিএলের এই আসরে এখন পর্যন্ত রান সংগ্রাহক  প্রোটিয়া তারকা রিলে রুশো।

আট ম্যাচে খুলনার সপ্তম হার। এই আসর থেকে যেন টাইটানসের বিদায় ঘণ্টাই বেজে গেল। ম্যাচ শেষে তাই হতাশা ব্যক্ত করলেন খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ‘আমি যতদিন থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে খেলেছি এমন পরিস্থিতিতে কখনোই পড়তে হয়নি। খুবই হতাশ। এই দায় হয়তো আমারই। আমি আমার দলকে ঠিকঠাকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারিনি।’ প্রথমে ব্যাট করে ১৮১ রান করার পরও দল হারলে ক্যাপ্টেনেরইবা কি করার আছে। পরাজয়ের কারণ খুঁজতে গিয়ে রিয়াদ বলেন, ‘আমাদের দলটা ভালোই। তবে একদিনও একসঙ্গে বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগে ভালো হয়নি। এই ম্যাচে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো করেছে। কিন্তু বোলাররা সুবিধা করতে পারেননি।’

অন্যদিকে, দারুণ জয়ে চ্যাম্পিয়ন রাইডার্সের প্লে-অফ  খেলার সম্ভাবনা যেন আরও উজ্জ্বল হলো। আট ম্যাচে তাদের পয়েন্ট এখন আট। টানা দুই জয়ে নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে চ্যাম্পিয়নরা। তবে শেষের চার ম্যাচ নিয়ে সতর্ক মাশরাফি, ‘প্রথম ছয় ম্যাচের মধ্যে টানা তিনটা ম্যাচে হার। তারমধ্যে দুই ম্যাচে প্রায় জয়ের কাছে গিয়েও হেরে যাওয়ায় দলকে আরও ডাউন করে দিয়েছিল। ওইখান থেকে পর পর দুই ম্যাচে জিতে একটা ভালো অবস্থায় আছি আমরা। তবে বলব না যে খুব ভালো অবস্থায় আছি। কিন্তু একটা পজিশনে এসেছি যেখান থেকে আমরা সামনে এগোতে পারি। তবে স্বস্তি যে পর পর দুটি ম্যাচ জিতেছি। তবে পরের চার ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

এবারের আসরে ব্যাটিং নির্ভর দল গড়েছে রংপুর রাইডার্স। একাদশের চার বিদেশিই ব্যাটসম্যান। শুরু  থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে রিলে রুশো। ভিলিয়ার্সকে নিয়েও চিন্তার কিছু নেই। তবে দুই ওপেনার গেইল ও  হেলসকে নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিল, গতকাল তারও অবসান ঘটল। এখন লক্ষ্য একটাই, ধীরে ধীরে চ্যাম্পিয়নশিপের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর