মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই

আসিফ ইকবাল

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই

নেপিয়ার ও ক্রাইস্টচার্চে ব্যর্থ ছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। ডানেডিনে সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে নিজেদের মেলে ধরতে পারবেন কি -ফাইলফটো

ক্রাইস্টচার্চের মতো ভূমিকম্পের শহর নয় ডানেডিন। এমনকি দাবানলের শহরও নয়। ছিমছাম গোছানো শহরটি নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণের দ্বীপের চতুর্থ বৃহত্তম। ‘ক্রিকেটীয়’ রাজ্য ওটাগোর আবার রাজধানী। ছিমছাম শহরের অনিন্দ্যসুন্দর বাড়িগুলোতে স্কটিশ ছাপ বেশ উজ্জ্বল। ক্রিকেট শহর বলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম আবার দুটি। একটি ইউনিভার্সিটি ওভাল এবং আরেকটি ক্যারিসব্রুক স্টেডিয়াম। ইউনিভার্সিটি ওভাল এখন মূল ক্রিকেট ভেন্যু। এখন সেখানেই নিয়মিত ক্রিকেটীয় আয়োজন হচ্ছে। ক্যারিসব্রুকের জায়গা স্মৃতির আয়নায়। আগামীকাল ভোরে ইউনিভার্সিটি ওভালে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে খেলতে নামছেন মাশরাফি বিন মর্তুজারা। নেপিয়ার ও ক্রাইস্টচার্চ জিতে সিরিজ ইতিমধ্যেই নিজেদের করে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। মার্টিন গাপটিলরা ডানেডিনে নামবেন জয়ের সংখ্যাটাকে দুই থেকে তিনে উন্নীত করতে। বিপরীতে বাংলাদেশ নামবে মান বাঁচাতে, হার এড়াতে এবং সর্বোপরি হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা লুকাতে। 

ক্রিকেটীয় আবহে নিউজিল্যান্ড সবসময়ই ভীতিকর এক নাম! শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশের দেশগুলোর কাছে আতঙ্কের নাম। ভারত, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কা কখনোই যে নিউজিল্যান্ডের মাটি থেকে জিতে ফিরেনি, তেমন নয়। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডকে ৪-১ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করেছে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ কখনোই দ্বীপরাষ্ট্রের মাটিতে হারাতে পারেনি নিউজিল্যান্ডকে। চলমান সিরিজের আগে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০-তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ২১ ম্যাচের সবগুলোতেই হেরেছে টাইগাররা। নেপিয়ারে ৮ উইকেট এবং ক্রাইস্টচার্চে ৮ উইকেটে হারের পর সংখ্যাটা এখন ২৩। তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জিতেনি, এমন নয়। ২০১৫ সালের বিশ্ব্কাপ ক্রিকেটে নেলসনের স্যাক্সটন ওভালে স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছিল। সেই ম্যাচের জয়ের স্বাদ এখনো মধুর হয়ে আছে টাইগার ক্রিকেটারদের। সেই আত্মবিশ্বাসই হয়তো আগামীকাল ভোরে টনিক হয়ে কাজ করতে পারে মাশরাফিদের।

ডানেডিনের সবচেয়ে পুরনো ক্রিকেট ভেন্যু ক্যারিসব্রুক। ১৯৩৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত ক্রিকেট গড়িয়েছে এখানে। এখন আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় না। আঞ্চলিক খেলার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের অন্যতম রাগবী স্টেডিয়াম এটি। বাংলাদেশ কখনোই এখানে খেলেনি। তবে ইউনিভার্সিটি ওভালে খেলেছে। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়েই ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অভিষেক হয়েছিল স্টেডিয়ামটির। ১৮৩ রান করেও লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। এবার দ্বিতীয়বারের মতো খেলতে নামছে। ম্যাচটি আবার টাইগারদের মান বাঁচানোর, হোয়াইট ওয়াশ এড়ানোর। তিন টেস্ট ম্যাচ সিরিজের আগে নিজেদের ফিরে পাওয়ার ম্যাচও। তবে কাজটি সহজ নয়। মান বাঁচানোর ম্যাচটিতে মাশরাফিদের প্রতিপক্ষ শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, একাধিক। রুবেল হোসেন, সাইফুদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফিদের প্রবল প্রতিপক্ষ মার্টিন গাপটিল। নেপিয়ারে ১১৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পর ক্রাইস্টচার্চেও খেলেছেন ১১৮ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস। তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মো. মিথুনদের লড়তে হবে ম্যাট হেনরি, লুকি ফারগুসন ও ট্রেন্ট বুল্টের গতি, বাউন্স ও সুইংয়ের বিপক্ষে। এতসব সমীকরণ মিলিয়ে ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখা টাইগারদের জন্য বড্ড কঠিনই। তারপরও নিজের দিনে বাংলাদেশ হারাতে পারে বিশ্বের যে কোনো দলকে-এমন তকমায় আগামীকাল ভোরে চমকে দিতেই পারে কেন উইলিয়ামসন বিহীন নিউজিল্যান্ডকে। প্রথম দুই ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া উইলিয়ামসনকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে তৃতীয় ম্যাচে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ রয়েছে বাংলাদেশের। দুবারই ঘরের মাঠে। এখন পর্যন্ত দুই দেশ সাতবার পরস্পরের বিপক্ষে ‘বাইলেটারাল’ সিরিজ খেলেছে। ২০০৪ সালে প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে আসে নিউজিল্যান্ড। সেবার ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল সফরকারীরা। ২০০৭ সালে সফরে যায় টাইগাররা এবং বিধ্বস্ত হয় ৩-০ ব্যবধানে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ এসে সিরিজ জিতলেও একটি ম্যাচ হেরে যায় নিউজিল্যান্ড। দেশটির বিপক্ষে ওটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জয়। সেই জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ২০১০ সালে ঘরের মাটিতে বাংলাদেশ ৫ ম্যাচ সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে নিউজিল্যান্ডকে। বৃষ্টিতে সিরিজের একটি ম্যাচ মাঠেই গড়ায়নি। অবশ্য আগের বছর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়েছিল টাইগাররা। দেশটির বিপক্ষে বাংলাদেশ টানা দুটি সিরিজ জিতেছে। ২০১০ সালের পর ২০১৩ সালে টাইগাররা সিরিজ জিতে ৩-০ ব্যবধানে। এরপর ২০১৬ সালে ফের ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয় টাইগাররা। এবার এর মধ্যেই ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছে। আগামীকাল জিতলে শুধু ব্যবধানই কমবে।

আগামীকাল ভোরে মাশরাফির একাদশে পরিবর্তন আসতেও পারে। ক্রাইস্টচার্চে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ায় দলের সেরা পারফরমার মিথুনের সম্ভাবনা এখন ৫০-৫০। দুটি ম্যাচেই মিথুন পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেন।

ক্রাইস্টচার্চে ৫৭ এবং নেপিয়ারে ৬২ রানের ইনিংস খেলেন। দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম এখনো নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। রান পাচ্ছেন না মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ। তার ওপর আগের ম্যাচে অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের জন্য ম্যাচ ফির ১০ শতাংশ কর্তন হয়েছে মাহমুদুল্লাহর। মুশফিকের পুরনো ব্যথাটা চাড়া দেওয়ায় টেস্টের কথা ভেবে তাকে বিশ্রামে থাকতে দেখা যেতেও পারে। ব্যাটসম্যানরা না পারলেও পারফরম্যান্স করছেন মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু মিথুন, মুস্তাফিজদের পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে জয়ের পথে টেনে তুলতে পারছে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর