শিরোনাম
শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

তামিম পেরেছেন, কিন্তু অন্যরা...

মেজবাহ্-উল-হক

তামিম পেরেছেন, কিন্তু অন্যরা...

দুই সেরা ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমকে ছাড়াই হ্যামিল্টন টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ দল। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ‘পাখির চোখ’ করেছিলেন তামিম ইকবালের ব্যাটের দিকে। ড্যাসিং ওপেনার আস্থার অমর্যাদা করেননি। তিন ওয়ানডেতে তার ব্যাট না হাসলেও হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে প্রথম টেস্টে তার ব্যাট কাঁদিয়ে ছেড়েছে কিউই বোলারদের।

তামিম তুলে নিয়েছেন এক ক্যারিশম্যাটিক সেঞ্চুরি। কিন্তু দলের অন্যরা কি করেছেন? এক তামিমের স্কোর ১২৬, আর বাকি নয় ব্যাটসম্যানের রানের যোগফল মাত্র ১০৮ রান! সম্ভাবনাময় এক শুরুর পরও বাংলাদেশ কিনা মাত্র ২৩৪ রানে অলআউট! তামিমের সেঞ্চুরিটা ছিল দেখার মতো। দেশের মাটিতে বিপিএলের ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে যে ১৪১ রানের সাইক্লোন ইনিংস খেলেছেন সেই মুহূর্ত যেন দেশসেরা ওপেনারের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল! এজন্যই কিনা সাদা পোশাকে কিংবা লাল বলের কথা বেমালুম ভুলে গেলেন তামিম। তার বিরুদ্ধে যে ট্রেন্ড বোল্ট ও টিম সাউদির মতো বিশ্ব সেরা দুই পেসার সবুজ ঘাসের উইকেট বানিয়ে নিয়ে বল করছেন সেটিও ভুলে মনে রাখলেন ড্যাসিং ওপেনার। শুরু করলেন বেদম মার।

 বোল্টকে তবু প্রথম দিকে খানিকটা সমীহ করেছেন। তার প্রথম তিন ওভার থেকে নিয়েছেন মাত্র ৩ রান। কিন্তু সাউদিকে পাত্তাই দিলেন না। তার করা প্রথম ওভার থেকেই চলে ধুন্ধুমার মার। কিউই পেসারের প্রথম ওভারে ১০ রান, দ্বিতীয় ৬, তৃতীয় ওভারে আবারও ১০। এভাবে প্রথম স্পেলের ৬ ওভারে ৪০ রান দেওয়ায় সেরা পেসারকে বোলিং আক্রমণ থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হলেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।

সাউদির পর তামিমের আক্রোশ গিয়ে পড়ে বোল্টের ওপর। ব্লাক ক্যাপসদের সেরা পেসারের এক ওভারে পর পর তিন বলে তিন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তামিম। বোল্টের ওই ওভার থেকে মোট ১৭ রান নেন ড্যাসিং ওপেনার। অবশ্য এজন্য বোল্ট ‘অপয়া-১৩’কে দায়ী করতে পারেন, কেন না সেই ওভারটি ছিল নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের ১৩তম ওভার।

তামিম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন মাত্র ৩৭ বলে। তাই ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল ১০টি। এরপর ১১৭ বলে আদায় করে নেন সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম শতক। তামিমের মারকাটারি ব্যাটিং দেখে ধারাভাষ্যকররা প্রশংসাবাণে ভাসিয়ে দিতে থাকেন। আলোচনা হতে থাকে ২০১০ সালে লর্ডস ও ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বোলারদের বিরুদ্ধে করা সেঞ্চুরি দুটির। টেস্টের ষষ্ঠ ও নবম সেরা বোলারকে (বোল্ট ও সাউদি) যেভাবে তামিম প্রহার করছিলেন,  কেউ কেউ এই সেঞ্চুরিকেই তামিমের ক্যারিয়ার সেরা হিসেবে দাবি করছিলেন। ড্যাসিং ওপেনার লর্ডসে ১০০ বলে করেছিলেন ১০৩, দুই ছক্কার সঙ্গে ১৫ বাউন্ডারি। আর ম্যানচেস্টারে ১১৪ বলে খেলেছিলেন ১০৮ রানের ইনিংস, এক ছক্কা ও ১১ বাউন্ডারি। কিন্তু হ্যামিল্টনে তামিম হাঁকিয়েছেন ২১বাউন্ডারি, ছিল একটি ছক্কার মারও।

তামিমের রুদ্রমূর্তি যেন ভীষণ চিন্তা ফেলে দিয়েছিল ব্লাক ক্যাপস দলপতিকে। বোল্ট-সাউদিকে সরিয়েও কোনো লাভ হচ্ছিল না। কিন্তু কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও নেইল ওয়াগনার এসে রানের গতিটা আটকে দেন। ৬৫ রানে তামিমকে আউট করার একটা সুযোগও তৈরি হয়েছিল কিউদের। কিন্তু বল করার পর ফলথ্রুতে ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি গ্র্যান্ডহোম। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই গ্র্যান্ডহোমই তামিমকে সাজঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

হ্যামিল্টনে গতকাল দিনের প্রথম সেশনে বাংলাদেশের দাপট ছিল দেখার মতো। লাঞ্চের আগে ২৮ ওভারে আসে ১২২ রান। তবে হারাতে হয়েছিল দুই উইকেট। ওপেনার সাদমান দারুণ শুরু করেও বোল্টের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান। তবে মধ্যাহ্ণ বিরতিতে যাওয়ার ঠিক এক ওভার আগে অভিজ্ঞ মুমিনুল যেভাবে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন, তা ছিল রীতিমতো দৃষ্টিকটূ! লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের শট খেলবেন কি খেলবেন এমন চিন্তা করতে করতেই তার গ্লাভসে লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। নিউজিল্যান্ড হচ্ছে মুমিনুলের প্রিয় প্রতিপক্ষ। যাদের বিরুদ্ধে তার গড় ছিল একশর উপরে। সেই দলের বিরুদ্ধে এমন অবিবেচকের মতো উইকেট বিলিয়ে দেওয়ায় ‘প্রিন্স অব কক্সবাজার’ যেন নিজেও লজ্জিত! তামিমের ইনিংসের বাইরে বলার মতো আর কোনো ইনিংসই নেই! একের পর এক শট বলে আত্মাহূতি দিয়ে সাজঘরে ফিরতে থাকেন ব্যাটসম্যানরা। প্রথম দুই ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি করা মোহাম্মদ মিথুন কাল দুই অঙ্কের কোটাতেই পৌঁছাতে পারেননি। ৮ রান করে যেন বুঝিয়ে দিলেন এটি তার জার্সি নম্বর! মিথুনের মতো সৌম্য সরকার তার জার্সি নম্বর (৫৯) অনুসরণ করলে তবু তো একটা হাফ সেঞ্চুরি পেতেন অনেক দিন পর। টেস্ট দলে না থেকেও ‘হঠাৎ পাওয়া’ সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না। ১ রানেই  সৌম্যকে ফিরতে হলো ড্রেসিংরুমে। সাদা ও রঙিন পোশাকে হ্যামিল্টনে সেঞ্চুরি করা একমাত্র বাংলাদেশি মাহমুদুল্লাহ যেন তার প্রিয় মাঠকে চিনতে পারলেন না! সে কারণেই কিনা বাইশগজে সেট হওয়ার পরও ইনিংসটা বড় করতে পারলেন না। আউট হয়ে গেলেন ২২ রানেই। তবে ‘ছোট্ট’ একটা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য লিটন দাস। সাত নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে করেছেন ২৯ রান। তামিমের বীরত্বের পরও বাংলাদেশ যেখানে অলআউট ২৩৪ রানে, সেখানে শেষ সেশনে বিনা উইকেটে ৮৬ রান তুলে ফেলে নিউজিল্যান্ড। ভারতের গুজরাটে জন্ম নেওয়া কিউই ওপেনার জিত রাভাল ৫১ রানে অপরাজিত, আরেক ওপেনার টপ লাথাম ব্যাট করছেন ৩৫ রানে। আজ ব্লাক ক্যাপসরা যে নিজেদের স্কোরকে কোথায় নিয়ে যায়, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়!

সর্বশেষ খবর