শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল দল

বাংলাদেশের মেয়েরা চূড়ান্ত পর্বে

রাশেদুর রহমান

বাংলাদেশের মেয়েরা চূড়ান্ত পর্বে

চোখে স্বপ্ন আর বুকে আশা নিয়ে মিয়ানমার গিয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ দলের মেয়েরা। মারিয়া মান্ডারা কথা দিয়েছিলেন, এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে স্থান পাকা করেই দেশে ফিরবেন। তারা এক ম্যাচ হাতে রেখেই প্রতিজ্ঞা পূরণ করলেন। গতকাল মিয়ানমারের মান্ডালারের থিরি স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ১-০ গোলে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করল গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত হলো চীনেরও। বাংলাদেশ ও চীনের মেয়েরা টানা দুটি করে ম্যাচ জেতায় বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল ফিলিপাইন ও স্বাগতিক মিয়ানমারের। প্রথম ম্যাচে চীন ৫-০ গোলে মিয়ানমারকে হারিয়েছিল। গতকাল চীনা মেয়েরা ফিলিপাইনকে ৭-০ গোলে হারায়। এবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়নের লড়াই হবে বাংলাদেশ ও চীনা মেয়েদের মধ্যে। আগামীকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় ম্যাচটি একই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। গোল ব্যবধানে কিছুটা পিছিয়ে থাকায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য বাংলাদেশের জয়ের বিকল্প নেই। চীন অবশ্য অনেক শক্তিশালী দল। দেশ ছাড়ার আগেই গোলাম রব্বানী ছোটন চীনের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে খেলার কথা বলে গেছেন। ম্যাচটা ড্র হলে চীনই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে চূড়ান্ত পর্বে খেলবে।

গতকাল স্বাগতিক দলের বিপক্ষে খেলতে নেমে তেমন একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না গত ম্যাচে ফিলিপাইনের বিপক্ষে ১০ গোল করা মারিয়া মান্ডারা। একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে গেলেও গোলের দেখা পায়নি মেয়েরা। মিয়ানমারের আক্রমণগুলোও ছিল ভয়ঙ্কর। এ কারণে বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে শঙ্কা জাগছিল বারবারই। তবে দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে সব শঙ্কা দূর করে দেয় মেয়েরা। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে গোল করেন মনিকা চাকমা। কর্নার কিক নেন তিনি। বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া বল গোলকিপারের হাতে লেগে জাল স্পর্শ করলে গোল উৎসবে মেতে ওঠে মেয়েরা। এরপর দুই পক্ষ থেকেই বেশ কয়েকটা আক্রমণ হলেও গোল করতে পারেনি কোনো পক্ষই। রেফারি ম্যাচ শেষ হওয়ার বাঁশিতে ফুঁ দিলে উল্লাসে ফেটে পড়েন মারিয়া মান্ডারা। মিয়ানমারের বিপক্ষে গত নভেম্বরে অলিম্পিক বাছাইয়ে ৫-০ গোলে হেরেছিলেন মারিয়া মান্ডারা। সেই পরাজয়ের দারুণ একটা প্রতিশোধ নেওয়া হলো এবার!

বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা ম্যাচ শেষে হাসিমুখে এগিয়ে আসেন। ফেসবুক লাইভে তিনি জানান, ‘আমরা জানতাম মিয়ানমার অনেক শক্তিশালী দল। দুই মাস আগে তাদের জাতীয় দলের বিপক্ষে খেলেছিলাম এখানে। এ কারণে মিয়ানমার সম্পর্কে আমাদের জানা ছিল অনেক কিছু। গতবারের অভিজ্ঞতাটা এবার কাজে লেগেছে। অনেক প্রস্তুতি নিয়েই আমরা খেলতে নেমে এ জয় পেয়েছি।’ অন্যদিকে কান্না জড়ানো কণ্ঠে মিয়ানমার অধিনায়ক কথাই বলতে পারলেন না ম্যাচ-পরবর্তী ফেসবুক লাইভে! এএফসির এই টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশ এর আগে দুবার অংশ নিয়েছে। ২০০৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়া এবং ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে। দুবারই তিনটি করে ম্যাচ খেলে সবকটি হেরেছিল। এবার নতুন স্বপ্ন বুকে নিয়ে চূড়ান্ত পর্বে যাবে বাংলাদেশের মেয়েরা। গত কয়েক বছরে দলটা অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে। সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০১৭ সালে। এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বেও দুর্দান্ত খেলেছে। চীনের বিপক্ষে জিতলে তা হবে দারুণ এক অর্জন। এরপর চূড়ান্ত পর্বে খেলবে তারা স্বাগতিক থাইল্যান্ডসহ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া, রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মতো দলের বিপক্ষে। ছেলেদের ফুটবলে কোনো আশার বাণী না থাকলেও মেয়েরা নিয়মিতই হাসি ফোটাচ্ছে সমর্থকদের মুখে। দেখা যাক, এবার চূড়ান্ত পর্বেও জয়ের ধারাটা ধরে রাখতে পারে কিনা গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা!

সর্বশেষ খবর