রবিবার, ৩ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

হারের ক্ষণ গুনছে টাইগাররা

মেজবাহ্-উল-হক

হারের ক্ষণ গুনছে টাইগাররা

ভূপাতিত তামিম ইকবাল! হ্যামিল্টন টেস্টে এটাই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রতীকী দৃশ্য। বাঁহাতি ওপেনারকে আউট করে উল্লসিত নিউজিল্যান্ডের পেসার টিম সাউদি -এএফপি

তামিম ইকবালকে বিভ্রান্ত করতে লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে বাউন্সার দিলেন টিম সাউদি। কিউই পেসারের অভিসন্ধি বুঝতে পেরে ডাক করতে (না খেলে বসে মাথা নিচু করে বল ছেড়ে দেওয়া) চেয়েছিলেন ড্যাসিং ওপেনার। কিন্তু শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে বাইশগজে পড়ে যান। কিন্তু তামিমের ব্যাট উপরের দিকে উঠানো ছিল। বল ব্যাটের উপরের দিকে লেগে উপরে উঠে যায়। সহজেই তা তালুবন্দী করে ফেলেন কিউই উইকেটরক্ষক বিজে ওয়াটলিং।

-এমন অদ্ভুত আউটের পর নির্বাক তাকিয়ে রইলেন তামিম। দেশসেরা ওপেনারের বিশ্বাসই হচ্ছিল না এভাবেও কেউ আউট হয়!

৭৪ রানে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান তামিম। এক ছক্কা ও ১২টি বাউন্ডারিতে সাজানো এক ইনিংস। প্রথম ইনিংসের মতো গতকালও ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করছিলেন তিনি। কিউই পেসারদের রীতিমতো নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছিলেন। যদিও আরেকপ্রান্তে একের পর পর উইকেট পতন চলছিল। কিন্তু তামিম যেন অন্যপ্রান্তের দিকে না তাকিয়ে নিজের মতো খেলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনাই সব শেষ করে দিল।

গতকাল সাদমানের সঙ্গে তার ৮৮ রানের উদ্বোধনী জুটিটি ছিল দেখার মতো। অন্যপ্রান্ত থেকে ভালোই সমর্থন পাচ্ছিলেন তামিম। সাদমানের ব্যাটিং দেখে মনে হওয়ার উপায় ছিল না যে জাতীয় দলের সঙ্গে প্রথমবারের মতো তিনি নিউজিল্যান্ডে খেলতে গেছেন। কিন্তু নেইল ওয়াগনারের এক শট বলেই আউট হয়ে যান। এরপর মুমিনুল হক ও মোহাম্মদ মিথুনের সঙ্গেও বড় জুটি হয়নি তামিমের। ৮৮ থেকে ১১০ এই ২২ রানের মধ্যে সাদমান, মুমিনুল ও মিথুনের বিদায়ে বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তামিমের আউটের পর টাইগাররা পড়ে যায় মহাবিপর্যয়ে। তৃতীয় দিন শেষে যেন এখন হারের ক্ষণ গুনছে টাইগাররা!

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২৩৪ রানের পর নিউজিল্যান্ড ৬ উইকেটে ৭১৫ রান করে তাদের ইনিংস ঘোষণা করে। এভারেস্টে পৌঁছার জন্য শুরুটা ভালোই করেছিল সফরকারীরা। কিন্তু ১২৬ রানে চার উইকেট হারানোর পর ইনিংস ব্যবধানে হারটা যেন হয়ে যায় সময়ের ব্যবধান মাত্র। তারপরও আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৭৪ রানে দিনটা শেষ করতে পেরেছেন টাইগাররা।

রাভাল ও লাথামের সেঞ্চুরির পর কাল ডাবল সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেন কিউই দলপতি কেন উইলিয়ামসন। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই করে কাঁটায় কাঁটায় ২০০ রান করার পরই ইনিংস ঘোষণা করেন। তবে এমন সময় ইনিংস ঘোষণা করায় মন খারাপ হতে পারেন ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নামা গ্রান্ডহোমের। জিম্বাবুইয়ান বংশো™ভূূত এই কিউই অলরাউন্ডার মাত্র ৫৩ বলে খেলেন ৭৬ রানের ইনিংস। চার বাউন্ডারির সঙ্গে পাঁচটি ছক্কা। আর কয়েক ওভার খেললেই হয়তো সেঞ্চুরিও হয়ে যেত। কিন্তু ব্যক্তির চেয়ে দল বড়- এ কারণেই কিনা সেক্রিফাইজ করতে হয় গ্রান্ডহোমকে। অবশ্য ততক্ষণে নিউজিল্যান্ড তাদের টেস্ট ইতিহাসে ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড গড়ে ফেলেছে। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংসের পর বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসে ঠিক উল্টো চিত্র! যাওয়া-আসার মিছিল। উদ্বোধনী জুটিতে তামিমের সঙ্গে বড় ইনিংসের ইঙ্গিত দিয়েও ৭১ বলে ৩৭ রানে আউট সাদমান। মুমিনুল তো দুই অঙ্কের কোটাতেই পৌঁছাতে পারলেন না। আর মিথুনের রানের খাতাই খোলা হলো না। কেবল ৪ বল ফেস করে বাইশগজে ৯ মিনিট পার করে ফিরলেন। যে উইকেটে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা যখন ব্যাট করছিলেন মনে হচ্ছিল নিজে থেকে আউট না হলে তাকে আউট করার সাধ্য কারও নেই! সেই উইকেটেই কিনা ধুঁকছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। অবশ্য উইকেট উপহার দিয়ে আসলে করার কী আছে! 

তবে কিঞ্চিত হলেও শেষ বিকালে আশার আলো দেখিয়েছেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যদিও উইকেট যাওয়ার পর প্রথম বলেই টাইগার দলপতির বিরুদ্ধে জোরালো আবেদন হয়েছিল। এমনকি কটবিহাইন্ডের জন্য কিউইরা রিভিউও নিয়েছিল কিন্তু লাভ হয়নি। সে যাত্রায় বেঁচে যান মাহমুদুল্লাহ। তারপর অনেক বেশি সতর্ক হয়ে খেলতে থাকেন। দিনের শেষ সময়ে কোনো রকম ঝুঁকি নেননি। ৪০ বলে ১৫ রান করে অপরাজিত রয়েছেন।

দারুণ ব্যাটিং করছেন সৌম্য সরকার। ৫১ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত তিনি। তবে এই ইনিংসের আত্মবিশ্বাসের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। শট বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যখন বিপর্যস্ত তখন সৌম্য  বেশ স্বাচ্ছন্দ্য। সাউদির করা শট বলে যেখানে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকালেন তা ছিল দেখার মতো। বাউন্ডারি ছয়টিও ছিল অসাধারণ। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন ভুগিয়েছেন কিউই পেসারদের। তামিমের মতো সৌম্য নির্ভীকভাবে ব্যাটিং করছেন।

মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্যের জুটিতে এসেছে অপরাজিত ৪৮ রান। এই জুটিই বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও ভরসা দিচ্ছে। কিন্তু এখনো দীর্ঘ পথ বাকি। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৩০৭ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। তবে মাহমুদুল্লাহ ও সৌম্য ছাড়াও আরও দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান রয়েছেন- লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

কিন্তু এই লেজের লড়াই দিয়ে কি ম্যাচ বাঁচানো যাবে? হ্যামিল্টন টেস্টে টাইগারদের অবস্থা হয়েছে অনেকটা এমন, গায়ে প্রচ  জ্বর নিয়ে বেসক্যাম্পে থাকা পর্যটকের এভারেস্ট জয়ের আশা!

সর্বশেষ খবর