শিরোনাম
শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাতাসের শহরে টাইগারদের লড়াই

আসিফ ইকবাল

বাতাসের শহরে টাইগারদের লড়াই

অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে নামার আগে হালকা অনুশীলনে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা -বিসিবি

দক্ষিণের ‘দ্বীপরাষ্ট্র’ নিউজিল্যান্ড। ছোট-বড় অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে গঠিত পলিনেশিয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ডটি দুটি দ্বীপ নিয়ে। এর একটি ‘নর্থ আইসল্যান্ড’। তাসমান সাগর ঘেঁষা দ্বীপটিতেই ওয়েলিংটন শহর, যা আবার দেশটির রাজধানী। ক্রাইস্টচার্চকে বলা হয় ‘ভূমিকম্পের শহর’, তেমনি দেশটির আদিবাসী মাউরি সম্প্রদায় শহরটিকে ভালোবেসে বাতাসের শহর বলে! এখানেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ তিন টেষ্ট সিরিজের দ্বিতীয়টি খেলছে। সংবাদটি যখন পাঠক পড়বেন, তখন জেনে যাবেন ‘বাতাসের নগরী’ ওয়েলিংটন টেস্টে কোন দল ব্যাটিং করছে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে নিউজিল্যান্ড বরাবরই দুঃস্বপ্নের এক নাম। অকল্যান্ড, ক্রাইস্টচার্চ থেকে শুরু করে হ্যামিল্টন হয়ে ওয়েলিংটন- সুখস্মৃতি নেই বললেই চলে। শুধু হার, আর হার। তারপরও দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রটিতে হাতে গোনা কিছু ‘সুখ’ রয়েছে, সেটা ওয়েলিংটনেই। যদিও বাতাসের শহরে আগের তিন টেস্টের ব্যবধান লজ্জাজনকই। ২০০১ সালে ইনিংস ৭৪ রানে এবং ২০০৮ সালে ইনিংস ১৩৭ রানে হেরেছিল। সর্বশেষ ২০১৭ সালে লড়াই করেছিল শেষ দিন পর্যন্ত। চারদিন পর্যন্ত চালকের আসনে বসে থেকেও মাঠ ছেড়েছিল ৭ উইকেটে হারের তিক্ত স্বাদ নিয়ে। হারলেও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওটাই এখন পর্যন্ত লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। দুই বছর আগের হার্ড ও বাউন্সি উইকেটে প্রথম ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে টাইগাররা। দ্বীপরাষ্ট্রের মাটিতে এখন পর্যন্ত ওটাই লড়াইয়ের প্রথম ও শেষ বিজ্ঞাপন। শুরুতেই ইমরুল কায়েস বিদায় নেন। এরপর ৫৬ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন তামিম। মাহমুদুল্লাহ খেলেন ৬৪ রানের ইনিংস। ১৬০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দল যখন বিপর্যয়ে, তখনই হাল ধরেন দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। পঞ্চম উইকেট জুটিতে দুজনে যোগ করে ৩৫৯ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। সাকিব খেলেন ২১৭ রানের অতিমানবীয় ইনিংস। ২৭৬ বলের ইনিংসটিতে কোনো ছক্কা না থাকলেও বাউন্ডারি ছিল ৩১টি। মুশফিকের ইনিংসটি ছিল একটু ধীরগতির। ২৬০ বল স্থায়ী ১৫৯ রানের ইনিংসটিতে ছক্কা ছিল একটি এবং বাউন্ডারি ২৩টি। দুজনের রেকর্ড জুটি আবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ। শুধু নিউজিল্যান্ড নয়, যে কোনো দেশের বিপক্ষেই সর্বোচ্চ রানের জুটি। প্রথম উইকেট জুটিতে ২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও তামিম ৩১৩ রানের রেকর্ডটি এতদিন সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল। সেটাকে পেছনে ফেলেছে সাকিব-মুশফিকের জুটি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে আগের রেকর্ডটি ২০১৩ সালে মোহাম্মদ আশরাফুল ও মুশফিকের, গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৬৭ রনের। ২০১৭ সালের জানুয়ারির টেস্টটিই এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সেরা পারফরম্যান্স। সাকিব ও মুশফিক ছাড়া খর্ব শক্তির দলটিকে দুই বছর আগের পারফরম্যান্সই উজ্জীবিত সুধা দিবে কোনো সন্দেহ নেই। আঙ্গুলের ব্যথা, কব্জির ব্যথা এবং সর্বোপরি পাঁজরের ব্যথায় কাহিল মুশফিক হ্যামিল্টন টেস্টে খেলেনি। তার অভাব হাড়ে হাড়ে বোধ করেছে শিবির। তামিমের ১২৬, সৌম্য সরকারের ১৪৯ ও মাহমুদুল্লাহর ১৪৬ রানের পরও বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ৫২ রানে। ইনজ্যুরির জন্য নিউজিল্যান্ড সফরে যাননি বিশ্বসেরা অলাউন্ডার সাকিব। আগের টেস্টেও দুই নায়ক সাকিব ও মুশফিককে ছাড়া ওয়েলিংটনে কতটা ভালো করবে টাইগাররা, সেটা সময় বলবে। তবে হ্যামিল্টন টেস্ট মিস করা মুস্তাফিজুর রহমান ফিরেছেন। এটাই মাহমুদুল্লাহ বাহিনীর সবচেয়ে বড় টনিক। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে পুরনো ভেন্যুটির রেকর্ড বলছে বাংলাদেশের ৮ উইকেটে ৫৯৫ রানের ইনিংস সর্বোচ্চ তালিকার চার নম্বরে। সর্বোচ্চ ৮ উইকেটে ৬৮০, স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড ২০১৪ সালে করেছিল ভারতের বিপক্ষে। মাঠটির সর্বনিম্ন স্কোরের তালিকায় বাংলাদেশের ১১৩ রান, ১০ নম্বরে। সর্বনিম্ন স্কোর ৪২, নিউজিল্যান্ডের, প্রতিপক্ষ চির প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া, ১৯৪৬ সালে। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চের তালিকায় সাকিবের ২১৭ রান ১০ নম্বরে। সর্বোচ্চ ৩০২ রান ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের। বোলিংয়ের তালিকায় নেই কোনো টাইগার বোলার। সেরা বোলিং পারফরম্যান্স স্যার রিচার্ড হ্যাডলির ২৩ রানে ৭ উইকেট।

বেসিন রিজার্ভ নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে পুরনো ভেন্যু। নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড টেস্ট ম্যাচ দিয়ে অভিষেক ভেন্যুটির। এরপর সময়ের চোরাস্রোতে এখানে নিয়মিত টেস্ট হচ্ছে এবং বাংলাদেশ চার নম্বর টেস্ট খেলছে। ২০০১ সালে টেস্টটির স্থায়িত্ব ছিল চারদিন। এরমধ্যে বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল দ্বিতীয়দিন। তারপরও হেরেছিল ইনিংস ও ৭৪ রানে। দ্বিতীয়বার খেলতে নামে ২০০৮ সালে। তিনদিন স্থায়ী টেস্টে হেরেছিল ইনিংস ও ১৩৭ রানে। ২০১৭ সালের ইতিহাস সবার জানা। চার নম্বরটি এরমধ্যেই মাঠে গড়িয়েছে।

সর্বশেষ খবর