সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুঃস্বপ্ন ভুলতে চান মাহমুদুল্লাহরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

দুঃস্বপ্ন ভুলতে চান মাহমুদুল্লাহরা

সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ছবিও যেখানে হার মানে! সবুজ প্রকৃতি, পাহাড়-পর্বত আর নদী ঘেরা নিউজিল্যান্ড যেন ক্যানভাসে আঁকা কোনো দেশ। মন ভোলানো, প্রাণ জুড়ানো অনিন্দ্য সুন্দর দেশটি আবার শান্তিরও দেশ। ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে বর্বর ব্রেন্ট ট্যারেন্টের নির্বিচার গুলি বর্ষণে শান্তির নিউজিল্যান্ড এখন পরিণত হয়েছে অশান্তির দেশে। দক্ষিণের দেশটির নির্বিরোধী লোকজন এখন ভীত ও সন্ত্রস্ত। কোনোভাবেই কেউ বুঝতে পারছে না, শান্তির জীবন হঠাৎ করে কিভাবে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ল। শুধু তাই নয়, প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তাহীনতায় ট্যারেন্টের বর্বোরোচিত গুলি বর্ষণে নিহতের সংখ্যা ৪৯। ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। প্রাণে বাঁচলেও যে মানসিক ধাক্কা পেয়েছেন, যে বিপর্যস্তকর অবস্থা পার করছেন মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, তামিমরা, সেই দুঃস্বপ্ন ভুলে স্বাভাবিক জীবনে এখন ফেরাই তাদের মূল লক্ষ্য। ক্রাইস্টচার্চের নারকীয় ঘটনার বিভৎসতায় হতভম্ব টাইগার ক্রিকেটাররা ঢাকায় পা রেখেছেন পরশু রাতে। দেশে পা রাখলেও মাহমুদুল্লাহদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছিল ভয়। দুঃস্বপ্ন ভুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ক্রিকেটারদের পরিবারের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটাতে বলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সে জন্যই সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ছুটি দিয়েছেন মাহমুদুল্লাহদের।      

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগির ওভাল পার্কে সিরিজের শেষ টেস্ট খেলার। টেস্ট শুরুর কথা ছিল শনিবার ভোরে। শুক্রবার সকালে অনুশীলনের মাঝপথে ক্রিকেটাররা জুমার নামাজ পরতে আল নূর মসজিদমুখি হন টিম বাসে। মসজিদের কাছাকাছি পৌঁছেও মাত্র ৫ মিনিটের জন্য বেঁচে যান মৃত্যুর হাত থেকে। শনিবার রাতে ঢাকায় পৌঁছে টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ নারকীয় ঘটনাটি নিয়ে বলেন, ‘আমরা খুবই ভাগ্যবান। আপনাদের দোয়ায় আমরা এখানে বসে আছি এবং বাবা-মা, পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরতে পেরেছি।’ মসজিদে যাওয়ার পথে যে দৃশ্য দেখেছেন, সেটাকে বর্ণনাতীত বলেছেন টাইগার অধিনায়ক, ‘বলতে পারব না আমরা কি দেখেছি। তবে নিউজিল্যান্ডে এমন ঘটনা হবে, সেটা কখনোই ভাবতে পারিনি। ওই ঘটনা দেখার পর আমরা ক্রিকেটাররা সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। রুমের আসার পর বুঝেছিলাম, কতটা ভাগ্যবান আমরা।’

নারকীয় ও বীভৎস ঘটনার পর বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড আলোচনা করে বাতিল করে টেস্ট। এরপর ক্রিকেটাররা দেশে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। দেশে ফিরে এখন স্বস্তিবোধ করছেন বলেন মাহমুদুল্লাহ, ‘বিসিবি আমাদের তাড়াতাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করায় তাদের ধন্যবাদ। ধন্যবাদ পাপন ভাইকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। ওনাদের জন্যই আমরা দ্রুত দেশে ফিরেছি।’ মসজিদে হামলার পর হোটেলে ফিরে দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ জানান, টিম বাসে মসজিদের ৫০ গজ কাছাকাছি চলে গিয়েছিল দল। এরপর মসজিদ থেকে রক্তাক্ত মানুষদের বেরিয়ে আসতে দেখে থমকে যান তারা। সেখানে ১০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করে স্থানত্যাগ করে ফিরেন হ্যাগলি ওভাল মাঠে। এরপর হোটেলে ফিরেন।

ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ক্রিকেটাররা যে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন, সেটা খুব ভালো করে জানেন বিসিবি সভাপতি। পরশু রাতে ক্রিকেটারদের বরণ করতে নিজেই উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দরে। তামিম, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকদের এই ভঙ্গুর মানসিক অবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য তিনি ক্রিকেটারদের আপাতত ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন, ‘ওরা যে ভয়াবহ  পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে এসেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেই বুঝেছি। আমরা বুঝতে পারছি ওদের মানসিক অবস্থা কি রকম এখন। ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী হয়ে এমনিতেই তারা বিপর্যস্ত, তার উপর ২২ ঘণ্টার জার্নিতেও ক্লান্ত। মানসিকভাবে অনেকেই ভেঙে পড়েছেন। আমি শুধু বলেছি, বাসায় যাও। নিজেদের মতো করে পরিবারের সঙ্গে সময় দাও।

দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফর শেষ হয়েছে টাইগারদের। বাংলাদেশের পরবর্তী সফর আয়ারল্যান্ড ও বিশ্বকাপ ক্রিকেট। এখন থেকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিতে হবে ক্রিকেটারদের। কিন্তু তার আগে মানসিক শক্তি ফিরিয়ে আনাই মূল কাজ ক্রিকেটারদের। ক্রিকেট বোর্ডও চাইছে মাহমুদুল্লাহ, তামিম, মুশফিকরা দুঃস্বপ্ন ভুলে যাক।

সর্বশেষ খবর