লিও মারশা। ২২ বছরের ফরাসি তরুণ। প্যারিস অলিম্পিক শুরু হওয়ার আগেই তার ঝুলিতে ছিল পাঁচটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সোনা। ২০২২ সালে বুদাপেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি এবং ২০২৩ সালে ফুকুকা চ্যাম্পিয়নশিপে তিনটি সোনার পদক জয় করেন মারশা। ফ্রান্সে তিনি অলিম্পিকের আগেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে যান। কিন্তু সারা বিশ্ব তখনো ভালোভাবে তার পরিচয় পায়নি। প্যারিস অলিম্পিকে সাঁতারের লড়াই শুরু হতেই বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেয়ে যান তিনি। ৪০০ মিটার মিডলেতে সুইমিং পুলের কিংবদন্তি মাইকেল ফেলপসের ১৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে দেন মারশা। আলোচনায় চলে আসেন তিনি। মাইকেল ফেলপসের সঙ্গে তুলনা হতে থাকে মারশার। তখনো অনেকে ভেবেছিলেন, এটা বোধ হয় বাড়াবাড়ি। ফেলপসের সঙ্গে তুলনা কি চলে!
লিও মারশা ফেলপসের সঙ্গে নিজের তুলনা করার আরও কয়েকটা উপলক্ষ এনে দিলেন। বুধবার গভীর রাতে মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি সোনার পদক জয় করে ইতিহাস গড়েন তিনি। দুটো ইভেন্টেই গড়েন নতুন অলিম্পিক রেকর্ড। এর আগে এক রাতে সাঁতারে দুটো অলিম্পিক সোনা কেউ জেতেননি। ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে সোনার পদক জয় করেন মারশা। তিনি টাইমিং করেন ১ মিনিট ৫১.২১ সেকেন্ড। পরাজিত করেন টোকিও অলিম্পিকে রেকর্ড গড়ে এই ইভেন্টে সোনা জেতা হাঙ্গেরির ক্রিস্টোফ মিলাককে। এবার ১ মিনিট ৫১.৭৫ সেকেন্ড টাইমিং করে রুপা জয় করেছেন ক্রিস্টোফ। অবশ্য এই ইভেন্টে বিশ্ব রেকর্ডটা এখনো ক্রিস্টোফের দখলে (১ মিনিট ৫০.৩৪ সেকেন্ড)। ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে রেকর্ড গড়ে সোনার পদক জয়ের দুই ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আরও একটি রেকর্ড গড়েন মারশা। এবার ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে সোনা জয় করেন ফরাসি তরুণ। তিনি ২ মিনিট ৫.৮৫ সেকেন্ড টাইমিং করে অলিম্পিক রেকর্ড গড়েন। এই ইভেন্টে টোকিও অলিম্পিকে ২ মিনিট ৬.৩৮ সেকেন্ড টাইমিং করে রেকর্ড গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক কুক। তাকে হারিয়েই প্যারিসে সোনা জয় করলেন মারশা। জ্যাক কুক এবার ২ মিনিট ৬.৭৯ সেকেন্ড টাইমিং করে জয় করেছে রুপার পদক। দুটি ইভেন্টে দুই ডিফেন্ডিং সোনাজয়ীকে হারিয়ে একই রাতে সেরা হওয়ার এক অভূতপূর্ব রেকর্ডই গড়লেন মারশা। এর আগে ৪০০ মিটার মিডলেতেও অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে সোনার পদক জয় করেন তিনি। এক অলিম্পিকেই তিন রেকর্ডের মালিক বনে গেলেন।
অলিম্পিকে এর আগে কখনোই কেউ এক আসরে ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোক ও ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে সোনার পদক জয় করেনি। দুটো ইভেন্টে সোনার পদক জিতে ইতিহাস গড়লেন লিও মারশা। ইতিহাস গড়ার পর ফরাসি তরুণ বলছেন, ‘পুরো বিষয়টা অনুধাবন করতে আমার আরও কিছুটা সময় লাগবে। আমি আসলে কেবল সামনের দিকটাই দেখছি। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। সবকিছুর জন্যই আমি গর্বিত।’ টানা দুটো সোনার পদক জয়ের পর মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছেন লিও মারশা। কারণ, তার সামনে আরও এক ইভেন্ট। ২০০ মিটার মিডলের হিটে অংশ নিয়ে চতুর্থ হয়েছেন তিনি। গত রাতেই হয়েছে সেমিফাইনাল। আজ হবে এই ইভেন্টের ফাইনাল। প্যারিস অলিম্পিকে চতুর্থ সোনা জয়ের সুযোগ লিও মারশার সামনে।