অলিম্পিকের ‘ফিনিক্স পাখি’ সিমোন বাইলস! ২০১৬ রিও অলিম্পিকের আলোকিত জিমন্যাস্ট বাইলস পুরোপুরি নিষ্প্রভ ছিলেন টোকিও-২০২০ অলিম্পিকে। অনেকেই তখন মনে করেছিলেন, শেষ হয়ে গেছেন মার্কিন জিমন্যাস্ট। সমালোচনার তলোয়ারে এফোর-ওফোর হয়ে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন। এক সময় জিমন্যাস্টিকস থেকে সরে দাঁড়াতেও চেয়েছিলেন। সব চাপ সামলে ফিনিক্স পাখির মতো পুনঃজীবন হয়েছে বাইলসের। নিজের সঙ্গে লড়াই করে সব প্রতিবন্ধকতাকে সরিয়ে শূন্য থেকে শুরু করে ফিরেছেন। শুধু ফিরেছেন, বললে ভুল! ফিরেছেন প্যারিসের রানি হয়ে। দর্শকদের হৃদয় জয় করেছেন অনুপম সব কৌশলের প্রদর্শনীতে। বাজিমাত করেছেন ২টি সোনা জিতে। সব মিলিয়ে তিন অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত সোনা জিতেছেন ৬টি। রিও অলিম্পিকে ৪ এবং প্যারিসে জিতেছেন ২ সোনা। টোকিওতে ছিলেন সোনাশূন্য।
বয়স ২৭। এ বয়সে চলতি অলিম্পিকে কোনো জিমন্যাস্ট নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী সবার বয়স ১৪-২০ বছর। উচ্চতা মাত্র ১৪২ সেন্টিমিটার। ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার বাইলস টোকিওতে অংশ নিয়ে জিতেছিলেন একটি রুপা ও ২টি ব্রোঞ্জ। যা তার নামের প্রতি অবিচার। সেবার নিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বাতাসের সঙ্গে লড়াই করে পারফেক্ট ল্যান্ডিং করতে পারছিলেন না। জিমন্যাস্টরা এটাকে বলেন টুইস্টিং। এরপর আড়ালে চলে যান। কিন্তু অনুশীলন ছাড়েননি। মার্কিন দলের হয়ে প্যারিস অলিম্পিক খেলতে অংশ নেন জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। সেখানে বাজিমাত করেন। ফিরেন দলে। ফিরে টুইট করেন, ‘আমি আবার ফিরেছি নিজের জায়গায়। আমাকে তোমরা হিসাবের বাইরে রেখ না। শুধু জেন, এটাই আমার নিয়তি।’
ফিরেছেন প্যারিসে। এলাম, দেখলাম এবং জয় করলাম- চলতি গেমসে দুটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে চোখ ছানাবড়া পারফরম্যান্স। সবাইকে অবাক করে জিতে নেন ২টি সোনা। ২০২০ সালের অলিম্পিক করোনার জন্য এক বছর পিছিয়ে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সমালোচনায় কেঁদেছিলেন। প্যারিসে আসেন নিজেকে জয় করতে। সবাইকে পেছনে ফেলে অলিম্পিক রানি হতে। দুটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে নিজেকে ছাপিয়ে দুটিতে জিতেছেন সোনা। রয়েছে আরও সোনা জয়ের হাতছানি।
ফিনিক্স পাখির মতো মরতে মরতে বেঁচে ওঠা বাইলস শুধু অলিম্পিক নয়, ২০১৩-২০২৩ সালের ছয়টি বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছেন ২৩টি। জিতেছেন প্যাসিফিক রিম চ্যাম্পিয়নশিপে ২ সোনা। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সোনা জিতেছেন ৩১টি। এ জন্য অনেকেই তাকে সর্বকালের সেরা জিমন্যাস্ট বলতে কার্পণ্য করছেন না। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে প্রথমবার খেলতে নেমে এমন কিছু কৌশল তিনি প্রদর্শন করেছিলেন, বিচারক থেকে শুরু করে দর্শক-সবাই মুগ্ধ চোখে সেটা উপভোগ করেন। তার পারফরম্যান্স দেখে ১৯৯২ সালে বার্সেলোনা অলিম্পিকের ব্রোঞ্জজয়ী জিমন্যাস্ট বেটি ওকিনো বলেছিলেন, ‘বাইলস এ প্রজন্মের সেরা অ্যাথলেট। ওর কাছাকাছি আমি কাউকে দেখছি না।’ সতীর্থ জোসেলিন রবারসন বলেছিলেন, ‘আমি কোনো খেলায় বাইলসের মতো দাপট দেখাতে কাউকে দেখিনি। ওকে দেখে মনে হয় এনএফএলের এমন একটা দল, যারা কোনো দিন সুপারবোল হারেনি।’ টোকিওতে বাইলসের ব্যর্থতার কারণ খুঁজে পেয়েছিলেন প্রেমিক এনএফএল তারকা জোনাথন ওয়েইন বলেন, ‘অনেকেই বাইলসকে সর্বকালের সেরা বলছিল। যে দিকে তাকাচ্ছিলাম, শুধু ওর ব্যানার দেখছিলাম। টিভি চ্যানেল, নিউজ পেপারগুলোতে নিত্য সংবাদ ছাপা হচ্ছিল। এসব দেখছিলাম, আর ভাবছিলাম চাপ নিতে পারবে তো?’ চাপ নিতে পারেননি বাইলস। ব্যর্থ হয়েছেন টোকিওতে। গত তিন বছরে কঠোর অনুশীলন করে চাপ সামলে এখন প্যারিস অলিম্পিকের রানি। জিতেই চলেছেন। হয়তো এমন এক জায়গায় থামবেন, হয়তো কল্পনার রংতুলিতেই যা শুধু আঁকা সম্ভব।
বাইলসের যত পদক জয়
রিও-২০১৬ : ৪
টোকিও-২০২০ : ০
প্যারিস-২০২৪ : ২
** প্যারিস অলিম্পিকে এখনো ইভেন্ট বাকি আছে সিমোন বাইলসের।
রুপা
টোকিও-২০২০ : ১
তামা
টোকিও-২০২০ : ২
বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ :
এন্টোয়ার্প-২০১৩ : ২
ন্যানিং-২০১৪ : ৪
গ্লাসগো-২০১৫: ৪
দোহা-২০১৮ : ৪
স্টুর্টগার্ট-২০১৯ : ৫
এন্টোয়ার্প-২০২৩ : ৪
প্যাসিফিক রিম চ্যাম্পিয়নশিপ : ২০১৬ : ২