আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তন হয়েছে ৫ আগস্ট। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সরকারের পটপরিবর্তনের পর গোটা দেশের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে ভোজবাজির মতো। গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। অনেকে আত্মগোপন করেছেন। যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী এবং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এখন সস্ত্রীক অবস্থান করছেন লন্ডনে। পরিচালকদের কেউ এখন আর ক্রিকেট বোর্ডে যান না। প্রায় প্রতিদিনই বিএনপি সমর্থিত ক্রীড়া সংগঠকরা মিরপুরে বোর্ডে মিছিল করে দাবি জানাচ্ছেন পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার। এদিকে নতুন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে সচিবালয়ে দেখা করেছেন বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালক। বাকিরা সবাই পলাতক। নতুন সরকার আসার পর বোর্ড পরিচালক ও সভাপতির পদে পরিবর্তন আসছে। নতুন সভাপতি পাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আজ-কালের মধ্যে নাজমুল হাসান পাপন বিসিবির সভাপতির পদ থেকে তার পদত্যাগপত্র পাঠাবেন বিসিবি সিইও বরাবর। অবশ্য পরিচালকের পদ ছাড়বেন কি না এখনো নিশ্চিত নয়। আবাহনীর কাউন্সিলর হয়ে পরিচালক হয়েছেন পাপন। সরকারের পরিবর্তনে বাদ পড়ছেন ১০-১১ প্রভাবশালী পরিচালক। যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আওয়ামী লিগের সঙ্গে জড়িত। পাপনের বিদায়ের অল্প কয়েকদিনের মধ্যে নতুন সভাপতি দায়িত্ব নেবেন বোর্ডের। অনুচ্ছেদ ১৩ অনুযায়ী বিসিবি সভাপতিসহ পরিচালকের সংখ্যা ২৫। ক্যাটাগরি-১ জেলা ও বিভাগ থেকে পরিচালক ১০, ক্যাটাগরি-২ থেকে ক্লাবের পরিচালক ১২, ক্যাটাগরি- ৩ থেকে একজন পরিচালক এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে দুজন পরিচালক। বরিশাল জেলা থেকে নির্বাচিত আলমগীর খান আলো মারা যাওয়ায় তার পরিচালকের পদটি শূন্য হয়েছে। পরিচালকের পদ থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন- শেখ সোহেল, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আ জ ম নাছির উদ্দিন, গাজী গোলাম মর্তুজা, নাজিব আহমেদ, কাজী ইনাম আহমেদ, নাইমুর রহমান দুর্জয়, মুহাম্মদ ইসমাইল হায়দার মল্লিক, তানভীর আহমেদ টিটু। তালিকায় আরও কয়েকজন রয়েছেন। বাদ পড়াদের জায়গায় ক্লাব কিংবা জেলা ও বিভাগ নতুন কাউন্সিলরের নাম পাঠাবে। কোনো নতুন কাউন্সিলরের নাম পাঠানো হলে পরিচালক বাদ পড়বেন গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী। এরপর পরিচালকগুলোর পদ শূন্য হয়ে যাবে। সেসব স্থান পূর্ণ করতে গঠনতন্ত্র মেনে নতুন উপনির্বাচন দেবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। নির্বাচন করে তাদের জায়গায় নতুন পরিচালক আসবেন। একাধিক প্রার্থী না থাকলে নির্বাচিত হবেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। আইসিসির নিষেধাজ্ঞা এড়াতেই এ পথে হাঁটতে হবে ক্রীড়া পরিষদকে।
ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক দুজন- আহম্মেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও জালাল ইউনুস। কাউন্সিলর ৫ জন। পরিচালক দুজন শেষ মুহূর্তে বাদ পড়তে পারেন। তখন ক্রীড়া পরিষদের কোটায় বর্তমান সরকারের মনোনীত কোনো একজন সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন। গঠনতন্ত্রের ১৩ অনুচ্ছেদের ১৩.২ ধারার ‘খ’ উপধারা অনুযায়ী সভাপতি পদে নির্বাচনে অংশ নেবেন পরিচালক। তাকে পরিচালকরা সরাসরি ভোটে নির্বাচন করবেন। যদি কোনো কারণে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে, তাহলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবে। আইসিসি এবং বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো অনির্বাচিত বোর্ড থাকতে পারবে না। পরিচালক ও সভাপতি বোর্ড পরিচালনা করতে পারবেন না। যদি নিয়ম ভেঙে কোনো সরকার নির্বাচিত লোক বোর্ড সভাপতি দায়িত্বে থাকেন, তাহলে আইসিসি নিজস্ব ক্ষমতাবলে বোর্ডকে নিষিদ্ধ করতে পারে।
নাজমুল হাসান পাপন বিসিবির সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন। ক্রিকেটাঙ্গনে গুঞ্জন, বিসিবির বেশ কয়েকজন পরিচালক তাকে সময় নিতে বলেছেন। কিন্তু কেন, এর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বোর্ড সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বেশ কয়েকদিন ধরে মানসিকভাবে তৈরি রয়েছেন। কেননা তিনি ছিলেন আওয়ামী লিগের সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী। যেহেতু সরকারের পতন হয়েছে, তাই অটোমেটিক্যালি তার মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়েছে। এখন তিনি শুধু বিসিবির সভাপতি।
সরে যাচ্ছেন ১০ পরিচালক
পরিচালকের পদ থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন- শেখ সোহেল, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আ জ ম নাছির উদ্দিন, গাজী গোলাম মর্তুজা, নাজিব আহমেদ, কাজী ইনাম আহমেদ, নাইমুর রহমান দুর্জয়, মুহাম্মদ ইসমাইল হায়দার মল্লিক, তানভীর আহমেদ টিটু। তালিকায় আরও কয়েকজন রয়েছেন।