আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ক্রীড়াঙ্গনে যেন আন্দোলনের ঢেউ বইছে। বিশেষ করে ফুটবল ফেডারেশন ও ক্রিকেট বোর্ডে তো উত্তেজনা তুঙ্গে। দেশের বড় দুই ফেডারেশন বিলুপ্ত করতে মিছিল, মানববন্ধন সবই হচ্ছে। যারা এসব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের লক্ষ্য একটাই-গদিতে বসা। যারা বিতর্কিত তারাও এখানে শরিক হচ্ছেন। সুর একটাই-ক্রীড়াঙ্গনে পরিবর্তন। অথচ তারা বলছেন না খেলাধুলার উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসতে হবে। গতকাল বাফুফে ভবনে সাবেক নারী ফুটবলাররাও বিক্ষোভ করেছেন। এখানে এমন নারীকেও দেখা গেছে যারা আওয়ামী লীগের ১৫ বছর আমলে ফেডারেশনের বড় পদে দায়িত্বে ছিলেন। এখনো বিভিন্ন ফেডারেশনে বসে আছেন। তারা চান আরও বড় পদে বসতে। প্রশ্ন হচ্ছে-ফেডারেশন ভাঙলেই কি ক্রীড়াঙ্গন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে? সভাপতির পদ থেকে কাজী সালাউদ্দিনের পদত্যাগ চাচ্ছেন। আসলেও সালাউদ্দিনে সভাপতি পদে বসে থাকতে পারেন না। ১৬ বছর ধরে তিনি দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও ফুটবলে অধঃপতন ছাড়া কিছুই হয়নি। ফেডারেশন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছিল। শুধু পদত্যাগ নয়, তাঁর অনিয়মের তদন্ত করা উচিত। শেষ পর্যন্ত কী হয় বলা মুশকিল। কিন্তু দেশের ফুটবলে যে অশনিসংকেত নেমে আসতে পারে তা নিয়ে কারও কি খোঁজখবর রয়েছে? এ ব্যাপারে আন্দোলনকারীরাও কতটুকু জানেন?
সালাউদ্দিনদের সরিয়ে অনেকে বাফুফেতে বসতে চাচ্ছেন। দেশের ফুটবলে ক্লাবগুলোর যে অচলাবস্থা তাতে ঘরোয়া আসর কী হবে, এ নিয়ে অনেকে শঙ্কিত। ফুটবল বা ক্লাব নিয়েই তো ফেডারেশন। শুধু চেয়ারে বসলেই কি চলবে? আজই ছিল পেশাদার ফুটবলে দলবদলের শেষ দিন। অবশ্য বাফুফের সহসভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফিফা তিন দিন সময় বাড়িয়েছে। অর্থাৎ ২২ আগস্ট দলবদল শেষ হবে। এর পরও নতুন মৌসুম মাঠে গড়াবে কবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। নতুন মৌসুমে জনপ্রিয় আসর সুপার কাপ ফেরার কথা ছিল। তবে লিগ কমিটির চেয়ারম্যান বলেছেন, এবার পেশাদার লিগ ও ফেডারেশন কাপই হতে পারে। সুপার কাপ তো ফিরছেই না, স্বাধীনতা কাপও না গড়ানোর শঙ্কা রয়েছে।
লিগ কমিটির দায়িত্ব পেয়েই পেশাদার লিগে নতুনত্ব আনতে সক্ষম হয়েছিলেন ইমরুল হাসান। এবার কী হবে? নতুন মৌসুমে ১২ ক্লাবের লিগে অংশ নেওয়ার কথা। এখন দল যে কমছে তা নিয়ে সংশয় নেই। চট্টগ্রাম আবাহনী আগেই ঘোষণা দিয়েছে তারা পেশাদার লিগে থাকবে না। সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র এখনো চূড়ান্ত ঘোষণা না দিলেও তাদের মাঠে নামার সম্ভাবনা ক্ষীণ। জানা গেছে, নতুন মৌসুমের জন্য যেসব খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তাদের বিকল্প খুঁজতে বলেছে দুটি ক্লাব। পেশাদার লিগে উঠে আসা ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল ও ওয়ান্ডারার্সের সংকটাপন্ন অবস্থা। আওয়ামী সমর্থিত সমর্থকদের বিতাড়িত করে অন্যরা এখন ক্লাব দখলে তৎপর।
রেলিগেশন থেকে বেঁচে গেলেও ব্রাদার্স ইউনিয়নও দল গড়তে পারছে না। যদি তিন ক্লাবই না খেলে ফুটবলাররা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন? রুটিরুজির পথ বন্ধ হয়ে বেকার হয়ে যাবেন। একই অবস্থা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পাইওনিয়ার লিগেও। সবকিছু মিলিয়ে অন্ধকারের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ফুটবল ও ফুটবলারই যদি বেকার হয়ে পড়েন, তাহলে ফেডারেশন পরিবর্তন হলেও লাভ হবে কি?