ক্রীড়াঙ্গন থাকবে রাজনীতিমুক্ত। এ কথা বরাবরই বলা হচ্ছে। বিশ্বের কোথাও খেলাধুলায় রাজনীতি স্পর্শ করতে না পারলেও বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন না করে দলীয় লোকদেরই ফেডারেশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়। নির্বাচনের মাধ্যমেই ফেডারেশন গঠন হচ্ছে। কিন্তু এখানেও কৌশল খাটিয়ে দলীয় লোকদেরই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। যখন যে রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে তাদের সমর্থিত লোকেরা ফেডারেশনের দায়িত্ব পায়। এ কালচার কোনোভাবেই বদল করা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন তা আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে।
১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারে থাকায় ক্রীড়া যেন হয়ে উঠেছিল আওয়ামী অঙ্গন। যোগ্যতা নেই, খেলাধুলা বোঝেন না, অথচ তারাই ক্রীড়াঙ্গন শাসন করেছেন। সে কি দাপট! অন্যানের প্রতিবাদ করার সাহস কেউ পেতেন না। দেশে ফেডারেশনের ছড়াছড়ি, অথচ সরকার পরিবর্তন কিংবা পতন হলে দেখা যায়, ক্রিকেট বোর্ড, ফুটবল ফেডারেশন ও হকি ফেডারেশন বিলুপ্ত করতে আন্দোলনের ঝড় ওঠে। স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার পতনের পরও একই দৃশ্য। সন্দেহ নেই বড় ফেডারেশন বলেই হইচই বেশি হবে। কিন্তু তিন ফেডারেশন নিয়ে এত মাতামাতি যে অন্য ফেডারেশনগুলো আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। যদিও ছোট ফেডারেশনগুলোয় কেলেঙ্কারির ঘটনা অনেক বেশি। বাংলাদেশে তো কথায় কথায় নতুন ফেডারেশন তৈরি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষরা একবার ভেবেও দেখেন না এত ফেডারেশনের দরকারটা কী? অবশ্য এতে নিজেদের পকেট ভরে বলেই নীরব থাকছেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের একশ্রেণির কর্মকর্তাই এতে লাভবান হচ্ছেন। অনেকে মনে করেন ক্রীড়াঙ্গনের দুর্নীতি মানেই শুধু ফেডারেশনের কর্মকর্তারাই জড়িত। ধারণা সত্য, কিন্তু এর চেয়ে ভয়ংকর ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা। কেউ কেউ বলেন, ক্রীড়া পরিষদের প্রতিটি ইটই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের প্রশ্রয়ে ছোট ফেডারেশনের দুর্নীতি চরমে। সালাউদ্দিন ও পাপনের দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্বে থাকা নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। কিন্তু ছোট ফেডারেশনে সাধারণ সম্পাদক পদে ৪০ থেকে ৪৫ বছরও বসে আছেন। এর পরও তাদের নিয়ে কেন কথা নেই?
হ্যান্ডবল, কুস্তির অবস্থা দেখে তো মনে হয় বাংলাদেশে আর সংগঠকই নেই। যুগের পর যুগ একশ্রেণির কর্মকর্তা চেয়ারে বসে আছেন। এখন তো চারদিকে পরিবর্তনের হাওয়া। ক্রীড়া উপদেষ্টা ঘোষণাও দিয়েছেন একে একে সব ফেডারেশন বিলুপ্ত করা হবে। তদন্ত করে বিচার হবে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের।
১২ বছর দায়িত্বে থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই বিসিবি সভাপতি পদ থেকে নাজমুল হাসান পাপন পালানোর পরও পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। কাজী সালাউদ্দিনেরও যায় যায় অবস্থা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন কোনোভাবেই পদত্যাগ করবেন না। সামনে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথাও বলেছেন। ফিফার কারণে হয়তো সালাউদ্দিন পদে টিকে থাকবেন। কিন্তু অক্টোবরে নির্বাচনে তিনি যদি সভাপতি পদে প্রার্থী হন জিততে পারবেন না নিশ্চিত। অর্থাৎ সালাউদ্দিনও বিদায়ের পথে। কুস্তি ও হ্যান্ডবল তো ততটা আলোচিত ফেডারেশন নয়। দেখা যাবে যুগ যুগ ধরে যারা পদ ধরে রেখেছেন তারাই টিকে গেলেন। ক্রীড়া উপদেষ্টার উচিত হবে এদের চিহ্নিত করে ক্রীড়াঙ্গন থেকে বিতাড়িত করা।
বড় তিন ফেডারেশনে তো অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়েই যত অভিযোগ। কিন্তু এমনও ছোট ফেডারেশন আছে যেখানে কেলেঙ্কারির ছড়াছড়ি। সাঁতার, টেবিল টেনিস, তায়কোয়ান্দো, জুডো, ভারোত্তোলন, উশুতে তো কেলেঙ্কারির শেষ নেই। এমনও ঘটেছে পুরনো ক্রীড়া পরিষদের নিচে এক কর্মকর্তার স্ত্রীর লাশ পাওয়া গেছে। কর্মকর্তাটি বলেছিলেন, তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু তা ক্রীড়া পরিষদের জিসনেসিয়ামে কেন? অভিযোগ উঠেছে, স্ত্রীকে নিজে হত্যা করেছেন ওই কর্মকর্তা। অবাক লাগে সেই কর্মকর্তা এখনো সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসে আছেন। সরকার যায় সরকার আসে, কিন্তু তিনি আছেন বহাল তবিয়তে।
নারী ক্রীড়াবিদদের শ্লীলতাহানির কত ঘটনাই না ঘটেছে ছোট ছোট ফেডারেশনে। সময় এসেছে এখন তা বের করে বিচারের।