দুই বছর আগে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের ফুটবলে সাড়া ফেলেছিলেন সাবিনা খাতুনরা। ফুটবলপ্রেমীদের ঢল নেমেছিল রাস্তায়। চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের নিয়ে উৎসব করেছিল সবাই। এরপর অনূর্ধ্ব-২০ ও অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। মেয়েদের নিয়ে উৎসব করেছে দেশের মানুষ। তবে ছেলেদের ফুটবলে এমন উৎসবের দৃশ্য বেশ বিরল। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও বাংলাদেশের ছেলেরা চ্যাম্পিয়ন হয় (ফাইনালে হারায় ভারতকে)। কিন্তু অতটা সাড়া পড়েনি। এর কারণও ছিল। সিনিয়র সাফে বাংলাদেশ শেষবার চ্যাম্পিয়ন হয় ২০০৩ সালে। এরপর ছেলেদের ফুটবলে বড় অর্জন বলতে এসএ গেমস ফুটবলে শিরোপা জয় (২০১০ সালে)।
ছেলেদের ফুটবলে দীর্ঘদিন পর শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-২০ সাফের ফাইনালে আজ বাংলাদেশের যুবারা মুখোমুখি হবে নেপালের। আজ বিকালে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে নেপালের ললিতপুরে অবস্থিত আনফা কমপ্লেক্স স্টেডিয়ামে। সাফের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে ছয় বছর আগে বাংলাদেশের ছেলেরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নেপালের মাটিতে। সেবার অনূর্ধ্ব-১৫ আসরের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশের ছেলেরা। ছয় বছর ধরে ছেলেদের ফুটবলে কোনো শিরোপা নেই। অধরা সেই শিরোপা জয়েরই সুযোগ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে।
ফাইনাল সামনে রেখে বাংলাদেশের কোচ মারুফুল হক বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা সঠিক পথে চলছি। উত্থান-পতন পার হয়ে আমরা ফাইনালে এসেছি। নেপাল ভালো দল। এখানেই তারা খেলে বড় হয়েছে। তবে আমাদের ফুটবলারদের পূর্ণ ফিট হিসেবে মাঠে নামাতে পারলে ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরতে পারব। রিকভারির জন্য আমরা সময় কম পেয়েছি, তবে আশা করি সবকিছু ঠিক হবে। আগের ম্যাচে আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন গোলরক্ষক মেহেদি হাসান শ্রাবণ। তার ব্যাপারে কোচ বলেন, ‘শ্রাবণ সুস্থ আছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। তবে ছোট্ট একটা অপারেশন করতে হবে। এটা আমরা দেশে গিয়েই করব।’ শ্রাবণের পরিবর্তে আসিফ খেলবেন। তাকে নিয়ে কোচ মারুফ বলেন, ‘আসিফ নিজেকে প্রমাণ করেছে আগের ম্যাচে। আশা করি সে ভালো করবে।’
দলের অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফ বলেন, ‘ফাইনালে নেপাল স্বাগতিক হিসেবে খেলবে। তারা বাড়তি কিছু সুবিধা পাবে। গ্যালারি থেকে সমর্থন পাবে। তা ছাড়া মাঠটাও তাদের পরিচিত। পাশাপাশি তারা ভালো মানের দল। তবে আমরাও প্রস্তুত। মাঠেই দেখাতে চাই। ভারতের সঙ্গে জয়ের পর মানসিকভাবে আমরা এখন অনেক বেশি শক্তিশালী।’ নেপালও ফাইনাল জয়ের জন্য প্রস্তুত। নিজেদের মাটিতে তারা সর্বশক্তি দিয়েই খেলবে। নেপাল ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০১৫ সালে তারা অনূর্ধ্ব-১৯ ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।
এবারের আসরে গ্রুপ পর্বে নেপালের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। এ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের কাছে ২-১ গোলে হার স্বীকার করে মারুফুল হকের শিষ্যরা। তবে সেমিফাইনালে ফেবারিট ভারতকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের যুবারা। ভারতকে হারিয়ে ফিরে পেয়েছে আত্মবিশ্বাসও। এটাই কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশের ফুটবলাররা।
বাংলাদেশ ফুটবল নিয়ে খুব বেশি উৎসব করার সুযোগ পায় না। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে একেবারেই নিচের দিকে অবস্থান। দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলেও অবস্থান অতটা সুসংহত নয়। সিনিয়র সাফে ফাইনালই খেলতে পারছে না দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে। এক সময় ফুটবল চলে গিয়েছিল অন্ধকারে। সেখান থেকে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশের ফুটবল। গত বছর ভারতে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ খেলেছে সেমিফাইনাল। সাম্প্রতিক সময়ের হিসাবে সেমিফাইনাল খেলাও ছিল বড় অর্জন। এবার সাফ অঞ্চলে যুবাদের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের ফুটবল। সেই লক্ষ্য কী পূরণ করতে পারবেন মারফুল হকের শিষ্যরা! বাংলাদেশ থেকে যাত্রার আগেই ফাইনাল কথা বলেছিলেন তারা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এবার দ্বিতীয় লক্ষ্যটাও কি পূরণ হবে!