১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশ ফুটবলে প্রথম জাতীয় দল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে যায়। সে দিনই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন, যোগ্য খেলোয়াড়দের পুরস্কৃত করা হবে। আর তার নাম হবে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। যে পুরস্কার পেয়ে ক্রীড়াবিদরা গর্ববোধ করবেন।
কথা হচ্ছে, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার কি যোগ্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে? শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই ১৯৭৯ সালে প্রথম জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার খেলোয়াড় ও সংগঠকদের হাতে তুলে দেন। তবে তা ধরা হয় ১৯৭৬ সাল থেকেই। প্রতি বছর না হলেও এই পুরস্কার দীর্ঘদিন ধরে দেওয়া হচ্ছে। কখনো প্রধান অতিথি হিসেবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা পুরস্কার তুলে দিয়েছেন খেলোয়াড়, সংগঠক ও পৃষ্ঠপোষকদের হাতে।
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক চলছে। তবে অভিযোগটা ছিল শুধু স্বজনপ্রীতি কেন্দ্র করে। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে যেভাবে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তাতে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন, এ পুরস্কার এখন ফেরিওয়ালার কাছ থেকে পাওয়া যায়, যে কেউ তা কিনতে পারেন। কেউ কেউ এ নিয়ে হয়তো হাসি-তামাশাও করতে পারেন। বাস্তবে ১৫ বছরে জাতীয় পুরস্কার নিয়ে এমনই ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।
কারা যোগ্য কিংবা কাদের এত বড় সম্মান পাওয়া উচিত তা তো সাধারণ ক্রীড়ামোদিরাও তালিকা তৈরি করতে পারবেন। কিন্তু ১৫ বছরে পুরস্কার নিয়ে যে নিয়ম তৈরি হয় তা শুধু হাস্যকরই নয়, ক্রীড়াবিদদের জন্য ছিল লজ্জাজনক। কেননা পুরস্কার পেতে কমিটির কাছে তার খেলোয়াড়ি জীবনের প্রাপ্তিসহ আবেদন করতে হবে। আর জাতীয় পুরস্কার নিয়ে ক্রীড়া পরিষদ যে কমিটি তৈরি করে দিত তাতে থাকতেন বিতর্কিত ব্যক্তিরা। এ সিন্ডিকেটের কাজ ছিল জাতীয় পুরস্কার নিয়ে বাণিজ্য করে পকেট ভারী করা। আবেদন দেখে তাকে ফোন করে বলা হতো আপনি কী জাতীয় পুরস্কার পেতে চান, তাহলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আর এতেই বাণিজ্য করার পথ সহজ হয়ে যেত।
কত যোগ্য খেলোয়াড় ও সংগঠক জাতীয় পুরস্কার পাননি তার হিসাব মেলানো মুশকিল। মনে থাকবেই বা কীভাবে? কারণ ১৫ বছরে তো যোগ্যদের চেয়ে অযোগ্যদেরই মূল্যায়ন করা হয়েছে। জাতীয় পুরস্কার নিয়ে যে কমিটি ছিল সেখানে খেলোয়াড়, সংগঠক, ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা ছাড়াও বিশেষ পেশার লোকজনও থাকতেন। তারাই জাতীয় পুরস্কারকে কলঙ্কিত করেছেন। এরা কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনের খুবই চেনা। এরাই আবার ফেডারেশনের বাইরে থেকেও বড় ধরনের বাণিজ্য করেছেন। সময় এসেছে তাদের চিহ্নিত করে তদন্ত করা। জাতীয় পুরস্কারই একজন খেলোয়াড়ের সেরা স্বীকৃতি। এখানেই যদি অর্থের খেলা চলে তাহলে আর সর্বনাশের বাকি থাকল কী?
এমনও কোম্পানিকে সেরা পৃষ্ঠপোষকের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে যাদের ক্রীড়াঙ্গনে অবদানই নেই। জাতীয় পুরস্কার হচ্ছে গোপনীয় ব্যাপার। যিনি পাবেন তাকে অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে জানিয়ে দেওয়ার নিয়ম। অথচ কিছু কিছু পত্রিকায় দেখা গেছে দুই মাস আগেই পুরস্কার প্রাপ্তদের নিয়ে রিপোর্ট করতে। এই রহস্য উদঘাটন করতে হবে।