২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে একেবারে তীরে এসে তরি ডুবেছিল খালেদ মাহমুদ সুজনদের। টাইগার অধিনায়ক সুজন একা নয়, পুরো দল মাঠেই কান্না করেছিলেন জয় হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায়। চোখের অশ্রু মুছে মাঠ থেকে সাজঘরে ফিরেছিলেন ক্রিকেটাররা। সাজঘরে ঢুকেই বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন কয়েকজন ক্রিকেটার। কেউ কেউ উপুর হয়ে কেঁদেছেন। কেউ কেউ সান্ত্বনা দিয়েছেন সতীর্থদের। ২১ বছরের ব্যবধানে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে সিরিজ জয়ের পর সাজঘরের পরিবেশ পাল্টে গেছে। উচ্ছ্বাস আর আনন্দে ভেসেছেন ক্রিকেটাররা। গান গেয়েছেন, ‘আমরা করব জয়...।’ পরিবেশ পাল্টে গেছে। বেদনার বদলে ক্রিকেটারদের মনে জায়গা নিয়েছে আনন্দ, উচ্ছ্বাস। গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের পর সাজঘরের চিত্রটা কল্পনা করলেই বোঝা যাবে, কতটা বদলে গেছে।
১৮৫ রানের টার্গেটে ৪ উইকেট হারানোর পরও পথচ্যুত হয়নি টাইগাররা। দলের দুই সিনিয়র সিটিজেন মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। দুজনে অবিচ্ছিন্ন থেকে ৩২ রান যোগ করে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। মুশফিক ২২ ও সাকিব অপরাজিত থাকেন ২১ রানে। উইনিং বাউন্ডারিটি আসে সাকিবের ব্যাট থেকে। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারই যেন ম্যাচ শেষ করে আসেন, সাজঘরে বসে উচ্ছ্বসিত মুডে চেয়েছেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ম্যাচ শেষে মিডিয়ার মুখোমুখিতে সেটাই বলেন পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে, ‘ইমোশনটা আসলে মুখে বলা মুশকিল এবং কঠিন হবে। কারণ, এ ধরনের অর্জন আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। মুশফিক ভাই, সাকিব ভাই যখন ব্যাটিং করছিলেন, সাজঘরের আমরা সবাই চাচ্ছিলাম দুজনই খেলাটা শেষ করুক। এত বছর ধরে উনারা বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন, কত ম্যাচ জিতিয়েছেন। কিন্তু এই ধরনের ম্যাচ জেতা অনেক স্পেশাল। আমরা সবাই চাচ্ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ দলের সবাই অনেক খুশি।’
১৮৫ রান একেবারে কম টার্গেট নয়। পাকিস্তানের বোলারদের পরিচিত উইকেট। কী হয় ভাবনায়, উৎকণ্ঠায় ছিলেন পুরো দল। কিন্তু শুরুতে জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম ৫৮ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের ভীত গড়ে দেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে অধিনায়ক নাজমুল ও সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক যোগ করেন ৫৭ রান। এরপর বাকি কাজ সারেন দুই সিনিয়র মুশফিক ও সাকিব। সাজঘরে ক্রিকেটাররা চিন্তিত থাকলেও কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে সব সময় সাহস জুগিয়েছেন দলকে। পিঠে চাপর দিয়ে সাহস জুগিযেছেন ক্রিকেটারদের। বোলিং কোচ আন্দ্রে এডামস, ব্যাটিং কোচ জাস্টিন হেম্প ও স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ সাহস জুগিয়েছেন। এভাবেই পাল্টে গেছে চাপে পড়া সাজঘরের পরিবেশ।