নেদারল্যান্ডসের লডউইক ডি ক্রুইফ যখন জাতীয় দলের কোচ ছিলেন, তিনিই ডেনমার্ক থেকে জামাল ভূঁইয়াকে উড়িয়ে আনেন। প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে জামালের পারফরম্যান্স সবার নজরে আসে। কেউ কেউ বলেছিলেন, এত ভালোমানের খেলোয়াড় পাওয়াটা ভাগ্য। ঘরোয়া ফুটবলে কয়েকটি ম্যাচ খেলেই তিনি জাতীয় দলে ডাক পেয়ে যান। সুযোগ পেয়ে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ফুটবলের চালিকাশক্তি।
২০১৩ থেকে এখন পর্যন্ত জামাল জাতীয় দলে খেলছেন। শুধু তাই নয়, তিনিই বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন। ভুটান সফরেও তিনিই অধিনায়ক। তবে সেরা একাদশে চান্স পান না। বদলি হিসেবে খেলতে হচ্ছে। অধিনায়ক হয়ে সাইড বেঞ্চে বসে থাকার নজির বিশ্বকাপেও রয়েছে। ১৯৮২ বিশ্বকাপে কেভিন কিগান ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হয়েও রিজার্ভ বেঞ্চে বসে ছিলেন। অবশ্য ইনজুরির কারণে কিগান ছিলেন মাঠের বাইরে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে রাইকে করা হয়েছিল ব্রাজিলের অধিনায়ক। গ্রুপ পর্বে প্রথম তিন ম্যাচ খেললেও পরে ছন্দ ধরে রাখতে না পারায় ম্যাচেই নামানো হয়নি। অধিনায়ক করা হয় ডুঙ্গাকে। শেষ পর্যন্ত ডুঙ্গার নেতৃত্বে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন। ফুটবলে এটিই নিয়ম-অধিনায়ক বা যত বড় খেলোয়াড় হোক না কেন, পারফরম্যান্স না থাকলে ম্যাচে জায়গা পাবেন না। জামালের ক্ষেত্রে কি তা হচ্ছে? সন্দেহ নেই, জামাল খুবই উঁচুমানের খেলোয়াড়। তিনি মাঠে থাকলে সতীর্থরা উজ্জীবিত থাকেন। ড্রেসিং রুমটাও চাঙা থাকে। কিন্তু তার ফর্ম যদি না থাকে তাহলে জাতীয় দলে নেওয়া হচ্ছে কেন? ভুটানের বিপক্ষে তাকে দেখা গেছে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে। যতক্ষণ খেলেছেন কর্নার শট মারা ছাড়া কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। তার খেলার ধার কমে গেছে বলে এবার পেশাদার লিগে কোনো ক্লাবই তাকে নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। অনেকেই বলেন, জামাল এখন জাতীয় দলের জন্য উপযুক্ত নন। এভাবে জামাল আর কতদিন জাতীয় দলে খেলবেন? দেশের সুপরিচিত কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘কোচ যদি জামালকে যোগ্য মনে করেন, ও দলে থাকলে সতীর্থরা অনুপ্রাণিত হয় তাহলে তো আমি দোষের কিছু দেখছি না। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ফর্মও তো পড়তির দিকে। ও তো ঠিকই পর্তুগালের দলে সুযোগ পাচ্ছে। এর বড় কারণ ওর মতো একজন আইকন খেলোয়াড় থাকলে অন্যরাও উজ্জীবিত হয়। আর জামাল যদি জাতীয় দলে খেলার যোগ্যতা হারায় তাহলে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেননা আমরা কী দেখি-ফর্ম না থাকলে বড় খেলোয়াড়রা নিজে থেকে সরে দাঁড়ান। যাতে দল উপকৃত হয়। জামাল তা করবে কি না আমি জানি না।’
জানা গেছে, কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও নাকি বিরক্ত। কিন্তু সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কারণেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও জামালকে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। সভাপতি বলেছেন, ‘দ্বিতীয় কোনো ফুটবলার আছে যে জামালের মতো স্মার্ট? আন্তর্জাতিক ফুটবল খেললে ভালো ইংরেজি জানতে হয়।’ এ ব্যাপারে মানিক বলেন, ‘জানি না সত্যি সালাউদ্দিন ভাই এ ধরনের কথা বলেছেন কি না। যদি বলে থাকেন তাহলে আমি বলব ইচ্ছা করেই তিনি ফুটবলের সর্বনাশ ডেকে আনছেন।’