মেরিনা বে বিচ থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে চিদাম্বরম ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ৩৮ হাজার আসনের স্টেডিয়ামটির আরেকটি নাম আছে, চিপক স্টেডিয়াম। ভারতের সবচেয়ে পুরনো স্টেডিয়ামগুলোর একটি চিদাম্বরম। এ স্টেডিয়ামে এই প্রথম টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। যদিও এখানে ওয়ানডে খেলার রেকর্ড রয়েছে টাইগারদের। গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন নাজমুলরা। ওই দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারই চিদাম্বরমের উইকেটের আচরণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখেন। অবশ্য ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটের উইকেটের পার্থক্য ব্যাপক। বিশ্বকাপের উইকেট নির্মিত হয় আইসিসি নির্দেশনা অনুযায়ী। টেস্টে উইকেট বানানো হয় সাধারণত স্বাগতিক দেশের চাহিদা মতো। ভারতের পেস অ্যাটাক এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা। তারপরও স্পিনারদের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছে চেন্নাইয়ের উইকেটে। লাল মাটির উইকেটে চতুর্থ দিন থেকে বল লাটিমের মতো ঘুরবে। রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার কথা মাথায় রেখে লাল মাটির উইকেট বানিয়েছে স্বাগতিকরা। স্বাগতিকদের মতো একই সুবিধা পাবেন টাইগার স্পিনত্রয় সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। উইকেটের আচরণ কেমন হবে, সেটার ওপর নির্ভর করে একাদশ সাজাবেন টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট। লাল মাটির উইকেটে খেলা হলেও গতকাল কালো মাটির উইকেটে দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করেছেন সাকিব, নাজমুল, লিটনরা। এই টেস্টে ভারত ছাড়াও আরেক প্রতিপক্ষ প্রচন্ড গরম। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খেলা হবে।
চিদাম্বরম স্টেডিয়ামকে বলা হয় রেকর্ডের ‘বরপুত্র’। অনেক রেকর্ডের সাক্ষী। ১৯৮৩ সালে এখানে স্যার ডন ব্রাডম্যানের ২৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড টপকে ৩০ সেঞ্চুরি করেছিলেন সুনীল গাভাস্কার। ১৯৮৮ সালে এই মাঠে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৮টি করে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন লেগ স্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানী। লেগ স্পিনারের স্পেল ছিল ১৮.৩-৩-৬১-৮ ও ১৫.২-৩-৭৫-৮। এই মাঠের সেরা বোলিং ভিন্নু মানকাদের। ১৯৫২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মানকাদের স্পেল ছিল ৩৮.৫-১৫-৫৫-৮। হারভজন সিং নিয়েছেন ৮ উইকেট, অনীল কুম্বলের রয়েছে ৭ উইকেট। পরিসংখ্যান বলছে উইকেট স্পিনারদের স্বর্গ। রাওয়ালপিন্ডির হার্ড ও বাউন্সি উইকেটে খেলে এসে এমন স্পিন উইকেটে খেলাটা কঠিন। এমন উইকেটে ম্যাচের ফল কী হবে, সেটা না ভেবে নিজেদের খেলা খেলতে চাইছেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। অনেক আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। এখন সেটা অতীত। এখানে নতুন সিরিজে খেলতে নামছি। সাজঘরে এই বিশ্বাসটা রয়েছে যে, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। সিরিজের ফলাফল কী হতে চলেছে সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না। আমরা নিজেদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে চাই।’
ভুল বলেননি টাইগার অধিনায়ক। ফলাফলের কথা ভাবলেই বাড়তি মানসিক চাপ। এটা কাটাতে হয়তো এই পলিসি অনুসরণ করছেন টাইগার অধিনায়ক। পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করলেও শক্তিমত্তায় এগিয়ে ভারত। প্রবল পরাক্রমশালী রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, জশপ্রীত বুমরাহদের দল। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ভারত এগিয়ে। দুই দল এখন পর্যন্ত টেস্ট খেলেছে ১৩টি। ১১টিতে হেরেছে বাংলাদেশ এবং ড্র করেছে দুটি। ভারতের মাটিতে যে ৩টি টেস্ট খেলেছে এখন পর্যন্ত, ফল যাচ্ছেতাই। তিনটিতেই হেরেছে। উইকেট যেমনই হউক, কিংবা টাইগার তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানার গতি ও বাউন্স নিয়ে চিন্তিত স্বাগতিক টিম ম্যানেজমেন্ট। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫২.৬ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে আলাদা নজর কেড়েছেন ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার নাহিদ। তাকে খেলার জন্য ভারতীয় ব্যাটাররা পাঞ্জাবের অখ্যাত এক দীর্ঘদেহী, গতিশীল বোলারের বিপক্ষে খেলেছেন। নাহিদের বিষয়ে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘নাহিদ ভালো বোলার ঠিকই। যে ভাবে পাকিস্তানে সে বোলিং করেছে, তাতে আমরা মুগ্ধ। শুধু একজনকে নিয়েই ভাবতে চাই না। আমাদের বাকি বোলারেরাও ভালো বল করেছে। আশা করি ভারতের ওরা ছাপ রাখতে পারবে।’ পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলেও ভারতকে আলাদাভাবে ভাবছেন টাইগার অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘ভারত বেশ ভালো দল। আমরা জানি ওদের দলে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব বিভাগেই ভালো ক্রিকেটার রয়েছে। তাই আমরা পরিবেশ, পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখতে চাইছি না। নিজেদের নিয়ে ভাবছি।’