রাওয়ালপিন্ডি থেকে চেন্নাই। দূরত্ব প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার। দুই দেশের দুই শহরের উজ্জ্বল ও আলোকিত নাম হাসান মাহমুদ। রাওয়ালপিন্ডির হার্ড ও বাউন্সি উইকেটে যেখানে শেষ করেছিলেন হাসান, চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের লাল মাটির উইকেটে সেখান থেকেই শুরু করেন। রাওয়ালপিন্ডিতে ৬ উইকেট জয়ী টেস্টে সুইং, গতি ও বাউন্সে একাই পাকিস্তানকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানদের পরীক্ষা নিয়ে গতকাল চেন্নাইয়ে পরীক্ষা নেন রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, ঋশাভ পান্থদের। দুরন্ত গতিতে বোলিং করে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন দিনের শুরুতে। তার উজ্জ্বল হাসি অবশ্য শেষ পর্যন্ত ক্লিশ হয়ে যায়! রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার রেকর্ড জুটিতে হাসান হাসিমুখে থাকলেও দিনটি টাইগারদের জন্য ছিল হতাশার। ১৪৪ রানে ৬ উইকেট তুলে যখন ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ, তখন অশ্বিন-জাদেজা সপ্তম উইকেটে ১৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিনটি নিজেদের করে নিয়েছেন। দুজনের রেকর্ড জুটিতে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করেছে রোহিত বাহিনী। ১০১ টেস্ট ক্যারিয়ারে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি করেন চেন্নাইয়ের ‘লোকাল হিরো’ অশ্বিন। চেন্নাইয়ে অশ্বিনের এটা টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম দিন টাইগারদের সেরা পারফরমার হাসান মাহমুদ। দিন শেষে ডান হাতি পেসারের স্পেল ১৮-৪-৫৮-৪। অবশ্য দিনটি অন্যরকম হতে পারত বাংলাদেশের। যদি ক্যাচগুলো তালুবন্দি করতেন টাইগার ফিল্ডাররা। আলোর স্বল্পতায় প্রথম দিন খেলা হয়েছে ৮০ ওভার।
একাদশে তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা রয়েছেন। তারপরও সুইংয়ের বৈচিত্র্য, গতি এবং বাউন্সের সুচতুর ব্যবহারে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের নাজেহাল করেন হাসান। গতকাল চিদাম্বরমের লাল মাটির উইকেটকে দারুণভাবে ব্যবহার করেন ডান হাতি পেসার। ২৪ বছর বয়সি হাসানের অভিষেক চলতি বছরের মার্চে। চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ৬ উইকেট নিয়ে নিজের সামর্থ্য বোঝান। পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার পেছনে দারুণ অবদান রাখেন বল হাতে। রাওয়ালপিন্ডিতে ১০ উইকেটে জয়ী প্রথম টেস্টে উইকেট নেন ৩টি। দ্বিতীয় টেস্টের ছিলেন দুর্বিষহ। ৫ উইকেট নেন। ৩ টেস্টে ১৪ উইকেট নেওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে ভারত উড়ে আসেন হাসান। চেন্নাইয়ে খেলতে নামেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইনের বিপক্ষে। খেলতে নেমেই নাভিশ্বাস তোলেন রোহিত বাহিনীর। মেঘলা আবহাওয়ায় সুইংয়ের কারুকাজে ১০ ওভারের ভিতর সাজঘরে ফেরান স্বাগতিক অধিনায়ক রোহিত, শুভমান গিল ও সাবেক অধিনায়ক বিরাটকে। রোহিত ও কোহলি আউট হন ব্যক্তিগত ৬ রানে এবং গিল শূন্য রানে। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা দলকে টেনে তুলতে চেষ্টা করেন জয়সোয়াল ও ঋশাভ। দলীয় ৯৬ রানে পান্থকে সাজঘরে ফেরত পাঠান হাসান। চারজনই হাসানের বলে আউট হন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। সাবেক অধিনায়ক কোহলিকে আউট করে আনন্দটা একটু বেশিই ডান হাতি পেসার হাসানের, ‘যে কোনো ব্যাটারের উইকেট নেওয়া আনন্দের বিষয়। বিরাটকে আউট করে খুব ভালো লাগছে। উদ্যাপনটা অবশ্য তেমন ছিল না। আমার একটা সাধারণ প্রতিক্রিয়া। সময়ের সেরা ব্যাটারকে আউট করায় খুশি ছিলাম। যে কারোরই খুশি হওয়া উচিত। যেটা বললাম, আমার পরিকল্পনা খুব সরল ছিল।’
হাসানের মতো নিজের নাম আলোকিত করেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৯৮২ সালে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ইংলিশ অধিনায়ক কিথ ফ্লিচার। ৪২ বছর পর নাজমুল টস জিতে দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান। চিদাম্ববরনের ৯০ বছরের ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় ঘটনা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : প্রথম ইনিংস, ৩৩৯/৬, ৮০ ওভার (জয়সোয়াল ৫৬, রোহিত ৬, গিল ০, কোহলি ৬, পান্থ ৩৯, রাহুল ১৬, জাদেজা ৮৬*, অশ্বিন ১০২*। তাসকিন ১৫-১-৪৭-০, হাসান ১৮-৪-৫৮-৪, নাহিদ ১৭-২-৮০-১, মিরাজ ২১-১-৭৭-১, সাকিব ৮-০-৫০-০, মুমিনুল ১-০-৪-০)।