বেশ কয়েক বছর আগে ক্রিকেটের বিখ্যাত ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো সাকিব আল হাসানকে নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০২০ সালের ২৪ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম বাংলায় অনুবাদ করলে হয়, ‘কেন সাকিব আল হাসান ক্রিকেটের গ্রেটেস্ট অলরাউন্ডার।’ পরের বছর এপ্রিলে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এবার শিরোনাম ছিল, ‘সাকিব আল হাসান কি গ্যারি সোবার্সের চেয়েও বড় অলরাউন্ডার।’ দুটি প্রতিবেদনেই তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়। ব্যাটিং ও বোলিং গড় বিশ্লেষণ করা হয়। পাশাপাশি রান ও উইকেটের সংখ্যাও বিচার করা হয়। কোনো দিক দিয়েই পিছিয়ে নেই সাকিব আল হাসান। সব বিচারেই তিনি আছেন শীর্ষ অলরাউন্ডারের তালিকায়।
বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারই টেস্ট এবং টি-২০ ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন। গত টি-২০ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটাই ছিল ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে সাকিবের শেষ ম্যাচ। টেস্টে শেষ ম্যাচ হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজ। ওয়ানডেতেও বিদায়ের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়ে রাখলেন সাকিব। আগামী বছর পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পর্যন্ত খেলতে পারেন তিনি।
বিদায়ের ঘোষণা দিতে গিয়ে সাকিব বলেন, ‘যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন কীভাবে সুন্দর আয়োজন করা যায়।’ অবসরের বিষয়টি হুট করেই হয়নি। গত পাকিস্তান সিরিজে খেলার সময়ই প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনকে অবসর ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন সাকিব। সে সময় টি-২০ নিয়েও ভাবছিলেন। বোর্ডের কর্মকর্তারাও সাকিবের সিদ্ধান্ত সঠিক মনে করেছিলেন। এবার সত্যি সত্যিই টেস্ট ও টি-২০ ছাড়ছেন সাকিব। অবশ্য ভবিষ্যতের দরজাও খোলা রাখছেন। সাকিব বলেন, ‘আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলতে থাকি, ছয় মাস-এক বছর পরে যদি বিসিবি মনে করে আমার টি-২০কে কন্ট্রিবিউট করার সুযোগ আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি, দেন আমরা ডিসাইড করতে পারি। কিন্তু এ মুহূর্তে নিজেকে টি-২০তে দেখছি না। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে আমার ইচ্ছা আছে টেস্টে শেষ সিরিজ হওয়ার। মোটামুটি বলতে পারেন, আমি অন্তুত দুটি সংস্করণে আমার শেষটা দেখছি।’ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার বিষয়টিও অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। সাকিব বলেন, ‘আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত, তাঁরা দেখছেন। তাঁরা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবেন, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।’
ক্যারিয়ারে অসংখ্য অর্জন রয়েছে সাকিবের। বাংলাদেশের অনেক জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ম্যাচসেরা হয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ১৪ হাজারের বেশি রান ও ৭০০-এর বেশি উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। আরও কত কত রেকর্ড রয়েছে! ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও আছে অনেক অর্জন। সাকিবের অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ ১৯টি টেস্ট খেলে ৪টি জয় পেয়েছে। ৬২টি ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করে ২৭টিতে জয় ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। পাশাপাশি ৩৯টি টি-২০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ১৬টিতে জয় পেয়েছেন সাকিব।
ব্যাট আর বলে দুরন্ত এই ক্রিকেটার যাত্রা করেছিলেন ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটে ২০০৬ সালে এবং টেস্টে ২০০৭ সালে। দীর্ঘ দেড় যুগের ক্রিকেট ক্যারিয়ার অবশেষে শেষ হতে চলেছে। শেষবেলায় সাকিব বেশ এলোমেলো হয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে হয়েছে হত্যা মামলা। পাকিস্তানে ভালো করলেও ভারতে গিয়ে পারফর্ম করতে পারেননি প্রথম টেস্টে। তারপরও বিদেশের মাটিতে শেষ ম্যাচটা ভালোভাবেই খেলতে চাইছেন সাকিব। আজ শুরু হচ্ছে কানপুর টেস্ট। এটাই হবে বিদেশের মাটিতে তার শেষ টেস্ট ম্যাচ।