প্রতিপক্ষ অধিনায়ক হিসেবে রেকর্ডটির সঙ্গে নাম জড়িয়ে গেল নাজমুল হোসেন শান্তর। ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা টস জিতে ব্যাটিং নেননি। কানপুর গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামে টস জিতে ১৯৬৪ সালের পর কোনো ভারতীয় অধিনায়ক এই প্রথম ব্যাটিং না করে বোলিং নেন। ৬০ বছর আগে কানপুরে এ কাজটি নবাব মনসুর আলী খান পাতৌদি করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই পথে গতকাল হাঁটেন রোহিত শর্মা। ভারতের মাটিতে টস জিতে প্রতিপক্ষ দলকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানানোর সর্বশেষ নজির গড়েছিলেন বিরাট কোহলি, ৯ বছর আগে ২০১৫ সালে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, টেস্ট দুটির ফল ছিল ড্র। কানপুরের ষাট বছর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বাধা হয়নি বৃষ্টি। ব্যাঙ্গালুরুতে প্রথম দিন খেলা হলেও শেষ চার দিন বৃষ্টিতে খেলা হয়নি একটি বলও। এবার কানপুরে প্রথম দিন খেলা হয়েছে ৩৫ ওভার। আজ ও আগামীকাল দুই দিন বৃষ্টিতে বাধা পড়ার কথা টেস্ট। তাহলে কী হবে টেস্টের ফল? যদি পুনরাবৃত্তি করতে হয়, তাহলে বড় স্কোর করতে হবে বাংলাদেশকে। সেই স্বপ্ন দেখানোর পথে হাঁটতে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতে হবে দলের সিনিয়র দুই ক্রিকেটার সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিমকে। দুজনে চতুর্থ উইকেটে ২৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিন পার করেছেন। মুমিনুল ৪০ ও মুশফিক ৬ রানে ব্যাট করছেন।
সাবেক অধিনায়ক ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কি এটাই শেষ টেস্ট ম্যাচ? কানপুর টেস্ট শুরুর আগের দিন মিডিয়ার মুখোমুখিতে সাকিব জানিয়েছিলেন, টি-২০ ক্রিকেটকে বিশ্বকাপের সময় বিদায় জানিয়েছেন। ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে শেষ টেস্ট খেলে বিদায় নেবেন। অবশ্য ওয়ানডে খেলবেন তিনি। এ জন্য দেশের মাটিতে ফেরার জন্য বিসিবির সহায়তা চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদের সভার পর বিসিবি জানিয়ে দেয়, সাকিবের নিরাপত্তা দিতে পারবে না। তাহলে কী কানপুরই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের শেষ টেস্ট? যদি নিরাপত্তা বোধ না করেন, তাহলে কি তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরবেন? সময় বলবে। সাকিব কী করবেন, সেটা সময় বলবে। তার আগে কানপুর টেস্টের প্রথম দিনের চিত্র এমন- ভারী বর্ষণে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত ৩৫ ওভারে ৩ উইকেটে ১০৭ রান তুলেছে টাইগাররা। সাজঘরে ফিরেছেন জাকির হাসান, সাদমান ইসলাম ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বাঁ হাতি ওপেনার সাদমান। ব্যক্তিগত ২৪ রানে আকাশ দ্বীপের বলে লেগ বিফোর হন। শুরুতে আম্পায়ার রিচার্ড ক্যাটেলবোরো আউট দেননি। কিন্তু আকাশ রিভিউ নিতে অধিনায়ক রোহিতকে অনুরোধ করেন। শুরুতে স্বাগতিক অধিনায়ক গড়িমসি করলেও পরে নেন। টিভি আম্পায়ার আউট দেন। আউট পেয়ে বিস্ময়ে চোখ ছানাবড়া হয় রোহিতের! অন্যদিকে শূন্য রানের বেড়া ডিঙ্গাতে পারেননি আরেক বাঁ হাতি ওপেনার জাকির। ২৪ বল খেলে জশপ্রীত বুমরাহর বলে থার্ড স্লিপে ইয়াশাভি জয়সোয়ালের ডাইভিং ক্যাচে পরিণত হন। টেস্ট ক্রিকেটে এটা অবশ্য কোনো রেকর্ড নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বল শূন্য রানের রেকর্ড বাঁ হাতি পেসার মঞ্জুরুল ইসলামের। ২০০২ সালে কলম্বোয় ১০ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪১ বল খেলে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। ২০০৭ সালে সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহ ২৯ বল খেলে শূন্য রান করেছিলেন, ক্যান্ডিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। টেস্ট ক্রিকেটে এই বিশ্ব রেকর্র্ড নিউজিল্যান্ডের জিওফ অ্যালটের। ১৯৯৯ সালে অকল্যান্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শূন্য রানে আউট হওয়ার আগে খেলেছিলেন ৭৭ বল।
কানপুর টেস্টের শুরুর তিন দিন বৃষ্টি হবে- এমন আভাস আগেই দিয়েছিল উত্তর প্রদেশ আবহাওয়া অফিস। গতকাল খেলা হয়েছে মাত্র ৩৫ ওভার। খেলা হতে পারেনি ৫৫ ওভার। আবহাওয়া মেঘাচ্ছন্ন বলে গ্রিন পার্কের কিউরেটর উইকেটে ঘাস রেখেছেন। স্বাগতিক দল সেজন্য একাদশে কোনো পরিবর্তন আনেনি। তিন পেসার দিয়েই উইকেট সাজিয়েছে। বিপরীতে নাজমুল বাহিনীর একাদশে পরিবর্তন দুটি। চেন্নাইয়ে গতির ঝড় তোলা নাহিদ রান ও দারুণ বোলিং করা তাসকিন আহমেদকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। নেওয়া হয়েছে পেসার খালেদ আহমেদ ও বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস, ১০৭/৩, ৩৫ ওভার (জাকির হাসান ০, সাদমান ইসলাম ২৪, মুমিনুল হক ৪০*, নাজমুল হোসেন শান্ত ৩১, মুশফিকুর রহিম ৬*। জশপ্রীত বুমরাহ ৯-৪-১৯-০, মোহাম্মদ সিরাজ ৭-০-২৭-০, রবীচন্দ্রন অশ্বিন ৯-০-২২-১, আকাশ দ্বীপ ১০-৪-৩৪-২)